বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কার ফোনে বের হলেন ফরহাদ মজহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

কার ফোন পেয়ে লেখক, কলামিস্ট ফরহাদ মজহার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন? নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে একটি কলের বিষয়ে নানা ধরনের কানাঘুষা হলেও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করে প্রকৃতপক্ষে ফরহাদ মজহারের ফোন রেকর্ডে এর কোনো অস্তিত্ব পাননি গোয়েন্দারা। উদ্ধার হওয়ার পর তার সেলফোন ঘেঁটে কোনো অ্যাপস্ থেকেও কল আসা কিংবা যাওয়ার প্রমাণ পাননি গোয়েন্দারা। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো রহস্য দানা বাঁধছে বিভিন্ন মহলে। সবারই প্রশ্ন— কার ফোন পেয়ে ভোররাতে তিনি বাসা থেকে বের হন।

উদ্ধার হওয়ার পর ফরহাদ মজহারকে গতকাল সকাল ৮টায় খুলনা থেকে ঢাকার আদাবর থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে বেলা ১১টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার জবানবন্দি নথিভুক্ত করতে হাজির করা হয় আদালতে। পরে সেখান থেকে নিজ জিম্মায় তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাসায় ফিরে যান। ফোন রেকর্ড বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা দেখেছেন, ২ জুলাই রাত ১০টা ৬ মিনিটে গ্রামীণফোন (জিপি) নম্বর থেকে একটি কল রিসিভ করেছিলেন ফরহাদ মজহার। ২৪ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে তার অবস্থান ছিল মোহাম্মদপুরে। সারা রাত মোবাইল ফোনে আর কোনো কল আসেনি কিংবা তিনি কাউকে কল করেননি। ভোর ৫টা ৩১ মিনিটে ফরহাদ মজহার নিজে একটি জিপি নম্বরের কল রিসিভ করেন। ওই নম্বরটি ছিল তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের। ২৪ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনের সময় তার অবস্থান ছিল গাবতলী বাগবাড়ী এলাকায়। সকাল ৬টা ২২ মিনিটে ফরহাদ মজহার পুনরায় তার স্ত্রীকে কল করে ১ মিনিট কথা বলেন। সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে গোয়ালন্দ-দৌলতদিয়া এলাকা থেকে তার স্ত্রীর সঙ্গে ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড কথা বলেছিলেন।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের পর কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলে ফরহাদ মজহার নিজেই বলতে পারবেন তিনি কেন এত ভোরে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজেও তার স্বাভাবিক হাঁটার দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অন্যসব দিনের মতোই ফরহাদ মজহার স্বাভাবিক ছিলেন। ভোর ৩টার দিকে ঘুম থেকে ওঠা তার অভ্যাস। এ সময়টাতে তিনি লেখালেখি করেন। তবে কোনো সময়ই বাইরে বের হন না।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের পর আমরা তার ফোন ঘেঁটে দেখেছি এবং কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছি। তার ফোনে কোনো অ্যাপস্ থেকেও কল রিসিভ কিংবা কল করার রেকর্ড পাইনি।’

গোয়েন্দা পুলিশের ব্রিফিং : ওষুধ কেনার জন্য বাসা থেকে বের হন কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। এরপরই তাকে একদল দুর্বৃত্ত চোখ বেঁধে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে এসব কথাই জানিয়েছেন ফরহাদ মজহার।

সোমবার ভোর ৫টা ৭ মিনিটে শ্যামলীর রিং রোড ১ নম্বর হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। তার ফোন থেকে মুক্তিপণের জন্য টাকা চাওয়া হয় বলে দাবি পরিবারের। ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার আদাবর থানায় লিখিত অভিযোগ করার পর পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ মজহার আমাদের জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে ওষুধ কেনার জন্য তিনি বাসা থেকে বের হন। তাকে কেউ ফোন করেনি। বাসা থেকে বের হওয়ার পরই একদল দুর্বৃত্ত তাকে ধরে চোখ বেঁধে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।’ স্ত্রীর দায়ের করা ‘অপহরণ’ মামলা প্রসঙ্গে আবদুল বাতেন বলেন, অপহরণ মামলার বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। নিখোঁজের পর উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টি জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণের জন্য তাকে আদালতে হাজির করা হয়। অপহৃত হওয়ার পর ফরহাদ মজহার তার স্ত্রীকে মোবাইলে ফোন করে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে। ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তবে কীভাবে তিনি যশোর পৌঁছালেন বা কারা তাকে সেখানে নিয়ে গেছে সেসব বিষয়ে এখনো পরিষ্কার নয় পুলিশ। খুলনা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকায় গ্রিল হাউজ রেস্তোরাঁ। বিত্তবান ও প্রভাবশালীরা সাধারণত সেখানে ভিড় জমান। তবে সোমবার রাতে প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার সেখানে অবস্থান করেছেন ও খাবার খেয়েছেন জানাজানি হওয়ার পর থেকে আলোচনায় উঠে আসে গ্রিল হাউজ রেস্তোরাঁ। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাব-৬-এর সদস্যরা ওই রেস্তোরাঁটিকে ঘিরে ফেলেন। তবে তার আগেই তিনি সেখান থেকে বের হয়ে যান। এদিকে সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল ও ফেসবুকের মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সোমবার রাত থেকেই রেস্তোরাঁটি ঘিরে মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে। গতকাল সকাল ও দুপুরে রেস্তোরাঁটিতে ভিড় ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। আগতরা সবাই কর্মচারীদের কাছে রাতের ঘটনাটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান। এ সময় অনেককে রেস্তোরাঁটির সামনে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলতে দেখা যায়। রেস্তোরাঁর মালিক আবদুল মান্নান জানান, ফরহাদ মজহার সেখানে ভাত, ডাল ও সবজি খেয়েছেন। রেস্তোরাঁর কর্মচারীরা যখন খাবার আনতে যান, তখন ৬-৭ মিনিট তিনি চোখ বন্ধ করে ছিলেন। এ সময় তাকে ক্লান্ত দেখা যায়। পরে টিভি চ্যানেলের খবর দেখে তিনি ফরহাদ মজহার সম্পর্কে জানতে পেরে র‌্যাবকে জানান।

সর্বশেষ খবর