শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দ হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকরের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খুনের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে উভয় দেশে ল ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকাল টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শফিকুল ইসলাম শিমুলের (নাটের-২) প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। মন্ত্রী জানান, ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খুনিদের ছবিসংবলিত তথ্য প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৪ সালে আইনমন্ত্রীকে সভাপতি করে একটি টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করা হয়। টাস্কফোর্স দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের অবস্থান চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

আট বছরে ৬৪৯ জন পুলিশ সদস্য নিহত : এমপি পিনু খানের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত আট বছরে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ৩ হাজার ৯৬৮ পুলিশ সদস্য আহত এবং ৬৪৯ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে দায়িত্বরত অবস্থায় ৩ বিজিবি সদস্য নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতার সময়ই সবচেয়ে বেশি পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী ২০০৯ সালে পুলিশ সদস্য নিহত হন ২৮ জন, আহত হন ১২৫ জন। ২০১০ সালে নিহত ৪০, আহত ১৭৬; ২০১১ সালে নিহত ৫১, আহত ১৯০; ২০১২ সালে নিহত ৩৮, আহত ২০৫; ২০১৩ সালে নিহত ১০৯, আহত ২ হাজার ২১০; ২০১৪ সালে নিহত ১০২, আহত ২৮১; ২০১৫ সালে নিহত ১২৬, আহত ৩৭২; ২০১৬ সালে নিহত ১২৮ এবং আহত হন ২৫৯ জন। চলতি বছর মে পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৭ জন পুলিশ সদস্য এবং আহত হয়েছেন ১৫০ জন।

জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ রোল মডেল : এমপি সফুরা বেগমের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকার সন্ত্রাসী হামলাকারীদের খুঁজে বের করার ব্যাপারে যে দৃঢ়তা দেখাচ্ছে তাতে দেশ ও বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে জঙ্গিসম্পৃক্ততা ও অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে এ পর্যন্ত সাতটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্তব্যরত অবস্থায় বিএনপি-জামায়াত-শিবির-হেফাজতের দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসী জঙ্গিদের হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দুজনের পরিবারকে ১৬ লাখ, ১৭ জনের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা করে, চারজনের প্রতি পরিবারকে ৮ লাখ এবং অন্য দুজনের পরিবারের অনুকূলে ৫ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ মের হেফাজতের তাণ্ডবে তাদের কর্মীদের দ্বারা আহত কনস্টেবল মোহাম্মদ পিয়ারুল ইসলামকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল। তার চিকিৎসা বাবদ প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ও ত্রাণ তহবিল থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহত ও আহত পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন কল্যাণ তহবিল থেকে বিধি মোতাবেক আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে এবং পারিবারিক পেনশন দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ২০১৩ সালের ৬ মে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে হেফাজত কর্মীদের আকস্মিক হামলায় নিহত বিজিবির দুই সদস্যের প্রতিটি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ, বিজিবি মহাপরিচালকের তরফ থেকে ৫ লাখ টাকা ও বিজিবির উত্তরা মার্কেটে প্রতিটি পরিবারকে একটি করে দোকান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিবার দুটিকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকেও ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর