বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাস

আলোচনা শুনে মনে হয়নি কে সরকারি কে বিরোধী

—প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আলোচনা শুনে মনে হয়নি কে সরকারি কে বিরোধী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের বাজেট আলোচনা শুনে মনে হয়নি কে সরকারি দল আর কে বিরোধী দলে আছেন। এটাই সংসদীয় গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকারের ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে না। সীমার মধ্যেই থাকবে। ফলে আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

গতকাল সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী বাজেট প্রণয়নে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাফল্যের প্রশংসা করে তাকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, এটা নিয়ে যেহেতু নানা ধরনের কথা হচ্ছে, মূল্য সংযোজন কর বাস্তবায়নে যেহেতু ব্যবসায়ীরা সাড়া দিচ্ছেন না, তাই এটা আগে যেভাবে ছিল, সেভাবেই থাকবে। অন্তত আরও দুই বছরের জন্য। একই সঙ্গে ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বিষয়ে ১ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকার বদলে ১৫০ এবং ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৮০০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা কাটার জন্য অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন তিনি।

এই বাজেট পাসের মধ্য দিয়ে প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

মাথাপিছু জাতীয় আয় সূচকের প্রারম্ভ রেখা অতিক্রম করেছে : টেবিল উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ২৩ দশমিক ৬ শতাংশে এবং অতিদারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসে। ফলে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মাথাপিছু জাতীয় আয় এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের প্রারম্ভ রেখা অতিক্রম করেছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রাজস্ব আদায়ে গতিশীলতা এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা জোরদারে বর্তমান সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ ও স্থিতিশীল হতে হলে জাতিসংঘ তিনটি সূচক বিবেচনা করে। মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মাথাপিছু জাতীয় আয় এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এ দুটি সূচকে প্রারম্ভ রেখা অতিক্রম করেছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ এবং তা মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা বিবৃত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মধ্য মেয়াদে (২০১৯-২০ অর্থবছরে) তা যথাক্রমে ৯ দশমিক শূন্য এবং ২৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে।

জঙ্গি দমনে বিশ্বে বাংলাদেশ ‘রোল মডেল’ : গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অগ্রগতি ও নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বড় ধরনের অন্তরায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গি দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জঙ্গি দমনে সরকারের নানা সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট গঠন করেছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশকিছু সফল অভিযান পরিচালনার ফলে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি নেতাসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেফতার ও নিহত হয়েছে। বিপুল অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। হলি আর্টিজান হামলার পর এযাবৎ যতগুলো অপারেশন পরিচালিত হয়েছে তার সব কটি থেকেই জঙ্গিগোষ্ঠী আঘাত হানার আগেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে এবং জঙ্গি আস্তানাসমূহ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অভিযানসমূহ পরিচালনার ফলে বর্তমানে জঙ্গি তত্পরতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এবং জঙ্গি দমনে এ সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

সৌদি সরকারের অর্থায়নে জেলা-উপজেলায় ৫৬০ মডেল মসজিদ : মাহফুজুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সৌদি আরব সরকারের অর্থায়নে ‘প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গত ২৫ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর