সোমবার, ১৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
সংসদে আলোচনা

উচ্চহারে ভ্যাট শুল্কায়নে বহু পত্রিকা বন্ধ হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা গতকালও ভ্যাট এবং ব্যাংক আমানতে আরোপিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি অব্যাহত রেখেছেন। তারা বলেন, ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ না হলে বাজেটে ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে লাভ হবে না। উচ্চহারে ভ্যাট ও শুল্ক আরোপের ফলে দেশের গণমাধ্যমও সংকটের মুখে পড়বে। অনেক পত্রিকা এর ফলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাজেটে যেভাবে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে দেশের জনগণের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এই বাজেট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ভোগান্তি বাড়াবে। তারা ভ্যাট হ্রাস ও ব্যাংক আমানত থেকে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান। একই সঙ্গে ভ্যাটের কারণে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া জনগণকে দিশাহারা করে দিয়েছে। চালের দাম বৃদ্ধি ও নগরীর জলাবদ্ধতার জন্য সরকারের সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। বাজেট অধিবেশনে গতকাল আলোচনায় অংশ নিয়ে সদস্যরা এসব কথা বলেন। যথাক্রমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে কোরাম সংকটে অধিবেশন শুরু করতে দেরি হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যের অনুপস্থিতির কারণে অধিবেশন শুরু হয় আধা ঘণ্টা পর। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সংসদ ভবনে পৌঁছে সরাসরি অধিবেশন কক্ষে যখন পৌঁছেন, তখন অধিবেশন কক্ষে মাত্র ১৬ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী অধিবেশন শুরু করতে হলে ৬০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকতে হয়, যেটা কোরাম বলা হয়। পরে ১১টায় অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেট দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথনির্দেশ বলে উল্লেখ করেন। তবে ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্কারোপ প্রস্তাব প্রত্যাহার এবং বর্ধিত হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার আহ্বানও জানান তারা। আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক তাঁতশিল্পের ওপর ভ্যাটের হার কম ধরা, ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক কমানো, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও স্বাস্থ্য যন্ত্রপাতির ওপর নতুন ভ্যাট আরোপ না করায় তিনি অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) বলেন, বিএনপি যখন বলে পকেট কাটার বাজেট, তখন সন্দেহ হয়। দুর্নীতি কত প্রকার ও কীভাবে করতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছে বিএনপি। তাদের আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে অশুভ শক্তি অতীতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যাহত করেছে, আগামীতেও করবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অশুভ পাঁয়তারা লক্ষ্য করছি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।

আবগারি শুল্ক বাস্তবায়ন হলে দেশ থেকে ২০০ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাবে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ব্যাংকে সাধারণ মানুষের গচ্ছিত টাকার ওপরও নজর পড়েছে অর্থমন্ত্রীর। আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে জনমনে মারাত্মক অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটটি নির্বাচনমুখী হওয়া উচিত ছিল। সরকার যেভাবে ভ্যাটের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ নিয়ে দেশের মানুষ হতাশ, নির্বাক। কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, কেন চালের দাম সর্বনিম্ন ৫০ টাকা? কীভাবে এত বাড়ল, কীভাবে কমাবেন তা জানি না। নির্বাচন সামনে, অথচ সরকার মনে হয় নির্বিকার। শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার এবং ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়ে গেলেও সরকার কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নিয়ে দেশকে অনিবার্য সংকট ও সাংবিধানিক শূন্যতা থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু এবারের বাজেটে গাধা-খচ্চরের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলেও উচ্চহারে ভ্যাট ও শুল্কারোপের ফলে দেশের গণমাধ্যম অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে। অনেক পত্রিকা এর ফলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। জাসদের লুত্ফা তাহের বলেন, বাজেটে যেভাবে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে দেশের জনগণের মারাত্মক ক্ষতি হবে। তিনি ব্যাংক আমানত থেকে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, জ্বালাও-পোড়াও এবং অগ্নি সন্ত্রাসের মাধ্যমে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কারণে বিএনপি অনেক আগেই সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন জনগণকে বিভ্রান্ত করতে রূপকল্প দিচ্ছে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের আর কোনো দিন গ্রহণ করবে না। জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান বলেন, দুর্নীতি বন্ধ না হলে ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে লাভ হবে না। এই বাজেট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ভোগান্তি বাড়াবে। যার কাছে (অর্থমন্ত্রী) চার হাজার কোটি টাকা কিছুই ছিল না, তার কাছে এক লাখ টাকা বড় হয়ে গেল? কথায় কথায় রাবিশ, তার কথায় জনগণ হাসে, আমরাও হাসি। এটা বয়সের কারণে কি না জানি না। এই বাজেটকে ‘বেদনার বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে বেদনার অট্টহাসি’ বলে আখ্যা দেন। উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, দেশের দুই নেত্রীর বংশধর লন্ডনে বসবাস করেন। একজন নেত্রীর পুত্র দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, লুটপাটকারী ও সন্ত্রাসী। চোরের মতো লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বাস করছেন। অন্য নেত্রীর ভাগ্নি যুক্তরাজ্যের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন, আর তার কন্যা মনোবিজ্ঞানী, যিনি অসহায় প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে সারা বিশ্বের প্রশংসা ও স্বীকৃতি পাচ্ছেন।

আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের কামাল আহমেদ মজুমদার, ফরহাদ হোসেন, সৈয়দা সাহেরা মহসিন, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, সাবিনা আকতার তুহিন, আবদুল বাতেন, আলী আজম, হোসেন আরা লুত্ফা ডালিয়া, উম্মে রাজিয়া কাজল, জুয়েল আরেং, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, কামরুল আশরাফ খান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর