সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

রমজানের আগে চিনি সিন্ডিকেট

বন্ধ রাখা হয়েছে সুগার রিফাইনারি মিল, কমেছে উৎপাদনও

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রমজানের আগে চিনি সিন্ডিকেট

আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে প্রতিদিন চিনির দাম কমছে, সেখানে দেশের বাজারে রোজার মাসকে সামনে রেখে চিনির দাম বাড়িয়ে চলেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেট করে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মিল মালিকদের সামনেই বলেছে, তারা রোজার আগে সুগার রিফাইনারি মিল বন্ধ রেখেছে। উৎপাদনও কমিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা চিনি মিল মালিকদের বিরুদ্ধে সরাসরি এই অভিযোগ করেন। বিষয়টি স্বীকার করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোজার আগে একটি কোম্পানির মিল বন্ধ রাখার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে এতে চিনির বাজার প্রভাবিত হওয়ার কথা নয়। বরং আন্তর্জাতিক বাজারে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে চিনির দাম কমেছে, দেশেও কমার কথা।’

জানা গেছে, দেশে চিনির দাম কমেনি। গতকাল খুচরা বাজারে দেশীয় (বাংলাদেশ সুগার মিল) চিনি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা কেজি দরে। আর ব্র্যান্ডের প্যাকেট চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭২ টাকা দরে।

আন্তর্জাতিক বাজারে কী হচ্ছে : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গতকাল প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনির (র সুগার) মূল্য ছিল ৪০৯ ডলার। প্রতি ডলারের মূল্য ৮১ টাকা ধরে টাকার অঙ্কে প্রতি কেজি ‘র’ সুগারের দাম পড়ে ৩৩ টাকা ১২ পয়সা। আর এই অপরিশোধিত চিনি পরিশোধনের পর বাজার থেকে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। মাঝখানে কয়েকটি হাতবদল আর পরিশোধনের ব্যয় ধরে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। কাস্টমসের তথ্যমতে, গত অর্থ বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ পর্যন্ত) ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৫০০ টন চিনি আমদানি হলেও শেষ তিন মাসে প্রায় আট লাখ ১০ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে চিনির চাহিদা প্রায় ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি চিনি মিলগুলো প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টন চিনি সরবরাহ করে। বাকি ১৩ থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন চিনির চাহিদা পূরণ করছে বেসরকারি পাঁচটি চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। সরকারি সূত্রগুলো জানায়, দেশে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টন চিনির চাহিদা থাকলেও রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে এই চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রোজার মাসে চিনি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মিল মালিকরা।

ব্যবসায়ীরা যা বলছেন : মধ্যমসারির ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা দেশে চিনির যে চাহিদা তা ওই পাঁচ বেসরকারি কোম্পানির হাতেই জিম্মি। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানি নামমাত্র চিনি সরবরাহ করে। মূল হোতা হচ্ছে দুটি কোম্পানি। ওই দুই কোম্পানির একটি এর আগের বছরও রোজার আগে সার্ভিসিংয়ের কথা বলে মিল বন্ধ করে রেখেছিল। এবারও তাই করেছে। সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হাবিব বলেন, সেলস অর্ডার দেওয়ার পর মিল থেকে চিনি আনতে গেলে অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন আটকে রাখছে মিল মালিকরা। এই সময় পর্যন্ত ব্যাংকের টাকার অতিরিক্ত সুদ হার গুনতে হয় আমাদের। উপরন্তু প্রতিদিন ট্রাকভাড়া জরিমানা দিতে হয়, যা চিনির দামে যুক্ত হয়। ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে মিল মালিকরা। তারা রোজার আগে ইচ্ছে করে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।

ইচ্ছাকৃত মেশিনারিজ ধীর করে দিয়েছে। কেউ কেউ সার্ভিসিংয়ের নামে মেশিন বন্ধ করে রেখেছে। ফলে চিনির বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। আর এসব কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও এর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। মিল মালিকরা অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও এখন বাজারে যে চিনি পাওয়া যাচ্ছে এটি তিন মাস আগে আমদানি করা। ওই সময় চিনির দাম বেশি ছিল।

সর্বশেষ খবর