বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুরনো ভ্যাট আইনই থাকছে আরও দুই বছর

প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে আসছে সমাধান

মানিক মুনতাসির

সংসদ এবং সংসদের বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে অবশেষে আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন-২০১২ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার। এজন্য পুরনো ভ্যাট আইন-১৯৯১ আরও দুই বছর বহাল রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে অর্থবিভাগের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে। তবে নতুন আইনের যেসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তি রয়েছে- সেগুলো নিয়ে কাজ করছে অর্থবিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এজন্য নতুন ভ্যাট আইনের ভালো-মন্দ এবং বাস্তবায়ন করা না করার বিষয়ে আগামী ২৮ জুন সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই ব্যবসায়ীদের বিরোধিতাকে আমলে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী জনগণের কাঁধে ভ্যাটের বোঝা না বাড়াতে বাজেট পেশের আগে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশাল বাজেটের ঘাটতি মেটাতে এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে নতুন ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। 

সূত্র জানায়, শুধু ভ্যাট আইনই নয়, ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী এবং সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের ওপর বর্ধিত আবগারি শুল্ক হার কমানোর বিষয়েও সংসদে ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন, এটা কমানো হবে। এবং এই শুল্কের নামও পরিবর্তন করা হবে। এদিকে অর্থমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, ভ্যাট আইনে কি কি সংশোধনী আসবে, নতুন আইন থাকবে কিনা- এসব বিষয়ে আগামী ২৮ জুন পরিষ্কার করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। অর্থবিভাগের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভ্যাট আইন নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য চলে গেছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের জন্য (দলের) এটা কোনোভাবেই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। এজন্য আইনটির বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পক্ষান্তরে তিনি এটাও বলেছেন, ভ্যাটের হার কত হলে জনভোগান্তি হবে না। ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক ভ্যাটের হার নির্ধারণ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে তাকে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে বলেছেন, সরকার জনকল্যাণে কাজ করছে এটা জনগণকে বোঝাতে হবে কাজের মাধ্যমেই। অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায় করতে হবে, ভ্যাট বাড়াতে হবে, কর এবং করজাল বিস্তৃত করতে হবে। কিন্তু জনগণের ভোগান্তি হতে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। ১৫ শতাংশ ভ্যাটের বোঝা সরাসরি জনগণের ঘাড়ে চাপালে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হবেন। যার প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনে। ফলে নতুন এই ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে আরও সময়ের প্রয়োজন।  অর্থবিভাগের অপর একটি সূত্র জানায়, নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত না করে বাস্তবায়ন করলে কি কি সংশোধনী আনা যেতে পারে এ ধরনের একটি বিকল্প চিন্তাও করছে সরকার। সে বিষয়েও সংসদে বিশদ বক্তব্য তুল ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর