বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
বরকতময় মাহে রমজান

সায়েমের মোনাজাত কবুল হয় ইফতারে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইফতারের আগের সময়টি রোজাদারের জন্য জান্নাতি চাদরে ঘেরা এক মুহূর্ত; ইমানি চেতনায় সিক্ত হওয়ার মুহূর্ত; জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের মুহূর্ত; আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেওয়ার মুহূর্ত। কারণ, এ মুহূর্তে রোজাদারের অনুভূতি থাকে সমর্পিত; অন্তর থাকে জান্নাতি অনুভূতিতে আন্দোলিত। ইফতারের মুহূর্ত সবচেয়ে বেশি বরকতময়। কারণ, এ মুহূর্তে আপনি নিজেকে করে তোলেন বরকত লাভের পাত্র। আপনার জীবন-মরণ, ভালোবাসা, প্রত্যাশা, ইবাদত-প্রার্থনা সবই যে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ঘিরে; তা আপনি প্রমাণ করেছেন ইফতারি গ্রহণের মুহূর্তে। ক্ষুধার করুণ রোদন, পিপাসার বুকফাটা কান্না আপনাকে বিচলিত করেনি এতটুকুও; সরাতে পারেনি স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে। আপনি অপেক্ষায় ছিলেন, কখন আসবে মহান রবের নির্দেশ; বাজবে অনুমতির আসমানি ঘণ্টা। এটাই হলো তাকওয়া, যা অর্জনের জন্য এসেছে রমজানের রোজা। অন্য কথায় বলতে গেলে ইফতারের মুহূর্তে আপনার ইমানে সঞ্চিত হয়েছে নতুন দৃঢ়তা; আপনার তাকওয়ার বৃক্ষে ফুটেছে নতুন পত্রপল্লব। আপনি অনুভব করতে পেরেছেন মাবুদ রব্বানার নৈকট্য; এ কারণেই মহানবী (সা.) ইফতারের মুহূর্তকে উল্লেখ করেছেন আনন্দের এক মুহূর্ত বলে। তিনি এরশাদ করেছেন, ‘রোজাদারের আছে দুটি আনন্দ, ইফতারের মুহূর্তের আনন্দ এবং প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ মুহূর্তের আনন্দ।’ (মুসলিম)। সারা দিনের উপবাসযাপনে পুষ্ট হয় আপনার আত্মা। আর এ পুষ্ট আত্মা থেকে যে প্রার্থনা উত্থিত হয়, তা কবুল না হয়ে পারে না। তাই তো প্রিয়নবী (সা.) অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না— ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক; ২. রোজাদার যখন ইফতার করে; ৩. মজলুম ব্যক্তির দোয়া।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদারদের জন্য একটি দোয়া নিশ্চিতরূপে বরাদ্দ থাকে, যা কখনই ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ (ইবনে মাজাহ)। ইফতারের মুহূর্ত এজন্যও বরকতময় যে, এ মুহূর্তে আল্লাহর দেওয়া রিজিক সম্পর্কে আপনার অনুভূতি আন্দোলিত হয়। আপনি ভাবতে থাকেন, ইফতারি গ্রহণের যাবতীয় সামগ্রী আল্লাহতায়ালার রিজিকভিন্ন অন্য কিছু নয়। কেননা পানীয় অথবা খাদ্য হিসেবে আপনি যা গ্রহণ করছেন, তা সৃষ্টির পেছনে আপনার আদৌ কোনো হাত নেই। এমনকি এ খাদ্য-পানীয় প্রস্তুতকরণে আপনি যে মেধা ও শক্তি ব্যয় করেছেন, তাও একমাত্র আল্লাহতায়ালার দান। এজন্যই আপনার জবান থেকে বের হয়ে আসে, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার উদ্দেশ্যেই রোজা রেখেছি এবং আপনার রিজিক দিয়েই ইফতারি করছি।’ ইফতারের মুহূর্ত বরকতের। কারণ, এ মুহূর্তে আপনার ইমান থাকে শক্তিমান। ইফতারের সময় নবী কখনো কখনো বলতেন, ‘চলে গেছে পিপাসা, সিক্ত হয়েছে শিরা এবং নিশ্চিত হয়েছে সওয়াব, ইনশা আল্লাহ।’ (আবু দাউদ)। ইফতারের বরকতময় ক্ষণে অনেককেই আল্লাহতায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি ইফতারের সময় অনেককেই আল্লাহতায়ালা আগুন থেকে মুক্তির ঘোষণা দেন।’ (আহমাদ)। ইফতারি গ্রহণের সময় বরকতময়। অতএব এ মুহূর্তের খাবারও যেন হালাল ও বরকতময় হয়, সে ব্যাপারেও রোজাদারের সতর্ক থাকতে হবে। খেজুর হলো বরকতময় খাবার, বিশেষ করে তা যদি হয় বেজোড় সংখ্যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেতেন বলে বর্ণনায় পাওয়া যায়। আনাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) তিনটি খেজুর খেয়ে ইফতারি গ্রহণ করতে পছন্দ করতেন। (ইবনে হাজার)। হে আল্লাহ! আমাদের হালাল ইফতারির ব্যবস্থা করে দিন। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর