শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
বরকতময় মাহে রমজান

মক্কা বিজয় দিবস আজ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আজ রমজানুল মোবারকের বিশতম দিবস। ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যময় একটি ঘটনার সাক্ষী রমজানের এই দিনে। শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকারী এ ঘটনাটি হলো মক্কা বিজয়। ইসলামের নবী (সা.) হিজরতের অষ্টম বছরে ১০ হাজার মুসলিম সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে মক্কা নগরী জয় করেছিলেন এই দিনে। আজ থেকে ১৪২৮ বছর আগে মহানবী (সা.) তৎকালীন আরব ভূমির সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জনপদে বিজয় নিশান উড়িয়ে ছিলেন। এ ঘটনা ছিল মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের, সাফল্যের ও সন্তুষ্টির। একপর্যায়ে মুসলমানদের পক্ষে অসহনীয় হয়ে যায় অমুসলমানদের আচরণ। জীবন রক্ষা করাই তাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমতি আসে হিজরতের। সুদূরের পল্লী ইয়াসরিব থেকে আহ্বান আসে ইসলামের নবী ও অনুসারীদের। শেষ নবীকে আশ্রয় দেওয়ার ও বরণ করে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে সেখানকার আওস ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরা। নবুওয়াতের ১৩তম বছরে মহানবী (সা.) মক্কা ছেড়ে ইয়াসরিবে হিজরত করেন। ইয়াসরিবের নাম হয়ে যায় মদিনাতুন নবী বা সংক্ষেপে মদিনা। এখান থেকে ইসলামের প্রসার ঘটে দ্রুত গতিতে। মক্কায় কোরাইশ গোত্র আরবে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় তাদের বিরোধিতা ছিল ইসলামের প্রসারে একটি বড় অন্তরায়। তাছাড়া তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতাও চালায়। বদর, ওহুদ, আহজাব ইত্যাদি যুদ্ধে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে মুসলমানদের। তবে এর মধ্যে খোদায়ী মদদের ক্যারিশমাও প্রত্যক্ষ করেছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আসে মক্কা বিজয়ের পালা। তবে মক্কা জয়ের জন্য মহানবী (সা.) এর অভিযান পরিচালনার পেছনে কাজ করেছে হুদায়বিয়ার সন্ধি। হিজরি ষষ্ঠ বছরে সম্পাদিত এ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছিল মক্কার কুরাইশরা। মহানবী (সা.) প্রতিকার চেয়েছিলেন নইলে সন্ধির সমাপ্তি হয়েছে মনে করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কুরাইশরা কোনো সাড়া না দেওয়ায় তিনি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। অষ্টম হিজরির রমজান মাসে এ অভিযান পরিচালিত হয়। ২০ রমজান মহানবী (সা.) মক্কায় প্রবেশ করেন। প্রায় রক্তপাতহীন সে অভিযানে ইসলামের নবীর পতাকা সেখানে সমুন্নত হয়। আর সত্য ধর্মের গৌরব প্রতিষ্ঠিত হয় আরবের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরীতে। হজরত ইবরাহিম খলিল আলাইহিস সালাম একক প্রভুর ইবাদতের জন্য যে বায়তুল্লাহ নির্মাণ করেছিলেন, তা ভরে ফেলা হয়েছিল মূর্তি দিয়ে। মহানবী (সা.) আল্লাহর ঘর থেকে ৩৬০টি মূর্তি অপসারণ করেন। আর এতদিন যারা ইসলামের শত্রুতায় সদা প্রস্তুত ছিল, তাদের জন্য ঘোষণা করেন সাধারণ ক্ষমা। শান্তি ও মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করলেন ইসলামের নবী (সা.)। তাই মক্কা বিজয়ের ঘটনা বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। আর সে কারণেই ২০ রমজান মুসলমানদের জন্য মহাগৌরবের কারণ। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর