মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাতে হারিকেন নিয়ে চলছে বিটিসিএল

হাতে হারিকেন নিয়ে চলছে বিটিসিএল

১২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার সম্পদ নিয়েও দাঁড়াতেই পারছে না বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্যহারে ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকারি এই সেবাপ্রতিষ্ঠান। আর গ্রাহকের অভিযোগে প্রতিনিয়তই জর্জরিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নানামুখী প্রকল্প নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এ ব্যাপারে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজ উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে প্রযুক্তি। মানুষের হাতে হাতে মোবাইল এজন্য কমছে ল্যান্ডফোনের গ্রাহকসংখ্যা। তাই ল্যান্ডফোনের সেবা আরও উন্নত করতে আমরা নতুন সেবা যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। নতুন সেবার মাধ্যমে গ্রাহক ভোগান্তি কমানো হবে এবং এ থেকে আসবে অতিরিক্ত রাজস্ব।’ বিটিসিএল সূত্রে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের টেলিফোন অপারেটর ক্যাপাসিটি রয়েছে ১৩ লাখ। আর বর্তমানে এর গ্রাহক রয়েছে সাড়ে ৬ লাখ। অথচ গত বছরে গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৭ লাখ ১৬ হাজার। ২০১২ সালে গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৪৩ হাজার। গ্রাহকসংখ্যা কমে যাওয়ায় কমেছে রাজস্বও। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৮৩ কোটি ২৩ লাখ ১৪ হাজার ৭৩১ টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৮ কোটি ৩৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৫০ টাকা। অথচ ২০১১-১২ অর্থবছরে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি ৮৪ হাজার ৩৩৮ টাকা। বিটিসিএলের অর্থ আয় হয় একটা দেশের ভিতরের সংযোগ থেকে এবং বড় অংশটি আসে দেশের বাইরে থেকে আসা কলে। কিন্তু মানুষের হাতে মোবাইল ফোন চলে আসায় প্রবাসীরা ল্যান্ডফোনে কল দেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বিটিসিএলের রাজস্বের বড় একটা অর্থ চলে যাচ্ছে অন্য মোবাইলের অপারেটরদের হাতে। আর প্রতিদিনই এক পা করে ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিটিসিএল। ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী ১২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বিটিসিএলের। সারা দেশে ছড়িয়ে আছে সাড়ে ৬ লাখ গ্রাহক। পর্যাপ্ত জনবল থাকলেও ক্রমেই কমছে গ্রাহকসংখ্যা। প্রতি বছর লাভের তো নয়ই, বরং ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। বিটিসিএল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিটিসিএল গ্রাহককে আট ধরনের সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে আছে : পিএসটিএন লাইসেন্স, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সার্ভিস অপারেটর লাইসেন্স, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ সার্ভিস অপারেটর লাইসেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস অপারেটর লাইসেন্স, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্স, ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবল লাইসেন্স, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক লাইসেন্স এবং ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস লাইসেন্স। অর্থাৎ নতুন ল্যান্ডফোনের সংযোগ দেওয়া, ব্রডব্যান্ড সংযোগ দিয়ে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা, অন্য অপারেটরে কল করার জন্য এক্সচেঞ্জ করা, অন্য অপারেটরদের ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে বিটিসিএল। সেবার বহুমুখীকরণ এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পারাকে বিটিসিএলের ক্ষতির কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর