বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিল্পে কমছে ব্যাংক ঋণ

গ্যাস বিদ্যুৎ অবকাঠামো সমস্যায় নেই প্রত্যাশিত বিনিয়োগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

শিল্প খাতে ব্যাংক ঋণকে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ উদ্যোক্তারা মেয়াদি ঋণ নিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করেন। আবার চলতি মূলধন নিয়ে কারখানা পরিচালনা করেন। মেয়াদি ঋণ ও চলতি মূলধন শিল্প খাতে এই দুই ধরনের ঋণের পরিমাণ কমেছে ব্যাপকভাবে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে শিল্প খাতে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হলেও চলতি অর্থবছরে (ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ পর্যন্ত) সেটি কমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬০৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চলতি মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি মূলধন খাতে ঋণ বিতরণ হয় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ১ লাখ ১১ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অন্যদিকে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মেয়াদি ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা হলেও সেটি কমে চলতি অর্থবছরে ৩২ হাজার ৬২০ কোটি টাকায় নেমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক ঋণে সুদ হার কিছুটা কমলেও শিল্পে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো সমস্যা রয়েই গেছে। এ কারণে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। এ ছাড়া আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন; এ ধরনের পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগে যেতে চাইছেন না উদ্যোক্তারা। সব মিলিয়ে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ার কথা। কারণ সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা বেসরকারি খাতকে উজ্জীবিত করছে। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি দেখে সেটি বলা যাচ্ছে না।’ বিআইডিএসের এই গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘শিল্পে ঋণ বিতরণ কমার পেছনে গ্যাস, বিদ্যুতের সংকট কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিও কিছুটা প্রভাব ফেলছে।’ তবে আগামীতে এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। জানা গেছে, শিল্প খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থায় বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য জমে গেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এই টাকা বিনিয়োগযোগ্য কিন্তু বিনিয়োগ হয়নি, অব্যবহৃত রয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশি তিনটি কোম্পানির বিদেশে বিনিয়োগ অনুমতির বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে অতিরিক্ত এই তারল্যের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার বিনিয়োগ করতে না পারায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও আর আগের মতো আমানত সংগ্রহ করছে না। ফলে ব্যাংকের আমানতে সুদ হার কমেছে। ঋণের চাহিদা বাড়াতে মেয়াদি ঋণে সুদ হারও কিছুটা কমিয়েছে কোনো কোনো ব্যাংক। কিন্তু পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটছে না। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়নের যে প্রতিবেদন সম্প্রতি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের নেতিবাচক তথ্য রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, আর বাস্তবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। ব্যক্তি খাতের এই ঋণ প্রবাহ দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের চিত্র সম্পর্কে উদ্বেগজনক ধারণাই দিচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর