শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
লন্ডনের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড

মৌলভীবাজারের একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

মায়াভরা হাসিমুখের এই হোসনা বেগম। তানিমা নামে ডাকে সবাই। বয়স মাত্র ২২। পরিবারের সবার কনিষ্ঠ, সবার অতি আদরের তানিমা। আগামী ২৯ জুলাই মা-বাবার পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল এই বাংলাদেশি তরুণীর। কিন্তু ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড সবকিছু কেড়ে নিল। স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তানিমা তার মা, বাবা ও দুই ভাই— সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেলেন।

গত মঙ্গলবার রাতে হাজারখানেক লোকের আবাস গ্রিনফেল টাওয়ার নামের একটি বহুতল আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ভবনের ১৭ তলার ১৪৪ নম্বর ফ্ল্যাটে কমরু মিয়া স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করতেন। কমরু মিয়ার বাড়ি মৌলভীবাজারের আখাইলকুড়া ইউনিয়নের খৈলসাউড়া গ্রামে। লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক মৌলভীবাজারের বাসিন্দা মুনজের আহমেদ চৌধুরী গতকাল লন্ডন থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া প্রতিবেদনে জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তানিমা ছাড়াও মারা গেছেন বাবা কমরু মিয়া (৮২), তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৬৫), দুই ছেলে আবদুল হানিফ (২৯) ও আবদুল হামিদ (২৬)। তানিমার খালাতো ভাই আজিজুল হক জানান, মঙ্গলবার রাত স্থানীয় সময় ৩টার দিকে তার কথা হয় কমরু মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তখন তারা আজিজুলকে জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। একপর্যায়ে সবাই বেঁচে থাকার আশা নিয়ে বাসার বাথরুমে আশ্রয় নেন। এরপর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। আজিজুল জানান, তানিমার বিয়ের শাড়িসহ সব কেনাকাটা শেষ হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য হল বুকিং নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু তার আর বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না। মঙ্গলবার ভোরে লন্ডনের গ্রিনফেল টাওয়ারের লেলিহান বিভীষিকাময় আগুনে ভবনটির আর সব হতভাগ্য বাসিন্দাদের মতো পুড়ে গেছেন তানিমা ও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা। একই সঙ্গে তানিমার সব স্বপ্নও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আজিজুল হক আরও জানিয়েছেন, সাহরি আর ফজরের নামাজের পর সেই ধেয়ে আসা যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর দুয়ারে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনো পথও ছিল না তাদের। শেষবার ফোনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে লন্ডনের অন্য আরেকটি বাড়িতে বসবাসরত বড় ভাই আবদুল হেকিমের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় তানিমা বলেন, তারা নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন। ভাইয়ের কাছে দোয়া চেয়ে তানিমা বলছিলেন, দোয়া কর যেন কিছুটা কম কষ্টে মৃত্যু হয়। এদিকে লন্ডনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত কমরু মিয়ার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের খৈলসাউড়া গ্রামে তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

মুনজের আহমেদ চৌধুরী গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সর্বশেষ তথ্যে জানিয়েছেন, লন্ডন সময় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ভবনটি থেকে জীবিত আর কাউকে উদ্ধারের আশা নেই। এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে লন্ডন পুলিশ। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর