শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

চরম উৎকণ্ঠায় ১১৭ রুটের যাত্রীরা

ঈদ যাত্রা

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের যানজট নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। এ দুটি মহাসড়কের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান হকার ও ভাসমান দোকানিদের দখলে। এসব স্থান দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চার লেনের কাজ, খানাখন্দ ও জলাবদ্ধতা নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে যাত্রীদের। গতকাল ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সরেজমিন দেখা গেছে রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখ টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত তীব্র যানজট। গাড়ি এগোতেই চায় না। ভোগড়া বাইপাস থেকে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা হয়ে টাঙ্গাইল মির্জাপুর পর্যন্ত অন্তত ৪৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে তীব্র যানজট দেখা গেছে। এ সময় অনেক যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করতে দেখা যায়। ভোগড়া থেকে চন্দ্রা যেতে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। আর একটু বৃষ্টিতেই টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত এই সড়কে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে পড়ে। পুরো সড়ক পানিতে একাকার হয়ে যায়। ফলে বেড়ে যায় ভোগান্তি।

হানিফ পরিবহনে রংপুর যাওয়ার টিকিট কিনেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক একরাম। তিনি বলেন, ‘গত বছর যানজটের কারণে ভোগড়া বাইপাস থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় পার হতে ৪ ঘণ্টারও বেশি লেগেছিল। এবার যে কী হয়, তাই ভাবছি।’ একতা পরিবহনের চালক আবদুস সালাম জানান, ‘মহাসড়ক চার লেনের কাজ চলছে। এমনিতেই মহাখালী থেকে ভোগড়া বাইপাস হয়ে চন্দ্রা যেতে ২-৩ ঘণ্টা লেগে যায়। ঈদে গাড়ির অনেক চাপ থাকবে। গত বছর ঈদের আগের দিন সকালে যাত্রীদের রাজশাহী পৌঁছে দিয়ে রাতে ঢাকায় ফিরতে পারিনি। নিজের পরিবার ছেড়ে বাসে বসেই ঈদ করতে হয়েছে।’ বেসরকারি চাকরিজীবী মান্নান বলেন, ‘রংপুরের গ্রামের বাড়ি ঈদ করার চিন্তা করছি। কিন্তু উত্তরা থেকে চন্দ্রা পেরোতেই ৪-৫ ঘণ্টা লেগে যায়।’ একটি গার্মেন্টের ম্যানেজার মিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর তো ঈদের আগেই যানজট। আর ঈদের সময় যে কী হবে ভাবাই যায় না।’ পোশাকশ্রমিক নাহিদা বেগম বলেন, ‘ভাবছিলাম, বাবা-মার সঙ্গে বাড়িতে ঈদ করব। কিন্তু রাস্তার যে অবস্থা তাতে মনে হয় এবার আর বাড়ি যাওয়া হবে না।’ একই কথা বললেন শ্রীপুর-মাওনার পোশাক কারখানার সুপারভাইজার ইমরান— ‘স্ত্রী-সন্তানের বায়না। বাড়ি গিয়ে ঈদ করতে হবে। কিন্তু এ বছর রাস্তার যে অবস্থা দেখছি তাতে মনে হয় ঈদে বাড়ি যাওয়া হবে না।’ চারটি মহাসড়কের মিলনস্থল জয়দেবপুর চৌরাস্তায় হকার, ভাসমান দোকানি আর সাধারণ যাত্রীর সমাগমে ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া জয়দেবপুর চৌরাস্তায় লেগুনা, থ্রিহুইলার স্কুটার, সিএনজি ও রিকশাস্ট্যান্ডের পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহন থেকে যাত্রী ওঠানামায় অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চৌধুরীবাড়ী, ভোগড়া, বাসন সড়ক, বোর্ডবাজার এলাকাসহ টঙ্গী বাজার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ধীরগতিতে পরিবহন চলাচল করায় যানজট হয়। এ ছাড়া এ মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানে দুই দিকেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে বাসচালকদের বাধ্য হয়েই মূল সড়কের ওপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো করতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতার জন্য মহাসড়কের ওপর অবাধে সিএনজি, ইজিবাইক, অটোরিকশা ও রিকশার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। চন্দ্রা ত্রিমোড় ও কোনাবাড়ী এলাকায় চলছে চার লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ। এ কারণে বন্ধ রয়েছে কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়ক। ফলে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোর কালিয়াকৈরের দিকে এগিয়ে ইউটার্ন নিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। ফলে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইল ও ঢাকাগামী যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এ ছাড়া ভোগড়া বাইপাস থেকে নাওজোর পর্যন্ত চার লেন কাজের জন্য নিত্যদিন যানজট লেগেই থাকছে। কোনাবাড়ী এলাকায়ও ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের জন্য এক লেনে যানবাহন চলাচল করছে। দুর্ভোগের শেষ নেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়েকর শফিপুর সিনাবহ এলাকায়ও। এ ছাড়া মির্জাপুর-দেওহাটা রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভারের কাজ চলায় এ মহাসড়কে যানজট লেগে থাকছে। গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী বাজার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ২০টি স্থানে পরিবহনের ইউটার্নের সুযোগ রয়েছে। জেলা ট্রাফিক পুলিশের অপর্যাপ্ত জনবলের কারণে এসব স্থানে পরিবহনের জটলা লেগেই থাকছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঈদের আগে জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ সড়ক ও মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় দিকে সুষ্ঠু ড্রেনেজব্যবস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিশ্চিত করবে। ওয়ার্ডগুলোয় আগে সুষ্ঠু ড্রেনেজব্যবস্থা করেই সড়ক সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। তবে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর