মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডানা ভাঙা বিমান

ডানা ভাঙা বিমান

গত পাঁচ অর্থবছরে হাজার কোটি টাকার ওপরে লোকসান গুনছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে বিপুল টাকা খরচে বহরে যোগ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের উড়োজাহাজ। সীমাহীন দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন হয় না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর পেছনে বিমান বাংলাদেশের যুক্তি, দেশীয় বাজারে জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত দাম। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা কত প্রকট তার জানান দেয় সেখানে দাপিয়ে বেড়ানো ইঁদুর-বিড়াল। বিমানবন্দরের ভিতরে যাত্রীরা নিয়মিতই দেখেন ইঁদুর-বিড়ালের খেলা। মশা-মাছির উৎপাত তো আছেই। পণ্য খালাস না হওয়ায় কয়েক শ কোটি টাকার মালামাল বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। বিমান ভেড়াতেও সমস্যা হয়। লাগেজ পেতে বিড়ম্বনার শেষ নেই। এ প্রসঙ্গে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও বিমানের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসেছি। সমস্যা সমাধানের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। নিজেও ঘুরেফিরে নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখেছি। কিছু যন্ত্রপাতির প্রয়োজন ছিল। সেগুলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, দুই সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত কার্গোর সমস্যা নিরসন হবে। লোকসানকে শূন্যে নামিয়ে বিমানে লাভের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ জানা যায়, ১৯৭২ সালে ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ধরে যাত্রা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। গত ৪৫ বছরে ফকার থেকে শুরু করে বোয়িং ৭৭৭ আধুনিক উড়োজাহাজের প্রায় সব মডেলই যুক্ত হয় বিমান বাংলাদেশের বহরে। এগুলো কখনো আনা হয়েছে ভাড়ায় আবার কখনো কেনা হয়েছে নগদ টাকায়। ২০০৭ সালে কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয় বিমান বাংলাদেশ। এর পরের দুই বছর লাভের মুখ দেখলেও আবারও গুনতে হয় লোকসান। ২০১১ থেকে ২০১৪— এই তিন অর্থবছরে লোকসান ছাড়ায় ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। অবশ্য এর পরের দুই অর্থবছরে আবারও দেখতে শুরু করে লাভের মুখ। এ সময়ে মোট মুনাফা হয় ৬০০ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি প্রতিরোধের পাশাপাশি ফ্লাইটের বিলম্ব কমানো ও যাত্রীসেবার মান না বাড়াতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে না বিমান। বর্তমানে ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যসহ ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের মধ্যে লাগেজ পাওয়া যায়, সেখানে শাহজালালে মিনিট পেরিয়ে চলে যায় ঘণ্টা। লাগেজ খোয়া যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এ ছাড়া বিমানে ওঠার আগে দেহ তল্লাশির নামে চলে যাত্রী হয়রানি। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন যাদের রেমিট্যান্সে চলে বাংলাদেশ সেই শ্রমজীবীরা। বিমানের ইমিগ্রেশনের ভিতরেও মানি এক্সচেঞ্জের নামে চলে আরেক বিড়ম্বনা। এ ব্যাপারে সিভিল অ্যাভিয়েশন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রায় অচল হয়ে পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরটি। যাত্রীদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই নষ্ট হয়ে যায় স্ক্যানিং মেশিন। পুরনো ধাঁচের মেশিন কখনো বসে যায়। বিদ্যুৎও চলে যায়। ট্রলি খুঁজে পেতেও হয়রান হতে হয়। তবে বকশিশ আদায়ের বেলায় কেউ যেন পিছিয়ে থাকতে চান না। বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনের যেসব ট্যাক্সি থাকে তারা আদায় করে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া। বিমানবন্দরজুড়ে প্রতারকের ভিড়ও লেগেই আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর