বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ

সাফাত ও চার সঙ্গী এখনো অধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বনানীর ‘দি রেইন ট্রি’ হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলায় সাফাত আহমেদসহ অন্য চার আসামি এখনো অধরা। অভিযোগ আসার পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাদের ধরতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ধর্ষকরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্লীলতাহানির শিকার দুই তরুণী। অবশ্য পুলিশ বলছে, আসামি ধরতে তাদের একাধিক টিম কাজ করছে। আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে জন্য সীমান্ত-সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪ মে ভুক্তভোগী দুই তরুণী বনানী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্ত করে মামলা নেওয়া হয় ৬ মে। ভুক্তভোগী তরুণীদের একজন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে সাদনান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আজাদকে আসামি করা হয়। ৭ মে থেকে সাফাতসহ পাঁচ আসামি একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ফলে তাদের অবস্থান শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে। ৯ মে বিকালে বনানীর ‘দি রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বন্ধুদের যোগসাজশে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার তদন্তভার পায় পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। এ বিষয়ে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উপকমিশনার (ডিসি) ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘মামলাটি পাওয়ার পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা নির্ধারণ করে দিয়েছি। খুব গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।’ পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাফাতকে ধরতে গতকালও বাড্ডা, মিরপুর, গুলশান ও সিলেটে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তার খোঁজ মেলেনি। ৭ মে সাফাতসহ অন্য আসামিরা পরস্পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পুলিশ যখনই কোনো সংবাদ পাচ্ছে সেখানে ছুটে যাচ্ছে। সাফাতসহ অন্য আসামিদের ধরতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পাশাপাশি থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাব কাজ করছে। র্যাব-১-এর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও দেখছে। আসামিদের ধরতে আমরা কাজ করছি। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে প্রযুক্তির পাশাপাশি অ্যানালগ পদ্ধতিও অনুসরণ করা হচ্ছে।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন জানান, ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলার আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য সীমান্ত-সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আসামিরা দেশেই আছে। তাদের ধরতে একাধিক অভিযান চালানো হচ্ছে।

তরুণীদের হতাশাজনক ফেসবুক পোস্ট : দি রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার এক তরুণী ৩০ মার্চ তার ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবিটির বর্ণনা এ রকম— একজন বিদেশি মেয়ে ঝরনার পানিতে ভিজছেন। পানির সঙ্গে টলটল করে ঝরছে দু’ চোখের জল। কাজল গলে গাল বেয়ে গলার দিকে যাচ্ছে। মুখটা বিপর্যস্ত। ঠোঁটে বাঁ হাতটা রেখে নির্বাক ভঙ্গিতে ওপরে ক্যামেরার দিকে চেয়ে আছেন। আরেক তরুণী ১ এপ্রিল তার ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবির বর্ণনা এ রকম— এক বিদেশি কিশোরী মেয়ে কাঁদছে। তার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকানো। টেপে লেখা, ‘ইফ ইউ টেল এনিওয়ান (যদি তুমি কাউকে কিছু বলো)।’ ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, হয়তো তারা কোনো হুমকিতে রয়েছেন। এপ্রিল মাস জুড়েই তাদের ফেসবুকের পোস্টগুলো ছিল বেদনাদায়ক ছবি ও কমেন্টসে ভরা। ২৮ মার্চ রাতে ওই দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন সাদনান, সাফাত ও নাঈমরা। সেদিন বাড়ি ফিরে বিপর্যস্ত ছিলেন তারা। কাউকেই কিছু বলেননি। মানসিক ও শারীরিক চাপে কোনোমতে রাত যাপন করেছেন। পরদিন থেকে তারা নিজেদের ফেসবুকে বিভিন্ন হতাশাজনক ছবি পোস্ট করে বিপর্যস্ততার কথা তুলে ধরেন। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুই তরুণী ব্যাখ্যা করে বলেছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় প্রথমে ধর্ষণের বিষয়টি তারা গোপন করেন। তবে প্রাণনাশের হুমকি এবং ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি শুনে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। কোনো পথ না পেয়ে তারা মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। ধর্ষণের ৪০ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় ওই দুই তরুণীর। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের মতে, ধর্ষণের ২৪ ঘণ্টা পর আলামত মুছে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ৪০ দিন পর আলামত পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ফেসবুকে এই দুই তরুণীর পোস্ট ধর্ষণের গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে কাজ করবে।

বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশ : দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাসহ ধর্ষণের সব ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশের আহ্বান করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। কাল বিকাল ৪টায় শাহবাগে এ বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। উল্লেখ্য, ২৮ মার্চ দি রেইন ট্রি হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়েই বন্ধুদের যোগসাজশে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া দুই ছাত্রী। ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণীদের একজন। আসামিদের মধ্যে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, রেগনাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হোসাইন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ এবং ধনাঢ্য ঘরের নাঈম আশরাফ রয়েছেন। তবে নাঈমের বাবার নাম নিশ্চিত হতে না পারলেও তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর