বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
পুঁজিবাজারের সুপারিশ

সময় না পাওয়ায় বিবেচনা করেননি অর্থমন্ত্রী

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কর অব্যাহতিসহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের একগুচ্ছ সুপারিশ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে বাজেট ঘোষণার মাত্র একদিন আগে পৌঁছেছিল। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি। এখন চূড়ান্ত বাজেট পাসের আগে তোড়জোড় চলছে সেসব সুপারিশ নিয়ে আলোচনার।

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয় ১ জুন। আগের দিন ৩১ মে কর অবকাশ সুবিধাসহ অন্তত  ২০টি বিষয়ে পুঁজিবাজারের সুপারিশ সংবলিত একটি সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানো হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বিলম্বে এসব সুপারিশ উপস্থাপনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে দুঃখ প্রকাশও করেন। সারসংক্ষেপে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিএসইসি’র মতামত নিয়ে বিষয়টি বেশ বিলম্বে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এসেছে। তাই মাননীয় অর্থমন্ত্রী সমীপে বিষয়টি উপস্থাপনে বিলম্ব হলো। এ জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ তবে অর্থমন্ত্রী ওই অসময়ে আসা সুপারিশ আর বিবেচনা করেননি। তিনি সারসংক্ষেপে নোট করেন, ‘আমার মনে হয় না যে এই সময়ের মধ্যে এগুলো পরীক্ষা করে বিবেচনা করা যাবে। সুতরাং বিষয়টি বাজেট প্রদানের পরেই পরীক্ষা করতে হবে। সচিব (আর্থিক প্রতিষ্ঠানের) বিষয়টি নিয়ে অর্থ সচিবের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।’

এখন অর্থমন্ত্রীর ওই নোট মনে করিয়ে দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ চেয়ে চিঠি লিখেছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান। গত ১২ জুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বাজেটীয় সুপারিশমালা বিবেচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব ইউনুসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুঁজিবাজারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়নি সে বিষয়টি সত্য নয়। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, বাজেট ঘোষণায় পুঁজিবাজারের সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো এসেছে। তবে ডিটেইল্ড যে সুপারিশ সেগুলো হয় তো বিবেচনা করা যায়নি। বাজেট ঘোষণার পর এখন পুঁজিবাজারের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অর্থমন্ত্রী এবং অর্থ সচিবকে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন এই সচিব।

পুঁজিবাজার নিয়ে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল : প্রস্তাবিত বাজেটে তিন বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দাবি করেছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ— ডিএসই এবং সিএসই। পাশাপাশি এই দুই পুঁজিবাজারের আয়ে কর অব্যাহতিও চাওয়া হয়েছিল।

২০১৪ সাল থেকে ডিএসই পর্যায়ক্রমে পাঁচ বছরের জন্য ১০০ থেকে ২০ শতাংশ হারে কর অবকাশ সুবিধা ভোগ করে আসছে। সে অনুযায়ী প্রথম বছর ১০০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর ৮০ শতাংশ, তৃতীয় বছর ৬০ শতাংশ, চতুর্থ বছর ৪০ শতাংশ এবং পঞ্চম বছর ২০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা পায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএসইকে এই কর অবকাশ সুবিধা দিয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি ওই সুবিধা রেখে এখন ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে আগামী তিন বছরের জন্য শতভাগ অর্থাৎ পূর্ণ কর অবকাশ দাবি করেছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) করনেটের বাইরে রাখা; এক্সচেঞ্জসমূহের ডিমিউচুয়ালাইজেশন আয়কর অব্যাহতি; বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির অনুকূলে ১ শতাংশ আয়কর নির্ধারণ; ফান্ড ম্যানেজারদের আয়ের ওপর আয়কর অব্যাহতি; বিএসইসি অনুমোদিত মিউচুয়াল ফান্ড এবং কালেটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম নামে পরিচালিত যৌথ বিনিয়োগ ফান্ডকে আয়কর অব্যাহতি; ইউনিট ফান্ড এবং নারী ও ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে আয়কর রেয়াত সুবিধা প্রদান; মিউচুয়াল ফান্ড এবং কালেটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমের জন্য গঠিত ফান্ডের উদ্যোক্তাদের আয়ের কর ধার্য; লভ্যাংশ থেকে উেস কর কর্তনে আয়করের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ; তালিকাভুক্ত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড অবসানের পর ক্রয়মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ লাভ/লোকসান হিসেবে বিবেচনাকরণ এবং আয়কর অধ্যাদেশের ১৯৮৪ এর ধারা ২ এর ক্লজ (৪৬)-এ উল্লিখিত মিউচুয়াল ফান্ড এবং কালেটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমের গঠিত ট্রাস্টিকে ব্যক্তির সংজ্ঞা থেকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছিল বাজেটে বিবেচনার জন্য।

সর্বশেষ খবর