ঋণ খেলাপে শীর্ষ ১০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রকাশ করা হয়েছে। এদের সম্মিলিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে মুহিবুর রহমান মানিকের (সুনামগঞ্জ-৫) প্রশ্নের জবাবে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুপস্থিতিতে প্রশ্নের জবাব দেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। সংসদে ঋণখেলাপির যে তালিকা দেওয়া হয় তাতে রয়েছে : মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রাইভেট) লিমিটেড, জাসমীর ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেড, বেনেটেক্স, ঢাকা ট্রেডিং হাউস, আনোয়ারা স্পিনিং মিলস, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড, এম এম ভেজিটেবল অয়েল প্রডাক্টস লিমিটেড, আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, হলমার্ক ফ্যাশন লিমিটেড, মুন্ন ফেব্রিকস, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিকস, শাহারিস কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেড, নুরজাহান সুপার অয়েল লিমিটেড, সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড, এস কে স্টিল, চৌধুরী নিটওয়্যারস লিমিটেড, বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লি., যমুনা এগ্রো কেমিক্যালস, রনকা শোয়েল কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, টি অ্যান্ড ব্রাদার্স নিট কম্পোজিট, তানিয়া এন্টারপ্রাইজ ইউনিট, রহমান স্পিনিং মিলস, এস স্পিনিং লাইন, হাজী ইসলাম উদ্দিন স্পিনিং মিলস, গ্রাম বাংলা এমপিকে ফার্টিলাইজার অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, টেলিবার্তা, কটন করপোরেশন, ভারগো মিডিয়া, সোনালি জুট মিলস, এক্সপার টেক, এম বি এ গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, ওয়ালমার্ট ফ্যাশন, ওয়ান ডেনিম মিলস, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, হিমালয় পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, এম কে শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড স্টিলস, রনকা ডেনিম টেক্সটাইল মিলস। ম্যাক শিপ বিল্ডার্স, বিশ্বাস গার্মেন্টস, মাস্টার্ড ট্রেডিং, হিন্দুল ওয়ালি টেক্সটাইল, ইসলাম ট্রেডিং কনসোর্টিয়াম, ক্যাপিটাল বনানী ওয়ান, মেরিন ভেজিটেবল অয়েল, অর্জন কার্পেট অ্যান্ড জুট ওয়েভিং, এ জামান অ্যান্ড ব্রাদার্স, অরনেট সার্ভিসেস, দোয়েল অ্যাপারেল, আশিক কম্পোটিজ টেক্সটাইল মিলস, মুন বাংলাদেশ, মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্স, এইচ আর স্পিনিং মিলস, বিসমিল্লাহ টাওয়েলস, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, তাবাসসুম এন্টারপ্রাইজ, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, দ্য অয়েল টেক্স, ডেল্টা সিস্টেমস, জাহিদ এন্টারপ্রাইজ, হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থা, নিউ রাখী টেক্সটাইলম মিলস, আলী পেপার মিলস, অল টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্দার্ন ডিস্টিলারিজ, লাকি শিপ বিল্ডার্স, মাকসুদা স্পিনিং মিলস, শাপলা ফ্লাওয়ার মিলস, সিদ্দিক অ্যান্ড কোম্পানি, মনোয়ারা ট্রেডিং, এ কে জুট ট্রেডিং, মাহবুব স্পিনিং। আল আমিন ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট, প্রফিউশন টেক্সটাইল, মা টেক্স, সুপার সিক্স স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, টেকনো ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বিসমিল্লাহ টাওয়েল, ন্যাম করপোরেশন, জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পি এ, সর্দার অ্যাপারেলস, জেড অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্বাস টেক্সটাইলস, মডার্ন স্টিল মিলস, নিউ অটো ডিফাইন, অনিকা এন্টারপ্রাইজ, ডি আফরোজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ, মোবারক আলী স্পিনিং মিলস, আফিল জুট মিলস, রেজা জুট ট্রেডিং, আর কে ফুডস, আলফা টোব্যাকো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, ফেয়ার এক্সপো ওয়েভিং মিলস, কেয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, ফিয়াস এন্টারপ্রাইজ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) ডাটাবেজের মাসভিত্তিক ঋণ তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ টাকা বলেও জানান তিনি।
টাকা পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে খাদ্যমন্ত্রী সংসদকে জানান, বিদেশে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। প্রশ্নকর্তা জানতে চান, ‘বাংলাদেশের টাকা অবৈধভাবে সুইস ব্যাংকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সরকার এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?’ জবাবে তাকে বলা হয়, ‘এ বিষয়টি সরকারের নজরে আছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছি এবং তদন্তমূলক ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাবে তা মেনে নেওয়া হবে না। সরকার এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’প্রসঙ্গ ইনভয়েসিং ও মুদ্রা পাচার : আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং ও রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিং মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে পাচারের এ ধরনের প্রাক্কলন গত কয়েক বছরে দেশের বাজারে বিদ্যমান তারল্য বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ টি এম শাজাহান কামালের (লক্ষ্মীপুর-৩) লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, দেশ থেকে অর্থ পাচারের মাত্রা বিপুল না হলেও পাচারের উৎসগুলো বন্ধ করার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ এবং বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সজাগ ও সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি আন্ডার ইনভয়েসিং বা ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের ঘটনা চিহ্নিত হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক বর্তমানে সংশ্লিষ্ট অপরাধ ছাড়াও মানি লন্ডারিং অপরাধের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
আট বছরে আটক সোনা : গত আট বছরে এনবিআরের হাতে আটক হয়েছে ৪ হাজার ৪৯০.৪৯৩ কেজি সোনা। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত অবৈধভাবে আসা এসব সোনা আটক করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন বিভিন্ন দফতর। তানভীর ইমামের (সিরাজগঞ্জ-৪) লিখিত প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য সংসদে তুলে ধরা হয়।
করদাতার সংখ্যা : গোলাম দস্তগীর গাজীর (নারায়ণগঞ্জ-১) প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে করদাতা ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৩ জন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিগত আট বছরে করদাতাদের মধ্যে করনেটে আবদ্ধ হওয়াকে যে হয়রানি মনে করা হতো সেই পরিস্থিতি এখন পরিবর্তিত বলে প্রতিভাত হয়। দেশের উন্নয়নের জন্য কর প্রদান তরুণ প্রজন্মের কাছে আর ভয়ভীতি বা হয়রানি বলে মনে হয় না। এ সময় তিনি করদাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে করদাতা শনাক্ত ও কর আদায়ের বিভিন্ন পদক্ষেপ বিস্তারিত তুলে ধরেন।
বৈদেশিক সহায়তা : আবদুল মতিনের (মৌলভীবাজার-২) তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি দশকে ২০১১-২০১৬ সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে গড়ে ৩৪ শতাংশ বৈদেশিক সাহায়তা থেকে অর্থায়ন হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করে আসছে। তবে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে কমছে। ১৯৮০ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় ৫১ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্য থেকে অর্থায়ন করা হতো, যা ১৯৯১-২০০০ সালে ৪৪ ও ২০০১-২০১০ সাল পর্যন্ত ৩৭ শতাংশ কমেছে।