শিরোনাম
শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
দুই দলের কূটনৈতিক রাজনীতি

পিছিয়ে পড়ছে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

পিছিয়ে পড়ছে বিএনপি

কূটনৈতিক রাজনীতিতেও ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে বিএনপি। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিএনপির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ফলশূন্য আন্দোলনে মামলা-হামলায় জর্জরিত দলটি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বর্তমানে দলটিতে চাঙ্গাভাব চলে এলেও বৈদেশিক যোগাযোগে তেমন কোনো দৃশ্যমান সাফল্য নেই বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। ৫ জানুয়ারির আগে ও পরে যেসব কূটনীতিক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তাদের পর্যায়ক্রমে সরকারের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণায় বিএনপির ভিতরে-বাইরেও হতাশা নেমে আসে। তবে তাদের দাবি পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন বিএনপির কূটনৈতিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, বিএনপির কূটনৈতিক যোগাযোগ আগের মতোই আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কী হবে, তা স্পষ্ট করতে পারছে না। কারণ, তিনি আদৌ শেষ পর্যন্ত থাকবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। তা ছাড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের মোদি সরকারের সঙ্গেও বিএনপি যোগাযোগের চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে মোদি প্রশাসনও চীন-পাকিস্তান নিয়ে ব্যাপক চাপে রয়েছে। বিএনপির প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কেও এখন ফাটল ধরেছে বলে স্বীকার করেন দলের নেতারা। সেখানেও যোগ্যদের কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে নেতাদের একটি অংশ মনে করছে। জানা যায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরপরই বিএনপির কূটনৈতিক উইং ভেঙে পড়ে। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী গ্রেফতার হয়ে একপর্যায়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেন। পররাষ্ট্র উইংয়ের আরেক প্রভাবশালী সদস্য সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানও গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন। এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। কূটনৈতিক উইংয়ের আরেক সদস্য সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এখন তিনি শারীরিকভাবেও বেশ অসুস্থ। বিএনপির সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসভবনে বোমা হামলার পর তাকে বেশ কিছু দিন কারাগারেও কাটাতে হয়। বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার তদন্ত শুরু হওয়ার পর দেশত্যাগ করেন তিনি। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের একটি ফোনালাপও ছেড়ে দেওয়া হয় ইন্টারনেটে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে স্বীকার করেন, ভারতের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তা হলো মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তখনকার ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। কংগ্রেস আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তাও করে। সেই সূত্র ধরেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরও কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এটা ক্ষমতাসীনদের জন্য অতিরিক্ত পাওনা। তবে বিএনপির সঙ্গে যে সম্পর্ক খারাপ তাও বলা যাবে না। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন রয়েছে। এখন আগামীতে প্রতিবেশী এই রাষ্ট্র কী ভূমিকা পালন করবে তাই দেখার বিষয়। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘ভারত একটি বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তার সঙ্গে আমরাও সুসম্পর্কে বিশ্বাসী। কিন্তু তা হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। বিশেষ করে রাজনীতি, অর্থনীতি আর কূটনীতিতে সুসম্পর্ক জোরদার করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমেরিকার সঙ্গে কোনো দেশই এখন ধীরস্থিরভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনি। আমার জানা মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও পারেনি। সে ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি? তবে সব দেশের সঙ্গেই কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ও দলের ফরেন অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্যসচিব ড. আসাদুজ্জামান রিপনও একই কথা বলেন। তার মতে, ‘প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত নিজেরাই সমস্যায় আছে। এর পরও বিএনপি প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক জোরদার করতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএনপির মতো বড় একটি দলে কূটনীতিতেও আরও প্রভাবশালী নেতৃত্ব থাকা জরুরি। বিশেষ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খানকেও কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগানো উচিত। যার যে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন ও চলমান বাস্তবতায় তারা যে ভূমিকা পালন করতে পারবেন তা নবাগতদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিশ্ব বাস্তবতায় এই প্রবীণ নেতারা বিএনপিকে তুলে ধরতে পারবেন বলেও মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের দিকনির্দেশনায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই কথা বলে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ অনেকেই কূটনৈতিক ফোরামে কাজ করছেন। এ ছাড়া সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানকে আহ্বায়ক ও ড. আসাদুজ্জামান রিপনকে সদস্যসচিব করে ফরেন অ্যাডভাইজারি কমিটি পুনর্গঠন করা হয় বলে জানা গেছে। ওই কমিটির সদস্য হলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও নজরুল ইসলাম আজাদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর