শিরোনাম
রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের বৈঠকে ক্ষোভ বাকবিতণ্ডা অসন্তোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পক্ষে মত দেওয়ায় সাবেক গণপরিষদ সদস্য প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এবং আওয়ামী ফোরামের নেতাদের তীব্র সমালোচনা করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কেবল পাকিস্তানে ও আমাদের দেশে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে অন্যায়ভাবে সংবিধান সংশোধন করেছিলেন। ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ছিলেন গণপরিষদ সদস্য। তারাই সংবিধান তৈরির সময় ছিলেন। এখন অ্যামিকাস  কিউরি নিযুক্ত হয়ে তারা কীভাবে সুপ্রিম জুডিশিয়ালের পক্ষে বলেন? তারা কী চান? বৈঠকসূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর দলের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন। এর ওপর ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কর্নেল মুহম্মদ ফারুক খান (অব.), আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, আবদুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, নজিবুল্লাহ হিরুসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য দেন। এরপর সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের রিপোর্ট পেশ করেন। পরে শুরু হয় ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় নিয়ে আলোচনা। দলের দু-এক জন সিনিয়র সদস্য এ নিয়ে বক্তব্য দেন। সে সময় পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আলোচনা করা ঠিক হবে না— এমন বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। মতিন খসরু আইনের ব্যাখ্যা দিতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে এক প্রবীণ সদস্য বলেন, ‘আপনেরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। দলের জন্য কাজ করেন না।’ এ সময় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলেই জঙ্গিরা জামিনে মুক্ত হচ্ছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কোন আইনজীবীদের মাধ্যমে তারা জামিন নিচ্ছে, খোঁজখবর নিতে হবে।’ এ সময় খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন প্রতিমন্ত্রী ছিলাম, তখন এমন হয়নি।’ তাকে থামিয়ে দিয়ে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনাদের সবার আমলই আমাদের দেখা আছে। আপনেরা শুধু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দলের জন্য কিছু করেন না।’ দলের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘বার কাউন্সিল ও সুপ্রিম কোর্টে আওয়ামী ফোরামের আইনজীবীরা নিজেদের প্র্যাকটিস যেন ঠিক থাকে, তাদের পেশার যেন ক্ষতি না হয় সে চেষ্টাই করেন। দলের কোনো কাজ কেউই করেন না।’ এ সময় আরও কয়েকজন সদস্য সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তাদের থামিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা সংসদে চূড়ান্ত আলোচনা করব। তবে এ কথাটি বলা যায়, আমরা কখনই বিচারপতিদের অসম্মান করিনি। খালেদা জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বানাতে গিয়ে বয়স বাড়িয়েছিলেন।’

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, আগামী বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের প্রস্তুতির নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে নিজ এলাকায় জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। সূত্রগুলো জানায়, শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে হবে। জনগণের কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, বাড়ি বাড়ি যেতে হবে, উঠান বৈঠক করতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। শুধু বড় বড় মিছিল, মিটিং করলেই কাজ হয় না। এ করে ভোট বাড়ানো যাবে না।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবহেলা করার সুযোগ নেই। প্রচার-প্রচারণার জন্য যত ধরনের কৌশল তা গ্রহণ করতে হবে।’ নেতা-কর্মীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন আসছে, আর বিএনপি আওয়ামী লীগ ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে বুকলেট ছাপিয়ে দেশে-বিদেশে প্রচার করছে। তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য এবং ছবি দিয়ে বুকলেট তৈরি করে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে বিলি করছে। অথচ আমার দলের নেতারা কেউ কিছুই জানেন না। একটু চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। এর বিরুদ্ধে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সজাগ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী যে হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।’ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দলীয় কার্যালয়মুখী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘কমিটি হওয়ার পর অনেকেই দলীয় কার্যালয়ে যান না। নেতা-কর্মীদের নিয়মিত কার্যালয়ে যেতে হবে। সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা আসবে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যোগাযোগ বাড়াতে হবে।’ এ সময় নেতারা বলেন, ‘আমরা দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত বসি।’ তখন প্রধানমন্ত্রী নিজের মোবাইল ফোন সেট দেখিয়ে বলেন, ‘আমি যেখানেই থাকি, সবকিছু পর্যবেক্ষণ করি। কারা অফিসে যান, কারা চা-মুড়ি খান সব দেখি।’

ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাররা যেন বাদ না পড়েন সে বিষয়ে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। নিজ নিজ এলাকায় প্রাপ্তবয়স্করা যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন সে বিষয়েও নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। দলীয় সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম আরও গতিশীল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। বৈঠকে কয়েকটি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়। এ ছাড়া শোকের মাস আগস্টজুড়ে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কৌশল নির্ধারণ করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। ব্রিটেনের নির্বাচনে গত বছর টিউলিপ সিদ্দিক এক হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে ছিল। এবারের নির্বাচনে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পুনরায় বিজয়ী হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে, কেবল মানুষের কাছে যাওয়ার ফলেই। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গেলে আমাদেরও ভোট বাড়বে। কারণ আগামী নির্বাচন চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’

সর্বশেষ খবর