বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

এলএনজি ও বিদ্যুতে বিনিয়োগে আগ্রহ কাতারের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করতে চায় মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতার। বিশেষ করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ আছে দেশটির।

এলএনজিতে বিনিয়োগে সম্মতি জানিয়েছে এ খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি কাতারের রাসগ্যাস। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসছেন কাতারের আরেক কোম্পানি নিবরাস পাওয়ারের প্রতিনিধিরা। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেশটির জ্বালানিমন্ত্রীকে বাংলাদেশে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি। তবে সব ছাপিয়ে কাতারের আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানির ঢাকা সফরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে কাতারের আমিরের ঢাকা সফরসূচি রাখার আশ্বাস দিয়েছেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসেম আল থানি। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর তিন দিনের দোহা সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এসব অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসেম আল থানির আমন্ত্রণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত দোহা সফর করেন। সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি, আমিরি দেওয়ান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখিয়াত, জ্বালানি ও শিল্পমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ বিন সালেহ আল সাদা, প্রশাসন উন্নয়ন ও শ্রমমন্ত্রী ড. ইসা সাদ আল জাফালি আল নুয়াইমুর, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির (কিউআইএ) প্রধান নির্বাহী শেখ আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন সৌদ আল সানি এবং কাতার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন তাওয়ারসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে কাতারের প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে অবস্থানরত প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর সততা ও কঠোর পরিশ্রম এবং কাতারের উন্নয়নে তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কাতারের প্রধানমন্ত্রী এসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, কাতারের জ্বালানিমন্ত্রীকে শিগগির বাংলাদেশ সফরে পাঠানো হবে। সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাতারের বিনিয়োগকারীরা এসব অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে চাইলে সরকার সে সুযোগ দেবে। মাহমুদ আলীর সঙ্গে আলাদা বৈঠকে কাতারের জ্বালানি ও শিল্পমন্ত্রী ড. মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল সাদা এলএনজি এবং বিদ্যুতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, নিবরাস পাওয়ারের প্রতিনিধিরা আলোচনার জন্য ঢাকায় যাবেন।

তিনি আরও বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে। তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বিনিয়োগের সম্পর্ক বাড়বে। কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখিয়াতের সঙ্গেও বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কাতারের মন্ত্রী ২০১৭-২১ মেয়াদে ইউনেস্কোর মহাসচিব পদে সমর্থন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। মাহমুদ আলী ২০১৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ৪৫তম ওআইসি-সিএফএম সম্মেলনে কাতারের সমর্থন চান। তিনি আমিরকে বাংলাদেশ সফরের জন্য রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। জবাবে কাতারের মন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে আগামী বছরের প্রথম দিকে আমিরের সফরসূচি নির্ধারণ করা হবে। কাতারের শ্রমমন্ত্রী ড. ইসা সাদ সে দেশে জনশক্তি নিয়োগের নতুন নীতিমালা সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, কাতার সরকার বাংলাদেশের পেশাজীবী যেমন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইটি বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকার্স ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি আধাদক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগে আগ্রহী। মাহমুদ আলী কাতারগামী বাংলাদেশি শ্রমিকদের আরবি ভাষা শিক্ষাসহ চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে কাতারি বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক কর্তৃপক্ষ কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির (কিউআইএ) প্রধান নির্বাহী শেখ আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন সৌদ আল সানির সঙ্গে কিউআইএ সদর দফতরে বৈঠক করেন।

১৪-১৫ মে অনুষ্ঠেয় দোহা ইকোনমিক ফোরামের ১৭তম বৈঠকের ফাঁকে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক এলাকা ও উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দোহা সফর করবে। কাতার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন তাওয়ারের সঙ্গে বৈঠকে মাহমুদ আলী শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং নিয়োগের জন্য কার্যপদ্ধতি নির্ধারণে কাতার সরকারের যুক্ত থাকার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও আগ্রহের কথা জানান।

সর্বশেষ খবর