শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাহাড় এখন মৃত্যু উপত্যকা

রাঙামাটিতে এক সেনাসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক ও রাঙামাটি প্রতিনিধি

পাহাড় এখন মৃত্যু উপত্যকা

উদ্ধারে ব্যস্ত সেনা সদস্যরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বৈচিত্র্যময় পাহাড় এখন মৃত্যুপুরী। চারদিকে কান্নার শব্দ। আতঙ্কে ঘুমহারা পাহাড়ের মানুষেরা। দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। স্বজনহারা মানুষগুলোর আর্তনাদে ভারি পরিবেশও। পাহাড়কে ঘিরে যে মানুষগুলো দেখেছিল বেঁচে থাকার স্বপ্ন, সে পাহাড় কেড়ে নিয়েছে শত শত প্রাণ। পাহাড়ের ধ্বংসযজ্ঞ বিলীন করেছে কয়েক হাজার পরিবারের ঘর, বাড়ি, ফসল, পশুপাখি। জানা গেছে, রাঙামাটিতে এখন স্বজনহারা পরিবারের সংখ্যা ২০। বৃষ্টি থামার পর সবাই ছুটে যাচ্ছে পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপে। এখন রাঙামাটির সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি আসার জন্য মূল সড়কের বাইরেও দুটি বিকল্প সড়ক রয়েছে। কিন্তু তিনটি সড়কই পাহাড়ধসের কারণে বন্ধ। গত মঙ্গলবার ভোর থেকে বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলার অন্তত ৩০টি স্থানে পাহাড়ধসের খবর পাওয়া গেছে। এই ৩০টি স্থানের বাইরে আরও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১৪৫টি পাহাড়ধসের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। রাঙামাটি শহরের মানিকছড়ি রাঙমাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শালবন এলাকায় ১০০ মিটার সড়কে ৩০ ফুট জায়গা পাহাড়ের নিচে তলিয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ১০০ মিটার রাস্তা ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীরে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন রাস্তা এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৃষ্টি হলে ক্যাম্পের পাহাড়ে পুনরায় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এই ক্যাম্পের পাহাড়ে রয়েছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির বিশাল টাওয়ার। এই সড়কের ওপর পাহাড়ের মাটির স্তূপ সরানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাঙামাটি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর রাকিবুল হাসান জানান, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়া এলাকা পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে ঘাগড়া এলাকা থেকে মানিকছড়ি পর্যন্ত বেশ কিছু অংশে সড়ক ভেঙে পাহাড়ের নিচে চলে গেছে। এসব সড়ক সংস্কার করা সম্ভব না। তবে বিকল্প সড়ক তৈরি করা যাবে। অন্যদিকে রাঙামাটি শহরে গত ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শহরে দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার পানি সংকট । সেই সঙ্গে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে। শহরের সব কটি তেলের পাম্প ও খুচরা তেলের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এসবে তথ্য জানতে গঠন করা হয়ে বিশেষ কমিটি।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানান, সমুদ্র নিম্নচাপ চলছে। আমরা জানতে পেরেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩ নং সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। সে জন্য হালকা ও মাঝারি কিংবা ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। আর বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ধসের সংখ্যাও বাড়তে পারে। তার জন্য সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে।

এদিকে, ঘরহারা মানুষগুলোর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া রাঙামাটির বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিহার, বেতার কেন্দ্র, পাসপোর্ট অফিস, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তবে আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়া সাধারণ মানুষগুলোর মধ্যে বিপর্যয় নেমে এসেছে। দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার ও পানি সংকট।

এক সেনাসহ তিন মরদেহ উদ্ধার : রাঙামাটিতে পাহাড় ধস ঘটনার তৃতীয় দিনে এক সেনা সদস্যসহ আরও পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যসূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর থেকে শহরের মানিকছড়ি এলাকায় পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযানে নামেন সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ভোর থেকে উদ্ধার অভিযানের পর বেলা ১২টার দিকে পাওয়া যায় নিখোঁজ সৈনিক আজিজুরকে। প্রায় ১২ ফুট মাটি খুঁড়ে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে এ জেলায় পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৮ জন। এদিকে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। তালিকা অনুযায়ী, রাঙামাটিতে এখনো নিখোঁজ রয়েছে ২০টি পরিবার। তাদের মধ্যে কিছু পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে। আর কিছু পরিবারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। গতকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাঙামাটি জেলায় নিহতদের তালিকায় রয়েছেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, করপোরাল আজিজ, সৈনিক মো. শাহীন ও মো. আজিজুর রহমান, নাইমা আক্তার (৬), রুমা আক্তার (২৫), নুরী আক্তার (৩), হাজেরা বেগম,  সোনালী চাকমা, অমিয় চাকমা (১০), আইয়ুশ মল্লিক (২), চুমকি মল্লিক (২২), লিটন মল্লিক (২৮), মিল্টন/মিন্টু ত্রিপুরা (৪৫), মিলি চাকমা (৫৫), ফেন্সী চাকমা, মাহবুব আলম (৫০), শাহীন (২৫), হিরনবী চাকমা, সীমা চাকমা (৩২), সুজন চাকমা (৭), বন্যা চাকমা (৩), জুরি চাকমা (১০), কামাল (৩০), আব্বাস আলী (৫৫), শাহ আমাল (৫৫), শফিকুল ইসলাম (২৫), প্রিয়তোষ চাকমা, মায়াধন চাকমা, মধুমিতা চাকমা (৩৫), সুমন দাশ (২৫), হিল আনসার সদস্য জিয়া (৪০), সবুরি বেগম (৩৫), বৃষ্টি (৭), ব্রিগেড মালী অবদুল জলিল (৪০), শরীফ (২৫), রুনা বেগম (১৭), সোহাগ (১৪), কমলা বেগম (২১), সুজিতা চাকমা (৩২), সৌম্য চাকমা (৫),  কেমা চাকমা (৩৫), কিনামণি চাকমা (৭২), প্রিয়তম চাকমা (১২), বিপুলি চাকমা (৩০), রুপালী চাকমা (৩৫), জুঁইমণি চাকমা (১৪), জুমজুমি চাকমা (০৪), কন্তি সোনা চাকমা (৩৫), সান্ত্বনা চাকমা (৬), কিরণ দেওয়ান (৩৫), হ্যাপি চাকমা (৩৫), তৃষামণি চাকমা (১৭) ও জয়েস চাকমা (০৯)। এ ছাড়া কাউখালী উপজেলার বৈশাখী চাকমা (৭), ইসাহাক মিয়া আশিক (৩০), মনির (৩০), ফাতেমা বেগম (৬০), অংচিং মারমা (৫২), আশেমা মারমা (৩৪), তেমা মার্মা (১২), ক্যাথাইচিং মার্মা, নুসুমা বেগম, নুরজাহান বেগম (৩০), দবির উদ্দিন (৯০) মণিবালা চাকমা (৫০), বৃষমোহন চাকমা (৪০), নিশিচন্দ্র চাকমা (৬০), লায়লা বেগম (২৮), খোদেজা বেগম (৫০), শোভা রানী চাকমা (৫৫), লাইপ্রু মারমা (৬৫), কমলধন চাকমা (২৭), নমিতা চাকমা (২১), সোহেল চাকমা (৭), আবদুর রশীদ (৫০), তৃষ্ণামণি চাকমা (১১), ফুল মোহন চাকমা, কাপ্তাই উপজেলার নোমান (৫), রুবি (২১), নুরুন্নবী (৫০), রমজান আলী (৫), আবুল হোসেন (৩২), রবি তঞ্চঙ্গ্যা (৩৩), উচিংনু মারমা (৪০), নিতুই মারমা (৬), রোহান (৭), চামাউ মারমা (২৫), অং এম্রপ্রু মারমা (৪৫), আইপ্রু মারমা (১৫), চিং মিউ মারমা (১৫), প্রানুচিংমা (৬), ইকবাল (৩৪), উবাইনমা মারমা (৬২), মংনু মারমা (৫৭), বিলাইছড়ি উপজেলার মো. শহীদ, রেঞ্জু ও জুরাছড়ি উপজেলার চিত্রাঙ্গমুখী চাকমা (৫০) ও বিশ্বমণি চাকমা (১০)।

কমিটি গঠন : রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলোর মধ্যে রয়েছে—ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ কমিটি, ত্রাণ বিতরণ কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি, আশ্রয়কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি, সার্চ কমিটি ও পুনর্বাসন কমিটি।

দুই সেনা কর্মকর্তার দাফন : আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় নিহত মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক ও ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্তর দাফন গতকাল বনানী সামরিক কবরস্থানে সামরিক মর্যাদায় সম্পন্ন হয়। সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) মেজর জেনারেল মো. নাজিম উদ্দীনসহ নিহতদের আত্মীয়স্বজন ও ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বগুড়ায় দাফন : বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড়ধসে নিহত সেনাসদস্য শাহীন আলম চঞ্চলের (৩২) মরদেহ বগুড়ার আদমদীঘির ধনতলা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১২টার সময় সড়কপথে সেনাসদস্যদের সুসজ্জিত একটি দল শাহীন আলমের লাশ নিয়ে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুরের ধনতলা গ্রামে পৌঁছায়। সেনাসদস্যদের একটি পিকআপে করে মরদেহ বহন করা হয়। এ সময় আরও একটি সেনাট্রাক বহরে ছিল। আদমদীঘি থানার ওসি শওকত কবির জানান, পাহাড়ধসে নিহত সেনাসদস্যের লাশ তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর স্থানীয় ধনতলা মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পাহাড়বাসীদের প্রয়োজন পরিকল্পিত পুনর্বাসন : আর্থিক সঙ্গতি না থাকার কারণেই কিছু মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করছেন। বাস্তুহারা এই মানুষগুলোর বেশির ভাগই ডোমেস্টিক রিফিউজি। তারা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে এখানে বাধ্য হয়ে বাস করছেন। এদের পুনর্বাসনের জন্য কম খরচে সরকারি আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকায় মানুষ যাতে ঘরবাড়ি তৈরি করতে না পারে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। নতুন জেগে ওঠা দ্বীপে এই মানুষদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া প্রভাবশালীদের কাছ থেকেও পাহাড়কে দখলমুক্ত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ পার্বত্য এলাকার মানুষদের পুনর্বাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশেষজ্ঞরা এসব মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হুমায়ূন আখতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা থাকছেন তাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই বলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এখানে বসবাস করেন। সরকারের এসব মানুষের পুনর্বাসনের জন্য উপায় বের করতে হবে। সেই অসহায় মানুষগুলোর জমি নেই বলেই তারা কোনোরকম খুঁটি গেড়ে দুর্গম পাহাড়ে বা কাছাকাছি বাস করছেন। ’৭০-এর দশকে সমতলের নিম্ন শ্রেণির মানুষদের এসব এলাকায় বসবাসের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এটি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ দুটোই নষ্ট হচ্ছে। পার্বত্য এলাকাগুলোতে এখন আদিবাসীদের চেয়ে বাঙালিদের বেশি থাকতে দেখা যায়। সরকারের উচিত সেই এলাকার আদিবাসীদের গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা। পার্বত্য এলাকায় যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকছেন তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে। কম খরচে সরকারিভাবে এ বাস্তুহারাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ঝুঁকি নিয়ে যারা পার্বত্য এলাকায় কোনো রকমে থাকছেন তারা এ জন্য কত বড় বিপদে যে পড়তে পারেন তা বিবেচনা না করেই সেখানে বাস করছেন। যদি কোনো এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁঁকি থাকে সেক্ষেত্রে সেই এলাকায় বসবাসকারীদের আগেই সতর্ক করে দিতে হবে। একই সঙ্গে সেই এলাকার বসবাসকারীদের সতর্ক করে দ্রুত স্থানটি থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিতে হবে। তবে এর আগে ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকায় মানুষ যাতে ঘরবাড়ি তৈরি করতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর যদি বাড়ি তৈরি করতেই হয় তবে দুর্যোগ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তবেই বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে যাতে ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি না হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন বলেন, পার্বত্য পাহাড়ি এলাকায় ডোমেস্টিক রিফিউজিরা গিয়ে বসবাস করছে। এরা মূলত নদীভাঙন, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি দুর্যোগের শিকার হয়ে পাহাড়ে বাস করে। দেশের অন্য কোথাও থাকার স্থান পান না বলেই তারা এমনটি করেন। আর এটি গত ৪ দশক ধরেই হয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। পাহাড়ে যাতে মানুষ বসতি গড়তে না পারে এ জন্য পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। এখানকার বাসিন্দারা যাতে পাহাড়ের নিচে সমতল ভূমি ও নতুন জেগে ওঠা কিছু দ্বীপে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে কক্সবাজারের দক্ষিণে এবং কুতুবদিয়ার নতুন যে দ্বীপ জেগে উঠেছে সেখানে এই বাস্তুহারাদের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর এখানে যারা থাকেন তাদের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। এ জন্য সরকারকে পরিকল্পনার মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি ও মজুরিভিত্তিক কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিকভাবে বেশ কিছু লোক পাহাড়ে আবাসন ব্যবস্থার চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। সরকারের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে নিজ নামে পাহাড় কিনেছেন। এ জন্য পাহাড়কে বেআইনি দখলমুক্ত করার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর