বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

রামপাল নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে গতকাল সরকারি দলের মীর মোস্তাক আহমেদ রবির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি মহল ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও মনগড়া বক্তব্যের মাধ্যমে সুন্দরবন ধ্বংস হবে বলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তথ্য প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৩টি সাইটের মধ্যে পরিবেশগত এবং অন্যান্য সার্বিক দিক দিয়ে সবচেয়ে সুবিধাজনক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রামপালকে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রামপালে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে তা হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৯০২ ফুট উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করা হবে, যার দ্বারা বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে পরিশোধিত বায়ু নির্গত হবে। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘রূপকল্প-২০৩০’ ঘোষণার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি অনেকটা নির্বাচনী ইশতেহারের মতোই হয়ে গেছে। এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের আগে ক্ষমতায় যেতে হবে। তা ছাড়া তাদের ভিশন তো আমরাই বাস্তবায়ন করে ফেলেছি। তিনি বলেন, রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন দেশবাসীর আস্থা। কিন্তু জনআস্থা অর্জন তাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। নানা ধরনের সন্ত্রাসী কাজে যারা পারদর্শী তারা (বিএনপি) আবার জনগণকে কী আশার বাণী শোনাবে? আগে তাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে যে, অতীতের নেতিবাচক রাজনীতি, অনিয়মতান্ত্রিক তত্পরতায় তারা আর ফিরে যাবে না। বাজেট অধিবেশনে গতকাল টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্পের নামে বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় গেলে তারা কী কী করবেন তার দীর্ঘ ফর্দ দিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে কোন পদ্ধতিতে এটা বাস্তবায়ন করা হবে, কীভাবে অর্থায়ন করা হবে- তা স্পষ্ট নয়। এটি অনেকটা নির্বাচনী ইশতেহারের মতোই হয়ে গেছে। এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের আগে ক্ষমতায় যেতে হবে। শুধু তাই নয়, পার্লামেন্টারি পদ্ধতি ও গণভোট পদ্ধতির পরিবর্তনসহ আরও যেসব মৌল পরিবর্তন তারা আনতে চাচ্ছেন, তার জন্য তো সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাগবে। এ জন্য জনআস্থা প্রয়োজন। বিএনপি তাদের শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতি, জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার যে দৃষ্টান্ত রেখেছে, এরপর ক্ষমতার বাইরে থেকে জ্বালাও-পোড়াওসহ অনিয়মতান্ত্রিক তত্পরতা দিয়ে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছে, তা কাটিয়ে ওঠা এতটা সহজ নয়। জনআস্থা অর্জন তাদের জন্য যে কঠিন চ্যালেঞ্জ তা বলাই বাহুল্য।

জিয়া আমাকে ও রেহানাকে দেশে আসতে দেয়নি : সরকারি দলের এ কে এম শাহজাহান কামালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদেশের মাটিতেই পড়ে থাকতে হয়। খুনি জিয়া আমাকে ও আমার বোন শেখ রেহানাকে দেশে আসতে দেয়নি। ওই সময় সমগ্র বাংলাদেশকেই কয়েদখানায় পরিণত করা হয়। তিনি আরও বলেন, খুনি মোশতাক ও তার দোসর জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড চালায়। বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। জিয়া নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেয়। আমি ও রেহানা দেশে ফিরতে চাইলে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী বাহিনী সব বাধা উপেক্ষা করে আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এসে আমি যখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে প্রবেশ করতে যাই, আমাকে ওই বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়নি। পিতা-মাতা, ভাইদের জন্য একটু দোয়া করার সুযোগও দেওয়া হয়নি। পুলিশ পাহারা ও গেটে তালা দিয়ে আমার পথ রুদ্ধ করা হয়। আমি রাস্তার ওপরই বসে আমাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিলাদ ও দোয়া পড়ি। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট শুধু যে ঘাতকরা হত্যাকাণ্ড করেছে তাই নয়, তারা আমাদের বাড়িতে লুটপাটও করেছে। খুনি, ষড়যন্ত্রকারীরা জনমানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আর আমি ও আমার বোন শেখ রেহানা এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১২ জুন হঠাৎ করে এক ঘণ্টার নোটিসে বাড়িটি আমাকে তাড়াহুড়া করে হস্তান্তর করা হয়।

সর্বশেষ খবর