শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

যেভাবে এশিয়ার উদীয়মান টাইগার বাংলাদেশ

বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর অপার বিস্ময়

জয়শ্রী ভাদুড়ী

যেভাবে এশিয়ার উদীয়মান টাইগার বাংলাদেশ

এশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশকে ‘উদীয়মান বাঘ’ (ইমার্জিং টাইগার) বলে আখ্যায়িত করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো। ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি আর পরতে পরতে সম্ভাবনা এ দেশকে পৌঁছে দিচ্ছে উৎকর্ষতার শীর্ষে। প্রতিটি খাতে দেখা দিচ্ছে সম্ভাবনা। শিল্প উন্নয়ন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ হওয়ায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন মাপকাঠি প্রকাশের পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করেছে সংস্থাটি। এতে বাংলাদেশকে ‘নতুন এশিয়ান টাইগার’ বলে অভিহিত করা হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যচিত্রে বিভিন্ন উপাত্ত উল্লেখ করে প্রথমেই বাংলাদেশের দ্রুত সম্প্রসারণশীল অর্থনীতির কথা বলা হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বাংলাদেশ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। তাদের বিভিন্ন গবেষণা, জার্নাল এবং তথ্যচিত্রে উঠে আসছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকগুলো। একদা যারা বাংলাদেশকে বলেছে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এখন তারাই বলছে, এই দেশ ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতি বছরই গড়ে ছয় শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ প্রবৃদ্ধির অধিকাংশই আসছে গার্মেন্টস শিল্প থেকে। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ইউরোপের বাজারে চীনের ‘লো অ্যান্ড’ শিল্প খাতের ৬৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশ নিয়ে নিয়েছে। শুধু গার্মেন্টস নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে বাংলাদেশ। ‘জারা’সহ বিশ্বের নামি-দামি ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে জুতা আমদানি করছে। এভাবে বাংলাদেশের পণ্য ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্ব বাজারে। দেশের এই ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, গত ৮-৯ বছরে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যহারে অগ্রসর হয়েছে। এর কারণ দেশের অর্থনৈতিক ক্রমবর্ধমানতা এবং স্থিতিশীলতা। বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং এশিয়ার অনেক দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় এসেছে, চড়াই-উতরাই এসেছে। কিন্তু গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি কেবলই ঊর্ধ্বমুখী। ফলে অর্থনীতিতে বাড়ছে প্রবৃদ্ধি। এটা সম্ভব হয়েছে বর্তমান নেতৃত্বের চৌকস সিদ্ধান্ত এবং বিপর্যয় মোকাবেলা করে শক্তভাবে হাল ধরার কারণে। 

দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে দক্ষ জনবল প্রস্তুত হচ্ছে একদিকে অন্যদিকে নতুন যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার এবং সেবা রপ্তানি করে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ২০০ পণ্য রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, টেক্সটাইলে উৎপাদিত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য ও মাছ। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪২৪ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার।  তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে সর্বোচ্চ আয় হয়েছে ২ হাজার ৮০৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এ পণ্য রপ্তানি করে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১১৬ কোটি ৯ লাখ ডলার। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। পণ্য রপ্তানি আয়ের চতুর্থ স্থানে রয়েছে টেক্সটাইল সামগ্রী। এ খাত থেকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৭৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর এর সঙ্গে প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স তো আছেই। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট প্রবাসী আয় হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। এই খাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখের বেশি মানুষের। দেশের নতুন উদ্যোক্তাদের হাত ধরে বিস্তার ঘটছে ব্যবসা-বাণিজ্যের। নতুন উদ্যোক্তাদের নতুন ধারণায় তৈরি হচ্ছে কাজের ক্ষেত্র। ফলে দেশের জনসংখ্যা পরিণত হচ্ছে মানবসম্পদে। দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতে ঘটছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এর ফলে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমছে। নিজেদের উত্তোরোত্তর উন্নয়নে বাড়ছে আত্মনির্ভরশীলতা। বাংলাদেশের এই স্থিতিশীল অর্থনীতির কারণে এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে বিদেশিরা। দেশের অভ্যন্তরীণ এই উন্নয়নের ভিত্তিতেই প্রস্তাবিত হয় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বিশাল বাজেট। দেশের এই উন্নয়নে মানব সম্পদকে হাতিয়ার উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, খনিজসম্পদ তেমন না থাকলেও এ দেশের আছে জনসম্পদ। নতুন উদ্যোক্তাদের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। অর্থনীতির অগ্রগতি ঊর্ধ্বমুখী রাখতে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে প্রতিটি খাতে কাজে লাগাতে হবে দেশের জনশক্তিকে।

সর্বশেষ খবর