রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তায় তিন হাজার হজযাত্রী

হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা

মোস্তফা কাজল

চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে আসা শত শত যাত্রীকে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অব্যবস্থাপনা নিয়ে হজযাত্রীদের বিক্ষোভ হচ্ছে বিমানবন্দর ও হজ ক্যাম্পে। বাদ যায়নি মক্কার বাংলাদেশ হজ মিশন অফিসও। অব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে বর্ধিত মোয়াল্লেম ফি, মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া, ই-ভিসা জটিলতা, নিম্নমানের ট্রলি ব্যাগ প্রদান, ফ্লাইট জটিলতায় প্রায় তিন হাজার হজযাত্রীর পবিত্র হজ পালনে অনিশ্চয়তা ইত্যাদি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ সেপ্টেম্বর হজ অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৪ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের হজ ফ্লাইট। ফলে গত ছয়দিনে বাংলাদেশ থেকে ব্যালটি ও নন ব্যালটি মিলিয়ে ১৯ হাজার ১১ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুই হাজার ৮৭৬ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ১৬ হাজার ১৩৫ জন। হজ যাত্রীদের সবাই মক্কায় গিয়ে জানতে পেরেছেন মোয়াল্লেম ফির কোটা শেষ হওয়ায় তাদের সবাইকে ৭২০ রিয়ালের স্থলে ১৫০০ রিয়াল পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে তারা হজ পালন করতে পারবেন না। এমন ঘোষণায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের যাত্রীরা। বর্ধিত এ ৭৮০ রিয়াল সৌদি আরবের মোয়াল্লেমদের চাপে বাংলাদেশের হজ এজেন্টরা হজযাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় সেখানে অবস্থানরত প্রায় আড়াই হাজার হজযাত্রীর পক্ষে বর্ধিত মাথাপিছু ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না। এদের অনেকে মুঠো ফোনে ঢাকার পরিচালক হজ অফিসে অভিযোগ করেছেন। গোলাম কিবরিয়া নামে এক হজযাত্রী অভিযোগ করেছেন হজ এজেন্টরা যে ট্রলি ব্যাগ দিয়েছেন, তা নিম্নমানের। বিমানে ওঠার আগেই তার ট্রলি ব্যাগ ভেঙে গেছে। এমন অবস্থায় অনেকের মতো তাকেও রশি দিয়ে বেঁধে ট্রলি নিয়ে হজযাত্রায় শরিক হতে হয়েছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সহকারী হজ অফিসার মো. আবদুল মালেক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্ধিত মেয়াল্লেম ফির বিষয়ে হজ অফিস অবগত। বাংলাদেশি হাজিরা বাড়তি টাকা ঢাকা থেকে সঙ্গেও নেননি। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানান হয়েছে। আশা করছি আমরা সমাধান করতে পারব। ভিসা ও ফ্লাইট জটিলতার বিষয়ে হজ এজেন্টদের কারণে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন। ট্রলি ব্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, এবার হজ এজেন্টরা (হাব) হাজীদের ট্রলি ব্যাগ সরবরাহ করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে দায়ী হজ এজেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া ই-ভিসা জটিলতায় গতকাল পর্যন্ত ৪২ হজযাত্রীর হজযাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। এসব হজযাত্রী কবে নাগাদ যেতে পারবেন সঠিকভাবে বলতে পারছেন না কেউই। কিন্তু নতুনভাবে বিমান টিকিট কিনে যেতে হলে মাথাপিছু ৩৫০ রিয়াল গুনতে হবে। এ টাকা কে দেবে এমন জটিলতাও নতুনভাবে দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি না থাকায় গত শুক্রবার সৌদি এয়ারলাইন্সের আরও ৭৮ হজযাত্রী মক্কায় যেতে পারেননি। এদেরকেও এখন নতুন করে টিকিট কিনে সৌদি আরব যেতে হবে। এ নিয়ে গতকাল আশকোনা হজ অফিসে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা। এদিকে চলতি বছরের হজ কার্যক্রমে মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়ার কাজে এমপিদের সম্পৃক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ২৪ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির ২৮তম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল জলিল জানান, হাজীদের বাড়ি ভাড়ার কাজ করার জন্য যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবে গিয়ে বাড়ি ভাড়া করেছেন। শিগগিরই বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত চুক্তিপত্র সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি বলেছেন, বাড়ি ভাড়া করার আগে স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করলে স্থায়ী কমিটির দু-তিনজন সদস্য যেতে পারতেন। এতে কাজে স্বচ্ছতা প্রকাশ পেত।

সর্বশেষ খবর