শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইসির সংলাপ নিয়ে দুই দলের ভাবনা

আগে সরকারের সঙ্গে বসতে চায় বিএনপি

শফিউল আলম দোলন

আগে সরকারের সঙ্গে বসতে চায় বিএনপি

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে তাতে অংশ নেবে বিএনপি। এ জন্য চলছে প্রস্তুতি। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দেবে দলটি। তবে দলীয় নীতিনির্ধারকরা চান আগে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ। তারা মনে করেন, ইসির সংলাপের আগে একাদশ জাতীয় নির্বাচন কার অধীনে কীভাবে হবে, তার ফয়সালার জন্য সরকারের উচিত— দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা। অন্যথায় বরাবরের মতো নির্বাচনী সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। বরং এবার তা আরও জটিলাকার ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোড’-ই যেখানে নেই, সেখানে আবার ‘রোডম্যাপ’ কী! গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময়ই সংলাপ তথা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী। নির্বাচন কমিশনের সংলাপের উদ্যোগও অবশ্যই ইতিবাচক। তবে তার আগে মূল যে সমস্যা তার নিরসন করতে হবে। কোন সরকারের অধীনে, কীভাবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে— তার ফয়সালা সরকারকেই করতে হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট নয়। কারণ নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। এ জন্য দরকার নির্বাচনকালীন একটি দল-নিরপেক্ষ সরকার যারা ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারবে। নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সেই উদ্দেশেই নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। এ জন্য সরকারের উচিত হবে আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সেই সহায়ক সরকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের আলোচনার পাশাপাশি ইসির সঙ্গেও সংলাপে অংশ নেবে বিএনপি। এ জন্য দলের ভিতরে প্রস্তুতিও চলছে। বেশ কিছু প্রস্তাবও তৈরি করা হচ্ছে। তবে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, সক্ষমতা এবং দায়িত্বপালনে ন্যায়পরায়ণতায় দৃঢ়তা দেখতে চায়। যেখানে জনগণ নির্বিঘ্নে ভোটের মাধ্যমে তাদের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং তাদের দেওয়া রায় যেন কৌশলে কেউ বদলে দিতে না পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে থাকবে— আসন এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস। নির্বাচনকালে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতা প্রদান করে ভোট গ্রহণ দিবসের সাত দিন আগে থেকে নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশনা পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ ভোট কেন্দ্রে ও বিশেষ বিশেষ স্থানে মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও নতুন ভোটার নিবন্ধীকরণ। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনা। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক আইনসহ (আরপিও) অন্যান্য নির্বাচনী বিধিবিধান সময় উপযোগী ও যৌক্তিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের তাগিদ দেবে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সব পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তা অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপিল কর্তৃপক্ষ, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, রিভাইজিং অথরিটি, নির্বাচন কার্যে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার কথাও বলা হবে সংলাপে।

এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে অতিসত্বর প্রত্যাহার করা এবং প্রত্যাহারকৃত কর্মকর্তাদের যে কোনো ধরনের নির্বাচনী দায়িত্বপালন হতে বিরত রাখা। প্রেষণে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকাশ্য রাজনৈতিক মতাবলম্বী নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বাদ দেওয়া। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় মাঠপর্যায়ে কর্মরত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা পদায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে বিগত পাঁচ বছর বিভিন্ন পদমর্যাদায় ওই জেলায় চাকরিরত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের একই জেলায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পদে পদায়ন না করা। একইভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় প্রত্যেক উপজেলা এবং থানায় কর্মরত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলবে বিএনপি।

অন্যদিকে নির্বাচনের সময় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য করার তাগিদ দেবে দলটি। নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার প্রাক্কালে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যেমন প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বলবৎ রাখতে থাকবে।

দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি ইসির সংলাপে যেতে আগ্রহী। তবে তার আগে সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কার অধীনে, কীভাবে নির্বাচনটা হবে সে বিষয়টির ফয়সালা করা।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৬ জুলাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত চূড়ান্ত কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) প্রকাশ করবে ইসি। এরপর আগামী ৩০ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন মহলের মানুষের সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে।

 

সর্বশেষ খবর