শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভারতে গরুকেন্দ্রিক সহিংসতা বাড়ছে

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

২০১০ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ভারতে গরু সম্পর্কিত যেসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে তার ৫১ শতাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য ছিল মুসলিমরা। গত সাত বছরে মোট ৬৩টি সহিংসতার ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৮ ভারতীয় নাগরিকের। এর মধ্যে ২৪ জনই মুসলিম (৮৬ শতাংশ)। হামলায় আহত হয়েছেন ১২৪ জনের বেশি; যার মধ্যে শুধু গুজবকে কেন্দ্র করেই ৫২ শতাংশ সহিংসতা বা হামলার ঘটনা ঘটে।

ইন্ডিয়া স্পেন্ড নামে একটি সংগঠনের সম্প্রতি দেশজুড়ে চালানো জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য। জরিপটি করা হয়েছিল ২০১০ সালের শুরু থেকে ২০১৭-এর ২৫ জুন পর্যন্ত। জরিপে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের মে মাসে দিল্লিতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে চলতি বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত গরুকে কেন্দ্র করে ৬১টি (৯৬.৮ শতাংশ) হামলার ঘটনা ঘটেছে ভারতে। মোট ৬৩টি সহিংসতার ঘটনার মধ্যে ৩২টি ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোয়, ৮টি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে এবং বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে সমাজবাদী পার্টি (উত্তরপ্রদেশ), পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (জম্মু-কাশ্মীর) এবং আম আদমি পার্টি (দিল্লি) শাসিত রাজ্য। দেশটির ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ১৯টিতে এমন হামলার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে (১০)। এরপর রয়েছে হরিয়ানা (৯), গুজরাট (৬), কর্ণাটক (৬), মধ্যপ্রদেশ (৪), দিল্লি (৪) ও রাজস্থানে (৪টি)।

ভারতজুড়ে ৬৩টি সহিংস ঘটনার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা বাদে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় ১৩টি ঘটনা ঘটেছে (২১ শতাংশ)। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোয় একমাত্র আসামে এ রকম একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে গরু জবাইয়ের অভিযোগে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।

দেখা গেছে, ২০১৭ সালের প্রথম ছয় মাসে গো-ইস্যুতে হামলার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২০টি, যে সংখ্যাটা ২০১৬ সালের চেয়ে অন্তত ৭৫ শতাংশেরও বেশি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সাল থেকে শুরু করে গত সাত বছরের মধ্যে এই সময়টা সবচেয়ে খারাপ বলা যেতে পারে।

জরিপে দেখা গেছে, ২৩টি হামলার ক্ষেত্রে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল বা স্থানীয় গো-রক্ষক সমিতির মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। গো-ইস্যুকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ১০ জুন প্রথম হামলার ঘটনাটি ঘটে পাঞ্জাবের মানসা জেলার যোগা শহরে। একটি কারখানার পাশে একসঙ্গে ২৫টি গরুর লাশ পাওয়া যায়। এর পরই ভিএইচপি, গোশালা সঙ্ঘ, গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কারখানাটি ভাঙচুরের পাশাপাশি ওই কারখানার দুই কর্মকর্তার দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটান বলে অভিযোগ। হামলায় চারজন আহত হন, ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে তিনজনকে আটকও করা হয়। তবে সবচেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল দাদরির ঘটনা। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে দাদরির বিশারা গ্রামে গোমাংস খাওয়ার অভিযোগে আখলাক সাইফি (৫০)-কে পিটিয়ে খুন করে উত্তেজিত জনতা। মারধর করা হয় আখলাকের ২২ বছরের ছেলে দানিশকেও। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দানিশ। ওই ঘটনার পরই ভারতজুড়ে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই ঘটনায় কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের অভিমত ছিল, কেন্দ্রের ‘ঘৃণার রাজনীতি’র ফলেই দাদরিতে ওই ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর