শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাকিব-মাহমুদুল্লাহ ম্যাজিকে জয়

মেজবাহ্-উল-হক, কার্ডিফ থেকে

সাকিব-মাহমুদুল্লাহ ম্যাজিকে জয়

এ আলিঙ্গন মধুর। রানের গতিতে দুজনে ছিলেন সমানে সমান। সাকিবের যখন ৯৯ মাহমুদুল্লাহর ৯৮। সাকিব সেঞ্চুরি করেন ছক্কায় আর মাহমুদুল্লাহ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে —ইএসপিএন

গ্যালারি তখন ফাঁকা! রাগে, অভিমানে, বিরক্তিতে সোয়ালেক স্টেডিয়াম ত্যাগ করছেন বাঙালি দর্শকরা! ৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর কেবল ঘাটতি মেরে কিছু ক্রিকেটপাগল পড়ে ছিলেন গ্যালারিতে। প্রেসবক্সে বসা বাংলাদেশি সাংবাদিকরাও অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে মাঠের দিকে নির্বাক তাকিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তখন চলছে গালাগালি! স্ট্যাটাসের পর স্ট্যাটাস দিয়ে তুলাধোনা করা হচ্ছে টাইগারদের।

ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশের গ্যালারিতে ছোট্ট এক অবুঝ শিশু উঁচিয়ে ধরছিল একটি প্লাকার্ড! দুই লাইনে লেখা ছিল ‘গর্জে ওঠো বাংলাদেশ’, ‘শাবাশ বাংলাদেশ’! দলের চরম বিপর্যয়ের সময় শিশুকে এমন প্লাকার্ড উঁচিয়ে ধরতে দেখে পাশে থাকা বাবা-মা যেন ভীষণ বিব্রতবোধ করছিলেন। কিন্তু এর পরই বদলে গেল ম্যাচের চিত্র। যেন কল্পনাকেও হার মানিয়ে ৫ উইকেটে জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। কার্ডিফে সৃষ্টি হলো নতুন এক ইতিহাস। আর এই ইতিহাস নিজের হাতে লিখলেন দুই ক্রিকেট ইতিহাসবেত্তা সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর পঞ্চম উইকেটে তারা গড়েন ২২৪ রানের ঐতিহাসিক এক জুটি। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড এটি। শুধু তাই নয়, পঞ্চম উইকেট জুটিতে বিশ্ব ক্রিকেটেও সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড এটি। সেঞ্চুরি করেছেন দুই ব্যাটসম্যানই। সাকিব ১১৫ বলে করেছেন ১১৪ রান। একটি ছক্কার সঙ্গে ১১টি বাউন্ডারি। আর মাহমুদুল্লাহ ১০৭ বলে করেছেন অপরাজিত ১০২ রান। সাকিব সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ছক্কা হাঁকিয়ে, আর মাহমুদুল্লাহ বাউন্ডারি দিয়ে। অথচ ম্যাচের আগেও এই মাহমুদুল্লাহ-সাকিবকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সমালোচকরা যেন ভুলেই গিয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেই পরপর দুই সেঞ্চুরি করছিলেন। সাকিব শুধু ভাগ্যের জোরে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হননি। গতকাল কার্ডিফে দুই ব্যাটসম্যানই তাদের ‘ক্লাস’ আবার বুঝিয়ে দিলেন। তারা যে কত বড় মাপের ব্যাটসম্যান তাও বুঝিয়ে দিলেন। কার্ডিফ স্টেডিয়ামকে রীতিমতো নাটকের মঞ্চ বানিয়ে ফেললেন। গতকাল দলীয় খাতায় কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই ড্রেসিংরুমে ফিরে যান সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। ১০ রানে ফিরে যান সাব্বির রহমান। ১২ রানে আউট সৌম্য সরকার। একবার নতুন জীবন পাওয়ার পরও ৩৩ রানে বিদায় নিতে হয় ব্যাটিং মেরুদণ্ড মুশফিকুর রহিমকে। এরপর ফল কী হতে পারে? ১০০ তো দূরের কথা, টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের সুইংয়ের সামনে দলীয় অর্ধশতক হবে কিনা তা নিয়ে চলে কাটাছেঁড়া! এর পরের নাটকীয়তা তো সবার জানা। তবে এই জয়ে বোলারদের অবদানও কম নয়। ব্যাটিংসহায়ক উইকেটে তারা নিউজিল্যান্ডকে ২৬৫ রানে আউট করে দিয়ে মঞ্চটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। বোলারদের নৈপুণ্যের শুরুতে ব্যাটিং ধস। তারপর ব্যাট হাতে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ সৃষ্টি করলেন ইতিহাস। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫ উইকেটে পাওয়া এই জয়ে সেমিফাইনালের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল। এখন আজকের ম্যাচে ইংল্যান্ড যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারায় তবে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইলে উঠে যাবে বাংলাদেশ।

২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে বধ করে ইতিহাস লিখেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এবার সেই একই মাঠে রূপকথা রচনা করলেন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। সত্যিই কার্ডিফ সৌভাগ্যের শহর। সুখস্মৃতির শহর। রূপকথার শহরও বটে!

সর্বশেষ খবর