সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ে পাক সমর্থক অনেকেই

—প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ে পাক সমর্থক অনেকেই

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থক ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির দায়িত্বে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পুনর্বিবেচনা চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর করা রিভিউ আবেদনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন। গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করে। আসামিপক্ষে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে অংশ নেন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন। শুনানি আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। শুনানিতে খন্দকার মাহবুব আসামিপক্ষে বলেন, মাই লর্ড, ঘটনার সময় সাঈদী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। আসামিপক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি নিজেই বলেছেন, তার ভাইকে হত্যার ঘটনায় সাঈদী জড়িত নন। কিন্তু সুখরঞ্জন বালিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ট্রাইব্যুনাল থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা শুনেছি ওই সাক্ষী ভারতের কারাগারে এখনো জীবিত আছেন। তার জবানবন্দি নেওয়া হলে রায় পাল্টে যেতে পারে। তাই তাকে হাজির করার আদেশ দেওয়া হোক। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনগত পয়েন্ট থাকলে বলুন, মামলার ফ্যাক্ট বলবেন না। খন্দকার মাহবুব বলেন, মাই লর্ড, এ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হলে রায় উল্টে যাবে। ১৯৭১ সালে সাঈদী পিরোজপুরে ছিলেন না। তিনি তখনো একজন প্রফেশনাল বক্তা ছিলেন। ওয়াজ-মাহফিল ও টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি যশোরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মে মাসের দিকে। আমাদের দেশে মে মাসে তো বর্ষাকাল থাকে। ওই সময় তো ওয়াজ মাহফিল হয় না। সাধারণত শীতকালে ওয়াজ মাহফিল হয়। খন্দকার মাহবুব জবাব দেন, বাংলাদেশে ঋতুর পরিবর্তন হয়েছে। ওই সময় মে মাসেও শীতকাল ছিল। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের দেশে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে ওয়াজ-মাহফিল হয় না। মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সাধারণত বর্ষাকাল থাকে। এ সময় ওয়াজ মাহফিল হয় না। তখন তো এখনকার মতো রাস্তাঘাট এত ভালো ছিল না। খন্দকার মাহবুব বলেন, ১৯৭১ সালে এ দেশের যে ঋতু ছিল, এখন তা নেই। প্রধান বিচারপতি বলেন, খন্দকার সাহেব, আপনি বললেন, তিনি পরিবার নিয়ে ওয়াজ মাহফিল করার জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। এটি কীভাবে সম্ভব? খন্দকার মাহবুব বলেন, ঘটনার সময় সাঈদী পিরোজপুরে ছিলেন না। তিনি যশোরেই ছিলেন। পরে খন্দকার মাহবুব রায়ের কিছু অংশ তুলে ধরেন। এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, এখন সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি হচ্ছে। এই কমিটির অনেকেই একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থক ছিলেন। তিনি আরও বলেন, বলা হচ্ছে, সাঈদীর নাম একাত্তরে সাঈদীও ছিল না। তিনি ছিলেন সিকদার। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে, সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করেই ফাঁসি থেকে সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দাঁড়ালাম অন্তত যাতে খালাস দেওয়া যায়। প্রধান বিচারপতি বলেন, সেটা আপনি চাইতে পারেন। এরপর সরকারপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি আসামি সাঈদীর সাজা বাড়িয়ে ফাঁসি চান।

 তিনি বলেন, আসামিপক্ষ রিভিউতে আইনগত কোনো যুক্তি দিতে পারেননি, বরং তারা শুধু বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেছেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি তো একটি রায়  পেয়েছেন। আপনি রিভিউর শুনানি করছেন কেন? ট্রাইব্যুনাল আইনে রিভিউর বিধান ছিল না। আমরা দিলাম। আমরা চাই না বিচার বিভাগ প্রহসনে পরিণত হোক। রিভিউ করলে সাজা পরির্বতন কিন্তু বিরল। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি  তো আসামির সাজা বাড়িয়ে ফাঁসি চাচ্ছি। কারণ এ মামলায় সাঈদী হুকুমের আসামি ছিলেন। অন্যদের ফাঁসি হলে হুকুমের আসামির ফাঁসি হবে না কেন? সাঈদী একজন কসাই ছিলেন যে মুক্তিযোদ্ধাদের দিনে-দুপুরে হত্যা করতেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, এভাবে আপনি কসাই বলবেন না। আমরা আবারও শুনব। এরপর শুনানি আজ পর্যন্ত মুলতবি হয়।

সর্বশেষ খবর