বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আইন সংস্কার ও সীমানার কাজ পাচ্ছে পরামর্শকেরা!

গোলাম রাব্বানী

এবার নির্বাচনী আইন সংস্কার ও সংসদীয় আসনের সীমানাবিন্যাসের কাজ যাচ্ছে পরামর্শকের হাতে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তারা কাজ করবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিশাল কর্মযজ্ঞ গুছিয়ে আনার কাজ করছে ইসি সচিবালয়। তবে এই দুই বিষয়ের কাজ দিতে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসির নিজস্ব জনবল থাকতে পরামর্শক দিয়ে কাজ করালে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে পারে। এ ছাড়া আইন সংস্কারের বিষয়ে ইতিমধ্যে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও প্রস্তাব নিয়েছে ইসি।

আগামী ৩০ জুলাই থেকে নির্বাচনী বিষয়গুলো নিয়ে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। নভেম্বরের মধ্যে সংলাপের কাজ শেষে এপ্রিলের মধ্যে আইন সংস্কার ও সীমানা পুনর্বিন্যাস চূড়ান্তের কথা রয়েছে। সংলাপের মতামত, মাঠ কর্মকর্তাদের প্রস্তাব ও বাস্তবতা বিবেচনা করে পরামর্শকরা নির্বাচন কমিশনের সুপারিশমতোই কাজ করবে। এ ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই দেড় বছরের কাজের কর্মপরিকল্পনাও করেছে ইসি। এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ কমিশনের অনেক নির্বাচনী আইন-বিধি রয়েছে। অংশীজনের সঙ্গে সংলাপে নানা বিষয়ে মতামত আসবে। সঙ্গে রয়েছে ৩০০ সংসদীয় আসনের বিষয়ে সুচারু পুনর্বিন্যাস। গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি কাজ করার জন্য কিছু পদ্ধতি মেনে পরামর্শক নিয়োগ দেব। আইনি সংস্কারের জন্য একজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে ও সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য আরেকজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে কমিটিও থাকবে। ওই পরামর্শক কমিটি নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

সচিব জানান, অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে, আইন ও সীমানা নিয়ে ইসির সঙ্গে কাজ করেছে এমন ব্যক্তিদেরই পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। ইসির কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বিগত নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় এসব আইনের কোথাও কোথাও পরিবর্তন ও সংস্কারের প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের আইনের কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি আইনের ধারা-উপধারাগুলো যুগোপযোগীর প্রয়োজনীয়তা পরীক্ষা করে দেখবে এবং এর ওপর সুপারিশ প্রণয়ন করবে। কমিশন বলছে, জাতীয় সংসদ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে কেবল জনসংখ্যা বিবেচনায় না রেখে ভোটারসংখ্যা বিবেচনাভুক্ত হওয়া জরুরি। কারণ জনসংখ্যাধিক্যের ওপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলের আসনসংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং বড় বড় শহরের আসনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন বৈষম্যের অবসান করতে আইনগত সংস্কার প্রয়োজন। সীমানা পুনর্বিন্যাসে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা নেবে কমিশন। ইসি সচিব জানান, সব আইন-বিধি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে নির্বাচনের সময় অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার দমন করা সম্ভব হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন-পরিমার্জন করার জন্য রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায়ে পরামর্শ নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশন বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করবে। কমিশন বলছে, সময়ের পরিবর্তনে এবং জনমানুষের শহরমুখী প্রবণতার কারণে বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যা বেড়েছে। জনসংখ্যার আধিক্য অথবা ঘনত্ব বিবেচনা করা হলে শহুরে এলাকায় সংসদ সদস্যের সংখ্যা বাড়বে; পল্লী অঞ্চলে আসনসংখ্যা কমে যাবে। ফলে শহর ও পল্লী অঞ্চলের সংসদীয় আসনের বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ হবে। এ জন্য বিগত সময়ে প্রায় ৫০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হলেও এবার বড় বড় শহরের আসনসংখ্যা সীমিত করার চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও উপজেলা ঠিক রেখে এবার সীমানা পরিবর্তনের কাজ করবে ইসি। ইতিমধ্যে বিএনপি ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে দলটির প্রাথমিক মতামতও তুলে ধরেছে। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে এবার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হতে পারে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমানে সোয়া ১৫ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ কোটি ১৮ লাখেরও বেশি নাগিরক ভোটার রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রতি আসনে গড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি জনসংখ্যা এবং তিন লাখ ৪০ হাজারের মতো ভোটারসংখ্যার কম-বেশিকে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে।

ইসির প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনায়ও বলা হয়েছে, সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শুধু জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি না করে জনসংখ্যা ও ভোটারসংখ্যা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। কারণ ভোটার তালিকা প্রতিবছর হালনাগাদ হয়। জনসংখ্যা ও ভোটারসংখ্যা উভয়কে প্রাধান্য দিয়ে বড় বড় শহরের আসনসংখ্যা সীমিত করে দিয়ে আয়তন, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও উপজেলা ঠিক রেখে এবার সীমানা নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ জন্য জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজনৈতিক দল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। এরপর আগস্ট থেকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অক্টোবর-নভেম্বরে সীমানার খসড়া তৈরি হবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে খসড়া প্রকাশ, ফেব্রুয়ারিতে দাবি-আপত্তি গ্রহণ এবং শুনানি শেষ করবে ইসি। এরপর এপ্রিলের মধ্যে সীমানার গেজেট প্রকাশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ (আরপিও) বেশ কিছু নির্বাচনী আইন সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে একাদশ সংসদে ইভিএম ব্যবহার, সরকারি চাকরিজীবীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় ‘সশস্ত্র বাহিনী’ ফিরিয়ে আনাসহ বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব ইসির টেবিলে যেতে পারে। ইসির আইন কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। বর্তমানে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার তিন বছর পর তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। সে ক্ষেত্রে অনেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তাই বিভিন্ন মহলে এ শর্ত শিথিলের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শোনা যাচ্ছে। অনেকেই এ শর্ত শিথিলের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক পলিসির ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। সরকার চাইলে চলতি সংসদেও সে বিষয়ে সংশোধনী আনতে পারে। এ ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টিও আইনে আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর