বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাড়ি থেকে মওদুদ উচ্ছেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়ি থেকে মওদুদ উচ্ছেদ

মওদুদের দখলে থাকা গুলশানের বাসা থেকে গতকাল মালামাল বের করে দেয় রাজউক —রোহেত রাজীব

চার দশক পর গুলশান এভিনিউর ১৫৯ নম্বরের সেই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হলো বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর অভিযান চালিয়ে সেই বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ১৯৭২ সাল থেকে ১ বিঘা ১৩ কাঠা জমিতে দুইতলার বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী। যখন উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় তখন মওদুদ আহমদ ছিলেন আদালতে। বাড়িতে ছিলেন শুধু কেয়ারটেকার, স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মীরা। ব্যারিস্টার মওদুদের স্ত্রী ও কন্যা বিদেশে অবস্থান করছেন। উচ্ছেদের পর মধ্যরাতে বাড়িটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমানের নেতৃত্বে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে গুলশান এভিনিউর ওই বাড়িতে অভিযান শুরু হয়। এরপর রাজউকের একটি ট্রাক ও তিনটি পিকআপ ভ্যানে করে ওই বাড়ির মালপত্র মওদুদের গুলশানের অন্য দুটি ফ্ল্যাটে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় বাড়ির কেয়ারটেকার, স্টাফ ও নিরাপত্তারক্ষীরা মিলেই জিনিসপত্র গাড়িতে গুছিয়ে তুলে দেন। রাজউকের শতাধিক কর্মী ট্রাকে করে মালামাল স্থানান্তর করেন। রাত সাড়ে ১০টার পর মওদুদ আহমদ তার সেই স্মৃতিময় ১৫৯ নম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। যাওয়ার আগে নিজের বইপত্রগুলো গুছিয়ে গাড়িতে তুলে দেন। সেখান থেকে তিনি যান গুলশান-২ এর ৮৪ নম্বর রোডের ‘রয়েল কনকর্ড’ ফ্ল্যাটে। এরপর সেখান থেকে তিনি চলে যান এক নিকটাত্মীয়ের বাসায়। এদিকে ইফতারের পর মওদুদের বাড়িতে যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি বাড়ির সামনে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান নেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দাও জানান। ব্যারিস্টার মওদুদকে এ সময় বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও দেখা যায় সেখানে। এর আগে বিকালে মওদুদের বাড়ির সামনে যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেন। উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে ওই বাড়ির সামনে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সেখানে ছিল; ছিল জলকামান, প্রিজনভ্যান, সাঁজোয়া যান ও রাজউকের বুলডোজার। অভিযান চলাকালে অলিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা রাজউকের সম্পত্তি। দীর্ঘদিন ধরে তারা দখল করে রেখেছিলেন। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। আমরা দখলমুক্ত করছি।’ উচ্ছেদ অভিযানের খবর শুনে বেলা আড়াইটার দিকে আইনজীবীর পোশাকেই আদালত থেকে দ্রুত বাড়িতে আসেন ব্যারিস্টার মওদুদ। এ সময় তাকে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য তাকে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বিকাল ৫টার দিকে বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন মওদুদ আহমদ। এ সময় বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে তো প্রতিষ্ঠিত আইন আছে। তবে সরকারি দলের লোকের জন্য এক ধরনের আইন। আবার বিরোধী দলের লোকজনের জন্য প্রয়োগ হয় অন্যভাবে। তবে এখন যা দেখা যাচ্ছে দেশে বিচার বলে কিছু নেই। এখন আর কী করব। আমার মতো নাগরিকের আর কী করার আছে। এখন রাতে ফুটপাথে ঘুমাব।’ কাঁপা কণ্ঠে মওদুদ বলেন, ‘রাজউক থেকে আমি কোনো নোটিস পাইনি। রাজউক বলতে পারত আপনাকে এত দিনের সময় দেওয়া হলো। এর মধ্যে আপনাকে সরে যেতে হবে। আজকে এ ঘটনা অন্য কোনো দেশে হলে সরকারকে পদত্যাগ করতে হতো।’ দুপুরে বাড়িতে ঢুকতে না পেরে কয়েক মিনিট এদিক-ওদিক করে ফুটপাথে রাখা বেতের সোফায় বসে পড়েন মওদুদ। অনেকটা মলিন ও হতাশ চেহারায় ওই চেয়ারে বসেই সাংবাদিক, পুলিশ ও রাজউক কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম দফায় কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশের অনুমতি নিয়ে তিনি তার বাসায় প্রবেশ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা সময় সেখানে অবস্থান করে তিনি বিকাল ৫টায় দ্বিতীয় দফায় কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা পর বিকাল সোয়া ৪টায় পুলিশের সঙ্গে শেষবারের মতো বাড়িতে ঢোকেন মওদুদ। কয়েক মিনিট পর আবার বেরিয়ে আসেন। সন্ধ্যা ৬টার পর ইফতারের জন্য কিছু সময় বাইরে ছিলেন। ইফতারের পর আবার সেই বাড়ির সামনে অবস্থান নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ সময় বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের কয়েকজন নেতা আসেন তার বাসভবনের সামনে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, একটি পিয়ানো, কাঠের একটি বড় সিন্দুক, অর্ধশতাধিক সুটকেস, কয়েক ডজন সোফা ও চেয়ার, বেশ কয়েকটি আলমারি, আইনি বই-পুস্তক, খাটসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ গৃহস্থালির যাবতীয় সামগ্রী ট্রাক ও পিকআপে করে দফায় দফায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাড়ির সামনে পায়চারি করতে দেখা যায় ব্যারিস্টার মওদুদকে। এ সময় কখনো তাকে বিমর্ষ আবার কখনো হাসিমুখে কথা বলতে দেখা গেছে। রাজউকের শতাধিক কর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ সময় সহযোগিতা করেন। এ সময় এভিনিউ এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। সাধারণ মানুষও উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে মওদুদের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। দুদকের মামলাসূত্রে জানা যায়, ১ বিঘা ১৩ কাঠা জমির ওপর ওই বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে তিনি ওই বাড়ির মালিকানা পান। ’৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র এহসানের স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে নিবন্ধন করা হয়। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা আর ফিরে না আসায় ’৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন। কিন্তু ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়ার অভিযোগ এনে দুদক মামলা করলে চার বছর আগে শুরু হয় আইনি লড়াই। মওদুদ সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও রায় তার বিপক্ষে যায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও গত রবিবার তা খারিজ হয়ে গেলে মওদুদের বাড়ি ছাড়া অনিবার্য হয়ে পড়ে। ওই রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেছিলেন, ‘দেশে কি আইন নেই? আমি আইনের আশ্রয় নেব। আদালতের আশ্রয় নেব। বাড়ি ছাড়ব না।’ অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ‘মামলায় হেরে গিয়ে এ কথা বলাও দুঃখজনক। অবশ্যই বাড়ি ছাড়তে হবে।’ এর দুই দিনের মাথায় গতকাল দুপুরের দিকে ওই বাড়ির দখল বুঝে নিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে রাজউক। গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক, পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়াসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। অভিযান শুরুর কিছু সময় পর আইনজীবীর পোশাকে ওই বাড়ির সামনে হাজির হন ব্যারিস্টার মওদুদ। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুরোধে গেট থেকে সরে রাস্তার পাশে দাঁড়ান তিনি। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘সুপ্রিম  কোর্টে  যে মামলা ছিল সেটার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কোনো আইন নেই যে এত দিনের মধ্যে আপনাকে বাড়ি ছাড়তে হবে? আজকে আদালতের কোনো অর্ডার আছে? তাদের (রাজউক) কোনো অর্ডার আছে? একটা বাড়িতে ঢুকে গেল! আমাদের দেশে কি আইন নেই?’ রাজউক কোনো নোটিস ছাড়াই এ অভিযান চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অলিউর রহমান বলেন, ‘এটা তো আমাদের সম্পত্তি। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এটা কি উনার সম্পত্তি? নোটিস দেব কেন?’ রাজউকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মওদুদ আহমদ এ বাড়ি দখলে রেখেছিলেন “অবৈধভাবে”। এখন রাজউক বিধি অনুযায়ী তার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। আপাতত এটা তালাবদ্ধ থাকবে, পরে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’ তবে মওদুদের জুনিয়র ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো নোটিস ছাড়াই বাড়িটি দখল করা হয়েছে। এটা আইন অনুযায়ী হয়নি। এ নিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’

আমার স্মৃতিগুলো ভেঙে গেছে : কোথায় মালামাল রাখা হচ্ছে— প্রশ্ন করা হলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘মালামাল ওরা আমার পাশের একটা ফ্ল্যাট আছে, খালি ফ্ল্যাট, সেখানে নিয়ে গেছে। সব মালামাল লণ্ডভণ্ড করে সেখানে নিয়ে ট্রাকের ওপর রেখে দিয়েছে। ওপরে ওঠানোর লোক নেই। আমি নিজে দেখলাম, অনেক মালামাল ভেঙে গেছে। অনেক পুরনো স্মৃতি, আমাদের অনেক স্মৃতি, আমার দুই ছেলের (প্রয়াত) অনেক স্মৃতি জড়িত, তা ভেঙে গেছে।’ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘এই বাড়িতে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি পেং এসেছিলেন, ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন, আরও অনেকে এসেছিলেন। খুব বড় বড় দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ এই বাড়িতে এসেছেন। এই বাড়ির সঙ্গে আমাদের অনেক রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতি জড়িত।’ ‘১৯৮১ সাল থেকে আমি এই বাড়িতে আছি’ উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, ‘যিনি মালিক তার দেওয়া বৈধ কাগজ নিয়ে আমি একটা বৈধ লিজ ডিডের অধীনে এই বাড়িতে ছিলাম। আমি সে জন্য মামলাও দায়ের করেছি, সেই মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আমার মামলার নম্বর ৫০৬১ দেওয়ানি মামলা, ২০১৭ সাল। সেখানে রাজউক ও সরকারকে সমন করা হয়েছে। এই অবস্থায় থাকাকালে বিনা নোটিসে সরকার বিচার বিভাগের আদেশ উপেক্ষা করে একটা স্বৈরাচারী আচরণের মাধ্যমে এই কাজ করেছে। আমি এর বিচারের ভার দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম।’ হয়রানি করতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে সরকার ‘অন্যায়ভাবে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বাড়ির ভাড়াটে দাবি করে মওদুদের মামলা : রাজধানীর গুলশানের বাড়ির ভাড়াটে দাবি করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মামলা করেছেন। গতকাল ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মওদুদ আহমদ নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছে করিম ফারনাজ সোলাইমান, রাজউক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঢাকার জেলা প্রশাসককে। এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ সাংবাদিকদের জানান, মামলা গ্রহণ করে বিচারক উত্পল ভট্টাচার্য বিবাদীদের প্রতি সমন জারির আদেশ দিয়েছেন। আগামী ১৯ জুলাই সমন ফেরতের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

মওদুদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাড়ি নিয়ে তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের অনেকে বাড়ি জবরদখল করে আছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমন একদিন আসবে তাদেরও এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হবে।

গতকাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার পুষ্পকুঞ্জ হলে ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাব সভাপতি প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনের নেতারা ছাড়াও বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়া বলেন, মওদুদ সাহেব ওই বাড়িতে ৩০ বছর ছিলেন। আমিও আমার বাড়িতে ৪০ বছর ছিলাম। আমাকে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। এসব দুর্নীতিবাজকেও একদিন জনগণ এক কাপড়ে বের করে দেবে।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারদিকে শুধু ক্ষমতাসীনদের লুটপাট, জবর-দখল, অন্যায়-অবিচার, নৈরাজ্য চলছে। দেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। কিন্তু এ সরকারের অধীনে তা সম্ভব নয়। তাই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিএনপিপ্রধান বলেন, পুলিশ আর গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে এ সরকার। মানুষ আর এ অবস্থা দেখতে চায় না। তারা চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু সেই নির্বাচন এই হাসিনা সরকারের অধীনে সম্ভব নয়। কারণ এদের অধীনে নির্বাচন হলে সেখানে সবার অংশগ্রহণ হবে না, নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না। মানুষ পরিবর্তন চায়। নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। খালেদা জিয়া সরকারকে মানুষের সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ আজ বড় অসহায়। কোর্টে গিয়েও মানুষ এখন কোনো বিচার পায় না। সেখানেও আওয়ামী লীগের থাবা পড়েছে। যাকে খুশি কারাগারে পাঠাচ্ছে। আর নিজেদের লোকদের ছেড়ে দিচ্ছে। দেশে কোনো বিচার নেই। আপন জুয়েলার্সের মালামাল জব্দ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কী কারণে হঠাৎ করে এসব করা হচ্ছে জনগণ জানতে চায়। তিনি বলেন, প্রতিদিনই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ নানা জায়গায় যেসব সোনার চোরাচালান ধরা পড়ছে, তার সঙ্গে এই আওয়ামী লীগের লোকেরাই জড়িত রয়েছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশ আজ অন্যদের হাতে চলে যেতে বসেছে। মানুষ আর এ অবস্থা দেখতে চায় না। তিনি আরও বলেন, এই সরকার যে বাজেট দিয়েছে, এতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হবে। লাভবান হবে আওয়ামী লীগের লোকজন। তবে এ অবস্থা একদিন থাকবে না। আল্লাহতায়ালা সহ্য করবেন না। কারণ সৃষ্টিকর্তার বিচারে কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর