শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করতে হবে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করতে হবে

আবদুল লতিফ নেজামী

ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, নিরীহ মানুষ হত্যা, আত্মহনন, আত্মহত্যা জিহাদ নয়। ইসলামে এগুলোর অনুমোদন নেই। ইসলামে এগুলো বৈধ নয়। তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রকৃত জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সন্ত্রাস যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। সরকার জঙ্গিবাদ দমনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দমন করছে। যারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করছে, তাদের আইনি সহায়তা দিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবনে ফিরে আসতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। এগুলো অবশ্যই ভালো উদ্যোগ এবং শান্তি শৃঙ্খলার জন্য ইতিবাচক। ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় একথা বলেন তিনি। এ সময় সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা, সরকারের সফলতা ব্যর্থতাসহ নানান বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন। দলের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন জানতে চাইলে লতিফ নেজামী বলেন, সারা দেশে দলটির জোর কর্মতৎপরতা রয়েছে। সাংগঠনিক অবস্থা ভালো। সংগঠন গোছাতে জোট নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন জেলা সফর করছেন। এতে নেতা-কর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত। ২০-দলীয় জোট ছাড়লেন কেন জবাবে বলেন, জোট গঠনের শুরুতে লিয়াজোঁ কমিটি সক্রিয় থাকলেও পরবর্তীতে এর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। মাঝে মাঝে দু-একটি বৈঠক হতো গুলশান কার্যালয়ে। এভাবে একটি জোট চলতে পারে না। আমাদের সাংগঠনিক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। পরিস্থিতিতে দলের করণীয় বিষয়ে দেশের সচেতন শীর্ষ উলামায়ে কেরাম ও বিভিন্ন জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে মতামত চাওয়া হয়। অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম ও জেলা নেতৃবৃন্দ ২০-দলীয় জোট ছেড়ে সারা দেশে ইসলামী ঐক্য জোটকে শক্তিশালী করার মতামত ব্যক্ত করেন। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লতিফ নেজামী বলেন, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জোটভুক্ত হয়ে অংশ নিয়েছিলাম। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা অংশ নেইনি। এখন যেহেতে কোনো জোটে নেই তাই ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। ইসলামী ঐক্যজোট অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি নির্বাচনী জোট গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছি। জোট হলে হয়তো সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারও কারও সঙ্গে কথা-বার্তা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে লতিফ নেজামী বলেন, আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। খুন, চুরি-ডাকাতি, জবর দখল, নারী ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সরকার সাধ্যমতো আইন শৃঙ্খলার উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করছে। আমাদের উচিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করা। শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস, অরাজকতাও শিক্ষাব্যবস্থার বিরাট  ক্ষতি সাধন করছে। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬-এর বিতর্কিত কয়েকটি ধারা শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এগুলোর সমাধানের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন করছি। আশা করি সরকার বিষয়টি উপলদ্ধি করে সবার উপযোগী একটি সুন্দর শিক্ষানীতি ও জাতীয় শিক্ষা আইন জাতিকে উপহার দেবে। সরকারের ব্যর্থতা ও সফলতা প্রসঙ্গে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল প্রকল্প, তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসবকে সফলতা হিসেবে মনে করছি। কিন্তু ব্যাংকিং খাতে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি, বাজেটে বিভিন্ন পণ্য ও খাতে কর আরোপ, ব্যাংক আমানতের ওপরে আবগারি শুল্ক আরোপ ইত্যাদি সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা। বিএনপির রাজনীতি প্রসঙ্গে বলেন, তাদের কর্মপন্থাই বলে দিবে তাদের ভবিষ্যৎ গন্তব্য কোনটি। রমজানে সারা পৃথিবীতে দ্রব্যমূল্য কমে, আমাদের বাড়ে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রমজানে পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশে পণ্যের দাম কমে, যাতে মানুষের সুবিধা হয়। ব্যবসায়ীরা কম লাভে পণ্য বিক্রি করেন। কিন্তু আমাদের দেশে হয় বিপরীত। এখানে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে বলে হিউমার ছড়ানো হয়। মূলত রমজানে সংযম নয়, আত্মশুদ্ধি নয় একদল ব্যবসায়ীর জন্য এটি আখের গোছানোর মাস। অবৈধ আয়ের মাস। এসব অসাধু ব্যবসায়ীর তৎপরতা বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে যাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব কি না এটা ইসলামী ঐক্যজোটের মজলিশে শূরা ঠিক করবে। ইভিএম পদ্ধতি প্রসঙ্গে বলেন, ইভিএম পদ্ধতিটা আমাদের দেশে নতুন হলেও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ব্যবস্থা বিদ্যমান। এ নিয়ে আরও যাচাই- বাছাই, আলোচনা-পর্যালোচনা হোক। যদি ইতিবাচক ফলাফল আসে, তাহলে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে তো সমস্যা দেখছি না।

সর্বশেষ খবর