বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সরকারকে বিব্রত করতে আমাকে কেউ অপহরণ করতে পারে

আদালতে জবানবন্দি দিলেন ফরহাদ মজহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারকে বিব্রত করতে আমাকে কেউ অপহরণ করতে পারে

নিখোঁজ হওয়ার পর যশোর থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী —বাংলাদেশ প্রতিদিন

যারা আমাকে অপহরণ করেছে তাদের কাউকে আমি চিনতে পারি নাই। তবে বর্তমান সরকারকে যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রত করতে চায় আমার অপহরণের সঙ্গে তারা জড়িত থাকতে পারে। তিন অপহরণকারী কোনো বিনিময় ছাড়াই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল বিকালে ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবীবের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় কবি, প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের এই জবানবন্দি দিয়েছেন বলে আদালত সূত্র নিশ্চিত করেছে। পরে ৫ মিনিটের শুনানি শেষে নাটকীয়ভাবে যশোরে ‘উদ্ধার’ ফরহাদ মজহারকে নিজ জিম্মায় বাসায় ফেরার অনুমতি দিয়েছে আদালত। ১০ হাজার টাকার মুচলেকায় স্বাক্ষর নিয়ে আদালত তাকে নিজের জিম্মায় বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয়। এর আগে বিচারকের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় ফরহাদ মজহারের বিচারিক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, ফরহাদ মজহার তার জবানবন্দিতে জানান, ‘চোখের ড্রপ কিনতে বাসা থেকে বের হই। এরপর একটি মাইক্রো থেকে তিনজন লোক নেমে আমাকে গাড়িতে জোর করে উঠায়। দুই পাশের দুজন বসে মাঝখানে আমাকে বসায়। তারা মাথা নিচু করে চুপ করে বসতে বলে। গাড়ি চলা শুরু করে। কিছুক্ষণ পর আমার ফোন থেকে আমার স্ত্রীকে ফোন করি এবং জানাই, আমাকে কিডনাফ করা হয়েছে। আমাকে মেরে ফেলবে। পরে অপহরণকারীরা ফোন কেড়ে নেয়। গাড়ি চলতে থাকে। কিছুক্ষণ পর অপহরণকারীদের আমি বলি তোমরা আমাকে নিয়ে যেও না। টাকা নিয়ে ছেড়ে দাও। তখন অপহরণকারীরা জানতে চায়, টাকা কোথায় পাব। আমি বলি আমার স্ত্রী টাকা ম্যানেজ করে দেবে। একপর্যায়ে ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। পরে আমার নিজের ফোন থেকেই স্ত্রীর কাছে ফোন করি। টাকা ম্যানেজ করার জন্য। এরপর মাইক্রোবাস চলতে থাকে। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার সময় মাইক্রো থেকে নামিয়ে দেয়।

পরে রিকশাওয়ালার কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি, এটা খুলনা শহর। নামিয়ে দেওয়ার আগে অপহরণকারীরা তার হাতে হানিফ পরিবহনের গাড়ির টিকিট হাতে দেয় এবং অপহরণকারীরা বলে আমরা কিন্তু আশপাশেই আছি। সোজা গাড়িতে উঠে ঢাকায় চলে যাবি। পরে স্থানীয় একটি হোটেলে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে হানিফ পরিবহনের গাড়িতে উঠি। গাড়িতে উঠে ঘুম দেই। এর ঘণ্টাখানেক পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি, চারপাশে অনেক লোকজন। এরমধ্যে একজন লোক জিজ্ঞাসা করে আমি ফরহাদ মজহার কিনা। পরে আমি জানাই, আমিই ফরহাদ মজহার। তখন র‌্যাব সদস্যরা আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয়। আমি অপহরণকারীদের চিনি না। তারা টাকার জন্য আমাকে অপহরণ করেছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ আমি নিজ থেকে তাদের টাকার অফার দিয়েছিলাম। তারা আমার কাছে কোনো টাকা দাবি করে নাই। আমার মনে হয়, অপহরণের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এ ছাড়া সরকারকে বিব্রত করার জন্য আমাকে অপহরণ করা হতে পারে।’

গতকাল দুপুরে পুলিশ ফরহাদ মজহারকে আদালতে হাজির করার পর তাকে নিজের জিম্মায় যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষেও মামলা লড়েন। ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার, মেয়ে শমতলী হক, ভাগ্নে মেজর ফেরদৌসসহ কয়েকজন পারিবারিক বন্ধু এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ফরহাদ মজহারের মামলার বিষয় আমরা কিছুই জানি না। জবানবন্দিতে কী বলেছেন তাও জানি না। আপনি কি দয়া করে আমাদের জানাবেন?

উত্তরে বিচারক বলেন, এটা ৩৮৫ এবং ৩৬৫ ধারার মামলা; অর্থাৎ অপহরণ ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত অপরাধ। ফরহাদ মজহার জবানবন্দিতে আমার কাছে কী বলেছেন, তা আপনাকে আমি বলতে পারি না। সে বিষয়ে পুলিশ ব্রিফ করবে। আপনি কি নিজের জিম্মায় যেতে ইচ্ছুক? আদালতে উপস্থিত ফরহাদ মজহারকে বিচারকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘জি, আমি ইচ্ছুক।’

পাঁচ মিনিটের শুনানি শেষে মুচলেকায় সই করে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন ফরহাদ মজহার। এ সময় সাংবাদিকরা তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পরে একটি মাইক্রোবাসে করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি চলে যান।

প্রসঙ্গত, সোমবার ভোর রাতে রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোড ১ নম্বর হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। তার ফোন থেকে মুক্তিপণের জন্য টাকা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তার আদাবর থানায় লিখিত অভিযোগ করার পর পুলিশ ও র‌্যাব অনুসন্ধান শুরু করে।

সর্বশেষ খবর