শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
ব্রিটেন নির্বাচন

ঝুলন্ত পার্লামেন্ট সরকার গঠনে রক্ষণশীলরাই

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

ঝুলন্ত পার্লামেন্ট সরকার গঠনে রক্ষণশীলরাই

হঠাৎ করে অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে দুর্বল বা ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পেয়েছে গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলে পরিচিত ব্রিটেন। গতকালের সাধারণ নির্বাচনের কোনো দলই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আগের চেয়ে কম আসন পেয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র দল কনজারবেটিভ পার্টি। তুলনামূলক ভালো করলেও বিরোধী লেবার পার্টি পায়নি সরকার গঠনের মতো আসন বা সমর্থন। ফলে ঘোর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয় ব্রিটিশ সরকার গঠন নিয়ে। শেষ পর্যন্ত উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) নামের একটি ছোট দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে। রানী এলিজাবেথের অনুমোদন নিয়ে ফের সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশটির দুর্বল সরকার কতদিন টিকবে তা নিয়ে এখনই সৃষ্টি হয়েছে নানান শঙ্কা। সেই সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে আসার আলোচনা প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতার আশঙ্কা করা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুসারে, নিজের মেয়াদের তিন বছর বাকি থাকতেই জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। সেই হিসেবে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার পর যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোর রাত সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। হাউস অব কমন্সে ৬৫০ আসনে এমপি নির্বাচিত করতে ভোট দিয়েছেন প্রায় চার কোটি ৭০ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের ৬৮ শতাংশ ভোটার। ব্রিটেনে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২৬ আসনের। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচনে ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৬৪৫টির ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ৩১৪টি আসন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেরেমি করবিনের লেবার পার্টি পেয়েছে ২৬১টি আসন। এ ছাড়া স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ৩৫, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১২টি, ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি ১০টি ও অন্যান্য দল পেয়েছে ১৩টি আসন। বাকি পাঁচটি আসনের ফল পাওয়া যায়নি। আগের তুলনায় এবার লেবার পার্টির ঝুলিতে যোগ হয়েছে ২৯টি নতুন আসন এবং কনজারভেটিভ ১৩টি আসন হারিয়েছে। নিকোলা স্টারজেনের স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, এসএনপি, খুবই খারাপ ফল করেছে। তারা হারিয়েছে ২২টি আসন। তাদের আসনগুলো গেছে টোরি, লেবার এবং লিবারেল ডেমোক্রাটদের কাছে।

তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোর মন্তব্য, সবমিলিয়ে লজ্জায় পড়তে হয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কেই। গতকাল ফলাফল প্রকাশ হওয়া শুরুর পর লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীই এই নির্বাচন দিয়েছেন, কারণ তিনি জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কনজারভেটিভ নির্বাচনী আসন হারাল। তিনি ভোট, জনসমর্থন ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। আমি মনে করি, তেরেসা মের পদত্যাগের জন্য এটাই যথেষ্ট। তার উচিত এমন একটি সরকার গঠনের পথ সুগম করে দেওয়া, যা সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে। শুধু বিরোধী করবিনই নন, নিজ দল কনজারভেটিভের অনেক নেতাই প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। কিন্তু পদত্যাগের অস্বীকৃতি জানানো তেরেসা মে শেষ পর্যন্ত উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সঙ্গে সমঝোতা করেন এবং রানীর সঙ্গে দেখা করার পর সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। বিবিসির খবরে বলা হয়, কনজারভেটিভ পার্টিকে সরকার গঠনে সমর্থন দেওয়ার বিনিময়ে ডিইউপি কী পাবে তা অবশ্য পরিষ্কার নয়। নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়ে তেরেসা মে জানিয়েছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ বা ব্রেক্সিটের আলোচনা ১০ দিনের মধ্যে শুরু হবে। তেরেসা মে বলেছেন, ‘এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। কনজারভেটিভ পার্টি সবচেয়ে বেশি আসন ও  সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়ায় আমাদের দায়িত্ব হবে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা এবং আমরা সেটাই করব।

অপরদিকে, জোটের শরিক ডিইউপির এমপি সাইমন হ্যামিল্টন বলেছেন, তার দলের ভোট কনজারভেটিভদের সরকার গঠনের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘ইইউ ছাড়ার সময় উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধা চাওয়ার ব্যাপারে আমরা দর-কষকষি করব।’”

তবে বিবিসির রাজনৈতিক সম্পাদক বলছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তেরেসা মের অবস্থান হবে খুবই দুর্বল এবং তিনি হয়তো বেশি দিন ক্ষমতায় টিকতেও পারবেন না। কনজারভেটিভ পার্টির একজন মন্ত্রী বিবিসির বিশ্লেষককে বলেছেন, এই ফলাফলের পর ক্ষমতায় থাকা তেরেসা মে-র জন্য কঠিন হবে। যুক্তরাজ্যের সাবেক এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা লর্ড ওডনেল বিবিসিকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে আপাতত তার পদে থাকতে হবে—সেটা তার দায়িত্ব। তবে ব্রিটেনের ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে এই গ্রীষ্মের শেষের দিকে আরেকটা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে নতুন করে ব্রিটিশ সরকারের ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে।

সর্বশেষ খবর