বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আমি তখন ক্ষমতা নিতে চাইনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমি তখন ক্ষমতা নিতে চাইনি

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আমাকে মাঝে মাঝে বলা হয় স্বৈরাচার। কিন্তু আমার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছিল। আমি ক্ষমতা নিতে চাইনি। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে আমাকে ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। তিনি বলেন, আমি তো নির্বাচন দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।  ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের ক্ষেত্রে নিজের ব্যাখ্যা দিয়ে এইচ এম এরশাদ বলেন, ‘আমার কোনো দোষ ছিল না। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে আমাকে ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। বিচারপতি সাত্তার নির্বাচন করবেন। আমি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলাম, নির্বাচনের জন্য তাকে সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু এক বছরের মাথায় তিনি বললেন, ‘আমার মন্ত্রিসভার সব সদস্য দুর্নীতি পরায়ণ। আমি দেশ পরিচালনায় অপারগ। সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই।’ আমরা প্রস্তুত ছিলাম না, কারণ দেশ পরিচালনা করা সহজ ব্যাপার নয়। এটা আমি উপলব্ধি করি। আমি ক্ষমতা নিতে চাইনি। কিন্তু  কোনো উপায় ছিল না, বাধ্য হয়ে এই দায়িত্ব আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমি বলেছিলাম, নির্বাচন দিয়ে শৃঙ্খলা ফিরে আসার পর আবার ব্যারাকে ফিরে যাব। আমি আমার কথা রেখেছিলাম। ১৯৮৪ সালে নির্বাচন দিয়েছিলাম। ওই নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করলে আমি ব্যারাকে ফিরে যেতে পারতাম। ?দুঃখের বিষয় তখন বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এখানে আছেন মেনন সাহেব, ইনু সাহেবও অংশগ্রহণ করেননি। এর ফলশ্রুতিতে আমাকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করতে হয়েছিল। এ জন্য আমাকে ৬টি বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ৬ বছর জেলে ছিলাম। সেখানে কথা বলার একটি লোক ছিল না। পড়ার একটি বই ছিল না। আকাশ দেখতে পাইনি। চাঁদ দেখতে পাইনি। ১২টি ঈদে অংশ নিতে পারিনি। ঈদের দিনে একটি মিষ্টি খেতে চেয়েও পাইনি। এরশাদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট। কিন্তু জনগণের কাছে এটা নিকৃষ্ট বাজেট। মানুষ মহা আতঙ্কে আছে। অর্থমন্ত্রী এ বাজেটকে সর্বোত্কৃষ্ট বাজেট বলেছেন। আমি রংপুরে যাই, গ্রামে যাই। গ্রামের মানুষ আমাকে বলে ‘বাহে তোমরা কি হামারে মারি ফেলার চান? ৫০ টাকা কেজি চাল খাই। বাজেট পাস হলে এর দাম আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রীকে আপনি বলেন’। আমি মনে মনে বললাম কী করে বলব? প্রধানমন্ত্রী তো আমার সঙ্গে দেখা করেন না! জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, অবাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, তিনি এই বাজেটে যে ঘাটতি দেখিয়েছেন সেটা কি তিনি পূরণ করতে পারবেন? বৈদেশিক ঋণ ও ব্যাংক থেকে তিনি ঘাটতি পূরণের কথা বলেছেন। গত বাজেটের ৬৫% ঘাটতি পূরণ হয়েছে। ৩৫% পূরণ হয়নি। এবারও হবে না। তিনি বলেছেন প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু কীভাবে এই প্রবৃদ্ধি আগামী বছর অর্জন করবেন? এই বাজেটে বিনিয়োগ কর্মসংস্থান কত তার কোনো হিসাব উনি দেননি। এরশাদ বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ছাড়া বাজেটের এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। এ সময় সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োগ বাণিজ্য চলছে দাবি করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশের কনস্টেবলের জন্য ৫ লাখ টাকা, শিক্ষক নিয়োগের জন্য ১০ লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে এটা দুঃখজনক। ব্যাংকিং খাতকে ক্যান্সার আক্রান্ত বলে আখ্যায়িত করে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ আরও বলেন, মানি মার্কেট ক্যান্সারে আক্রান্ত। ব্যাংকের অবস্থা করুণ। সীমাহীন লুটপাট। কারা এটা করল? তারা কি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? তারা কি ধরা ছোঁয়ার ঊর্ধ্বে। আমরা তাদের নাম জানতে পারলাম না কেন? অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি ব্যাংকিং খাতে লুটপাটকারীদের নাম প্রকাশ করার আহ্বান জানান। এরশাদ আরও বলেন, শেয়ার  মার্কেটকে অর্থ লুটপাটের প্রাণকেন্দ্র করা হয়েছে। এই শেয়ার মার্কেটের কারণে অসংখ্য মানুষ আত্মহত্যা করেছে। শিক্ষা খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে বলেন, শিক্ষা খাতে কোচিং বাণিজ্য। প্রশ্নফাঁস সবকিছু শিক্ষাকে নষ্ট করছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, আমরা সবাই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাই। আমি সিঙ্গাপুর যাই। কারণ দেশের ডাক্তারদের ওপর আস্থা রাখতে পারি না। কেউ ডাক্তারের কাছে গেলেই বড় বড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ধরিয়ে দেয়। আর কমিশন খায়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবি রংপুরে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করুন। রংপুর তো আপনারই বাড়ি। স্বামীর বাড়ি মানে নিজের বাড়ি। এটা করা হলে মানুষ খুশি হবে। তিনি বলেন, সিগারেটে ১০০ ভাগ কর আরোপ করুন আর বিড়িতে ২ শতাংশ করার দাবি।

সর্বশেষ খবর