শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

সম্পদ শুদ্ধ হয় জাকাতে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

সম্পদ শুদ্ধ হয় জাকাতে

জাকাত ইসলামের অন্যতম মৌলিক আর্থিক একটি ইবাদত। জাকাত আদায় করলে সম্পদ পরিশুদ্ধ ও বরকতময় হয়। জাকাত ধনীদের সম্পদে গরিবদের অধিকার। এজন্য জাকাত দানকারীদের নিজ দায়িত্বে জাকাতের সম্পদ গ্রহীতাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের (ধনীদের) ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ (সূরা আজ-জারিয়াত : ১৯)। এটি এক বছরে একবার আদায়যোগ্য ইবাদত হলেও সাধারণত তা রমজান মাসেই আদায় করা হয়। আর সেটিই যৌক্তিক। কারণ প্রথমত, রমজান সহানুভূতির মাস। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাস।’ (ইবনে খুজায়মা : ১৮৮৭)। কাজেই রমজানে জাকাত আদায় করলে জাকাতের মাধ্যমে সহানুভূতি প্রকাশ করা যায়। দ্বিতীয়ত, রমজানের কারণে বেশি মাত্রায় নেকি পাওয়া যায়। রসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানে যে একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’ (শুয়াবুল ইমান : ৩৬০৯)। তৃতীয়ত, জাকাত হিজরি বর্ষ হিসেবে আদায় করতে হয়। আর সাধারণত রমজান ছাড়া অন্য হিজরি মাসের হিসাব-কিতাব অতটা জানা থাকে না। কাজেই তাত্ত্বিকভাবে রমজানের সঙ্গে জাকাতের সম্পর্ক না থাকলেও ব্যবহারিক সম্পর্ক যথেষ্ট রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত আদায় কর।’ (সূরা বাকারা : ১১০)। ‘দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা জাকাত দেয় না এবং আখিরাতে বিশ্বাস করে না।’ (সূরা হা-মিম আস সাজদা : ৬-৭)। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা (জাকাত) গ্রহণ করুন। এরপর আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।’ (সূরা তাওবা : ১০৩)। জাকাতের নিসাব হলো, সাড়ে ৭ ভরি সোনা (৮৭ দশমিক ৪৫ গ্রাম) বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম)। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১ ভরি ১১ দশমিক ৬৬ গ্রাম (বা ১ তোলা); অথবা সমমূল্যের ক্যাশ; যে কোনো সময় ভাঙানো যায় এমন বন্ড বা সঞ্চয়পত্র অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে। অবশ্য এ পরিমাণ সম্পদ এক বছর স্থায়ী হতে হবে। বর্তমান বাজারে ১ ভরি রুপার পাইকারি দর ৬০০ টাকা। সে হিসেবে জাকাতের নিসাব দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। এমন অর্থের অধিকারী সবাই জাকাত আদায় করলে দেশের অর্থনীতি অন্য রকম হতে পারত; ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হতো না। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় ধনী ও গরিব আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তার অর্থ এই নয় যে, একজন সম্পদের পাহাড় গড়বে, আর অন্যজন খাবারের জন্য লড়াই করবে। একজন গ্রামে ও শহরে প্রাসাদ নির্মাণ করার পর বিদেশের মাটিতে সেকেন্ড হোমের হিসাব মেলাবে, আর অন্যজন রাস্তার পাশে ঝুপড়িতে রাত কাটাবে। বরং পৃথিবীর সব মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য যা দরকার, আল্লাহ তা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আল কামার : ৪৯)। সুষম বণ্টনের অভাবে ধনী ও গরিবের মধ্যে এমন বৈষম্য সৃষ্টি হয়। জাকাত এ বৈষম্য দূর করে সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এ রহমতের মাসে এই দিকটি আমাদের গভীরভাবে বোঝা দরকার। নামাজের পাশাপাশি বিত্তশালীদের জাকাত দিতে যেন কার্পণ্য না আসে। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর