মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রধান বিচারপতি কীভাবে বলেন দেশে আইনের শাসন নেই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনা বলেছেন, প্রধান বিচারপতি কীভাবে বললেন দেশে আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগ যে স্বাধীন তার একটাই তো প্রমাণ আছে। একজন নেত্রীর একটা মামলায় যদি ১৪০ দিন সময় দেওয়া হয়। বিচার বিভাগ স্বাধীন বলেই তো এতদিন সময় দেওয়া হয়েছে। আমাদের যদি ওই ধরনের মানসিকতা থাকত তাহলে নিশ্চয়ই দিতে পারত না। আমরা তো সেটা করিনি। ইচ্ছামতো সময় দিয়ে যাচ্ছেন... দিয়েই যাচ্ছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে বলেই তো এই সময়টা দেওয়া হয়েছে। কাজেই বিচার বিভাগ যে স্বাধীন এই একটা উদাহরণই যথেষ্ট। না হলে তো দিতে পারত না। যদি ৪০-৫০টি রিট হয়, সেসব রিটের নিষ্পত্তি হয় তাহলে কীভাবে বলেন স্বাধীনতা নেই। আইনের শাসন নেই। সংসদের ১৫তম অধিবেশনের সমাপনী বৈঠকে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের এখানে ৭৫০টি পত্রিকা, ৩৪টি টিভি রয়েছে। দেখলাম অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে এই দেশে বাকস্বাধীনতা নাই। যারা রিপোর্টটা করেছে তাদের বলব এই টিভিতে বসে বসে দিনরাত আমাদের বিরুদ্ধে সমানে কথা বলা হচ্ছে। টকশো, আলোচনা একেবারে স্বাধীনভাবে কথা বলছে। আমাদের সমালোচনা যখন করা হয় কই কেউ কি তাদের গলা টিপে ধরেছে? কেউ কি বলছে যে, এ কথা বলা যাবে না। সংসদ নেতা আরও বলেন, সংবাদপত্রও সমানে লিখেই যাচ্ছে। কেউ তো কিছু বলছে না। হ্যাঁ কেউ যদি হলুদ সাংবাদিকতা করে, মিথ্যা অসত্য তথ্য দেয়, কারও যদি চরিত্র হনন করে নিশ্চয়ই তারও অধিকার আছে যে সেখান থেকে নিজের ওপর মিথ্যা দোষারোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার। সে অধিকার সবারই আছে। তিনি বলেন, কোনো সংসদ সদস্য বা সাধারণ ব্যক্তি কেউ যদি মানহানীর মামলা করে এটার দোষ কীভাবে হয়। সে যদি অপরাধই না করে তাহলে মামলা মোকাবিলা করলেই সত্য বেরিয়ে আসবে। সেটা তো করতে পারবে না কারণ হলুদ সাংবাদিকতা করে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, এদেশের গণমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে স্বাধীনতা ভোগ করছে, স্বাধীন আছে। বাকস্বাধীনতা ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারও অধিকার ক্ষুণ্ন করা স্বাধীনতা না। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, এই লোকগুলো একসময় মনে করত একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এলে তাদের মূল্য বাড়বে, তারা একটা পতাকা পেতে পারেন, তারা একটা কিছু হতে পারেন। বা তাদের একটু তোষামদি, খোসামদি করা হবে। তাদের মূল্যটাও একটু বেশি থাকে। আর গণতান্ত্রিক পরিবেশে তাদের সুযোগটা কম থাকে। তাদের স্বাদ আছে ক্ষমতায় আসার, কিন্তু জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার সাধ্য নাই। অনেকে চেষ্টাও করেছে দল গঠনের সারা পায়নি মানুষের কাছ থেকে। এটা যদি জনগণ সারা না দেয় তার দোষ কার। এরাই নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বদনাম করা এটাই তাদের চরিত্র। মনে হচ্ছে বদনাম করতে পারলেই নাগরদোলার মতো ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেই আসায় তারা থাকে। সেই আসায় গুড়েবালি। এদেশে সেটা আর হবে না।

বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতেও তারা মানুষ হত্যা, দুর্নীতি, লুণ্ঠন, বিদেশে অর্থ পাচার ছাড়া দেশকে আর কিছু দিয়ে যেতে পারেনি। মার্কিন ফেডারেল কোর্ট এবং সিঙ্গাপুরের আদালতেও খালেদা জিয়ার পুত্রের অর্থ পাচারের ঘটনা প্রমাণ হয়েছে, পাচারকৃত কিছু টাকা আমরা ফেরতও এনেছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অন্যের বদনাম করে তারা কী পায় জানি না। এদের কাছে জরুরি অবস্থা থাকলেই এদের (সমালোচনাকারী) বাকস্বাধীনতা থাকে। তখন কি বাক বাকুম তাদের। তিনি বলেন, দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে তা বিএনপি নেত্রীর মামলায় একটা বড় প্রমাণ। আর দেশে আইনের শাসনও আছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের দমন করছে। আমার প্রশ্ন— কোনো জঙ্গি নিহত হলেই বিএনপি নেত্রীসহ অন্যদের মনে এত ব্যথা লাগে কেন? তাদের সঙ্গে বিএনপি নেত্রীদের যোগ সূত্রটা কী। জঙ্গিদের হামলা ও আত্মঘাতী ঘটনার সময় কেউ কেউ মারা যাচ্ছে, এটা মানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। কারণ এটা সুযোগ পেলেই অনেক মানুষের ও দেশের সম্পদ ধ্বংস করত। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও কেন এত কথা? জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। যারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করছে তারা কখনোই বেহেস্তে যাবে না, যাবে সরাসরি দোজখে। ইসলাম ধর্ম কখনোই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মানুষ হত্যাকে সমর্থন করে না। এদের বিরুদ্ধে পুরো দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর ইয়াবার উৎস্য কোথায়, কারা কারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।

মামলা মোকাবিলা করতে খালেদা জিয়ার ভয় কীসের? এতিমের টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন মামলায় খালেদা জিয়া ১৪০ দিন সময় নিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে হত্যা, লুণ্ঠন, বিদেশে অর্থ পাচার ছাড়া দেশকে আর কিছুই দিতে পারেননি। এমনকি এতিমের টাকা পর্যন্ত মেরে খেয়েছেন। এখন অর্থ আত্মসাৎ মামলা মোকাবিলা করতে উনি ভয় পান। বুকে যদি সততার সাহস থাকত তবে মামলায় তার এত ভয় কেন? তিনি বলেন, মামলা থেকে পালিয়ে বাঁচতে আদালতে যেতেই উনি ভয় পান। এ পর্যন্ত ১৪০ দিন সময় নিয়েছেন। হাই কোর্টে প্রায় ৪০টি রিট করে সময়ক্ষেপণ করছেন। এতিমের টাকা যদি প্রথমেই ফেরত দিতেন, তবে তো তাকে মামলা মোকাবিলা করতে হতো না। মেরে দেওয়া টাকাও ফেরত দেবেন না, আবার মামলা মোকাবিলা করতে আদালত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন? যারা এতিমের টাকা পর্যন্ত মেরে খান, তারা ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষকে কী দেবে? ক্ষমতায় থাকতে কি তারা কোনো উন্নয়ন করেছে? সরকার উত্খাত ও নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা ও শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের রাজনীতিই হলো মানুষ হত্যা, অত্যাচার ও নির্যাতন করে ক্ষমতায় যাওয়া। তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের হাত থেকে কেউই রেহাই পায়নি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকার উত্খাত ও নির্বাচন বানচালের নামে তারা নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছে। তিন বছর ধরেই তারা দেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। ৯২ দিন ধরে ৬০ জন নেতা-কর্মীকে নিয়ে অফিসের এয়ারকন্ডিশনে বসে থেকে বিএনপি নেত্রী হুকুম দিয়ে মানুষকে হত্যা করিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা ৫৮২ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, ২ হাজার ৩৫২ জনকে আগুনে দগ্ধ করেছে, ২৯টি রেল পুড়িয়েছে, ৮টি লঞ্চে আগুন দিয়েছে, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে, ২৬ জন পুলিশ-বিডিআর ও সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার লোককে হত্যা করেছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দিয়ে শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা। কিন্তু মানুষ হত্যা করে তারা জান্নাতে যাবে না, জাহান্নামে যাবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

শেষ হলো সংসদের ১৫তম অধিবেশন

মাত্র পাঁচ কার্যদিবস চলার পর শেষ হলো জাতীয় সংসদের ১৫তম অধিবেশন। সংক্ষিপ্ত এই অধিবেশনটি শুরু হয়েছিল গত ২ মে। সংসদের কার্য-উপদেষ্টা কমিটি ৯ মে পর্যন্ত অধিবেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও একদিন আগেই তা শেষ করা হলো। এই অধিবেশনে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের শাস্তির জন্য আইন করার একটি প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হয়েছে।

গতকাল রাতে অধিবেশন সমাপ্তি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে অধিবেশনের ইতি টানেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর আগে অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

এ অধিবেশনে মোট বিল পাস হয়েছে দুটি। কার্যপ্রণালি বিধির ৭১ বিধিতে ১৫১টি নোটিস পাওয়া যায়। যার মধ্যে ৯টি গৃহীত এবং গৃহীত নোটিসের মধ্যে তিনটি সংসদে আলোচিত হয়। ৭১ এর ক বিধিতে ৪৫টি নোটিস আলোচনা হয়। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য ৫৪টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১৫টি প্রশ্নের উত্তর দেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তর দেওয়ার জন্য ৮৪৩টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। যার মধ্যে মন্ত্রীরা জবাব দেন ৩২৯টির।

সর্বশেষ খবর