রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশেষজ্ঞ মত

দরকার নজরদারি স্থায়ী পরিকল্পনা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দখল, দূষণ আর সচেতনতার অভাবে রাজধানীর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে খালগুলো। খাল উদ্ধারে কিছু তৎপরতা মাঝেমধ্যে চোখে পড়লেও কাজে আসছে না এসব উদ্যোগ। খাল উদ্ধারে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন উল্লেখ করে নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকার ভিতরে এবং চারপাশে প্রায় ৪৮টির মতো খাল ছিল। কিন্তু এগুলোর মধ্যে অনেক খাল পরিকল্পিতভাবে দখল করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আর বেশ কয়েকটি বর্জ্য ফেলায় বদ্ধ হয়ে গেছে। ওয়াসা, সিটি করপোরেশন দু-একটা খাল উদ্ধারের চেষ্টা করলেও এ উদ্যোগ কোনো কাজে আসেনি। এ ক্ষেত্রে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন পুরোপুরি ব্যর্থ। তাই সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে এবং খাল উদ্ধারের কাজ এগিয়ে নিতে উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। কঠোর নজরদারির আওতায় না আনলে এখন পর্যন্ত টিকে থাকা খালগুলোকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। গতকাল খাল রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ধোলাইখাল, ডিএনডি খাল নিশ্চিহ্নপ্রায়। নিকুঞ্জের চারপাশে যে পরিখা নির্মাণ করা হয়েছিল, সংরক্ষণের অভাবে তা সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এর মধ্যে নতুন করে খাল কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। আগের খালগুলো উদ্ধারেই কোনো তৎপরতা নেই, নতুন খালের ভবিষ্যৎ কী হবে তা পরেই দেখা যাবে। খাল উদ্ধারে সমন্বয়ে জোর দিয়ে নগরবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ঢাকার খালগুলো দূষণ আর অবৈধ দখলে বিলীন হয়ে গেছে। বদ্ধ হয়ে গেছে। এগুলো উদ্ধারে ওয়াসা, সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। একসঙ্গে পরিকল্পনা করে খালগুলো উদ্ধার করতে হবে। এই খালগুলো উদ্ধার হলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা অনেকটা কমে যাবে। খাল উদ্ধারে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের উল্লেখ করে এই নগরবিদ বলেন, ঢাকায় কী পরিমাণ খাল ছিল, সেগুলো কোন এলাকা থেকে কোন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, তা স্যাটেলাইট ম্যাপের মাধ্যমে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বের করা সম্ভব। এ ছাড়া টিএস ম্যাপের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এভাবে খাল উদ্ধারে সরকার তৎপর হলে দুই বছরের মধ্যে দখল হওয়া খাল উদ্ধার সম্ভব। আর পরিকল্পিত উদ্যোগে ঢাকার চারপাশে গড়ে তোলা যাবে হাতির ঝিলের মতো নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। এ জন্য যদি নদী-খাল উদ্ধার আইন তৈরির প্রয়োজন হয়, তাহলে সে বিষয়টিও ভাবতে হবে।

খাল টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী পরিকল্পনার বিষয়ে জোর দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলেন, খাল একবার কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করে, তা আবার ভরাট করে দখল করা হয়। এভাবে উদ্ধার ও দখল পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে। তাই শুধু খাল উদ্ধার করলে চলবে না, পাশাপাশি স্থায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে। খালের চারপাশে প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা, ফুটপাথ তৈরি করতে হবে। এরপর চারপাশে গাছ লাগিয়ে এই পরিকল্পনাকে স্থায়ী রূপ দিতে হবে। এভাবে প্রতিটি খাল অনুযায়ী পরিকল্পনা করলে পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করে জলাবদ্ধতা থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, খাল উদ্ধারে প্রয়োজন আন্তরিকতা, উদ্যোগ, বরাদ্দ ও স্বচ্ছতা। খালগুলো বাঁচিয়ে রাখতে শুধু ওপরের ময়লা পরিষ্কার করলে হবে না। এর তলদেশে জমে থাকা শক্ত পদার্থ সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ খালের তলদেশ ভরাট হয়ে গেলে তা পানি ধারণ করতে পারবে না। আর খাল যদি পানি ধারণ করতে না পারে, তাহলে ড্রেনের পানি যাওয়ার জায়গা না পেয়ে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। এ জন্য পরিকল্পনা করে খালের তলদেশ ড্রেজিং করতে হবে।

সর্বশেষ খবর