বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই যুগেও ‘বালির ফাঁদ’ কেউ উল্টে দেখেনি

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

দুই যুগেও ‘বালির ফাঁদ’ কেউ উল্টে দেখেনি

মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী

চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, গত দুই যুগে ‘বালির ফাঁদ’ কেউ উল্টে দেখেনি। তাই এমন জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে শহরের যেসব পাহাড়ের ওপর থেকে পানির সঙ্গে বালি গড়িয়ে নেমে এসে নালা, খাল ভরাট করে জলাবদ্ধতার জনদুর্ভোগ তৈরি করে, সেসব পাহাড় লাগোয়া ‘বালির ফাঁদ’গুলো আগে রক্ষা করা দরকার। বিশ্বব্যাংকের  অর্থায়নে একটি প্রকল্প আওতায় এসব বালির ফাঁদ তৈরি করা হয়েছিল। গেল কটি বছর এসব ফাঁদের কি অবস্থা তা দায়িত্বশীলরা কেউই দেখেননি। সাবেক এই চট্টলার মেয়র একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান জলাবদ্ধতার কারণ ও প্রতিকার এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা। জাতীয় পার্টির (জাপা) সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাামেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনবারের সাবেক এমপি ও প্রাক্তন এই ছাত্রনেতা এও বলেন, পাহাড়কাটা রোধে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর (সিডিএ) প্রধান দায়িত্ব। সিডিএর রহস্যজনক নীরবতার সুযোগে অবাধে পাহাড়কাটা হয়েছে। আর এর নেতিবাচক ফল হিসাবে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম করপোরেশন (চসিক)-এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ তো পরের কথা, আগে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রকল্প তৈরি করতে হবে। কার কী কাজ, কোন সংস্থা কোন কাজটি করবে, তা আগে নিরূপণ জরুরি। মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী এও জানান, তিনি মেয়র থাকা অবস্থায় ১৯৮৮/৮৯ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশ উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৩৭০ লাখ ইউএস ডলারে এই প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত শহরের পরিবেশ রক্ষার অংশ হিসেবে চাক্তাই খাল খনন এবং বাকলিয়ার চাক্তাই ডাইভারশন খাল খনন করা হয়। পরবর্তীতে মির্জা খাল, বির্জা খাল, নাসির খালসহ অন্য খালগুলো খনন করার কথা ছিল। আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড কালভার্ট, নগরীর পাবলিক টয়লেট ও এই প্রকল্পের আওতায় করা। কিন্তু ১৯৮৯ সালের পর প্রকল্পটি আর নবায়ন না হওয়ায় খাল খনন আর হয়নি কাঙ্ক্ষিতভাবে। সাবেক মেয়র জানান, ওই প্রকল্পের আওতায় পাহাড়ের পাশে গড় অন্তত ৩০টি বালির ফাঁদ ছিল। বৃষ্টি শেষে রোদ উঠলেই ওই সব ফাঁদে আটকা বালি অপসারণ করার কথা ছিল। কিন্তু সেসব ফাঁদের কথা দায়িত্বশীলরা কেউ এখন আর মনে রেখেছে বলে মনে হয় না। মাহমুদুল ইসলাম বলেন, একদিকে পাহাড়ি মাটির ঢল, অন্যদিকে বাসা, বাড়ি-অফিস কারখানার বর্জ্য খাল-নদী ভরাট হচ্ছে। সমানে চলছে এসব দখলও। এ দখল ও দুষনের বিরুদ্ধে অভিযান না চালালে জলাবদ্ধতার তাণ্ডব রোধ হবে না। সাবেক মেয়র আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সমানে চলছে পাহাড় কাটা।  পাহাড় কেটেই চট্টগ্রাম শহরে কয়েকটি আবাসিক এলাকা তৈরি হয়েছে। কারা এসব পাহাড় কীভাবে, কাদের অনুমতি নিয়ে কাটলেন, তা এখনই অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ পাহাড় না কাটেন। এই কাজটি সিডিএকে করতেই হবে। সিডিএরই এ ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী এও বলেন, কার কী দায়িত্ব তা যেন তারা পড়ালেখা করে জেনে বুঝে এগিয়ে যান- এটিই নাগরিকরা আশা করেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামে উন্নয়নে কোনো সমন্বয় নেই বলে মনে করেন এই সাবেক মেয়র। তিনি বলেন, নগর উন্নয়নে সিটি গভর্নমেন্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আবার বৃহত্তর চট্টগ্রামের মাতারবাড়িতে এলএনজি টার্মিনাল, কর্ণফুলীতে টানেল— কোথায় কী হবে কেন হবে কীভাবে তা বিবেচনা ও সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের আওতায় একটি কমিটি থাকা দরকার। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়রকে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনে সিনিয়র সিটিজেনদের পরামর্শ নিয়ে এগোতে হবে।

সর্বশেষ খবর