সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দূষণ এড়ানো না গেলে নদী নষ্ট হয়ে যাবে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। ঢাকাকে ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদের দূষণমুক্ত রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। গতকাল সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতীয় পরিবেশ কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারা দেশে ব্যাপক বনায়নের কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় কারও মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে নিজেদেরই আরও সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, দেশের বড় শহরগুলোর পাশের নদী রক্ষার জন্য শিল্প বর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্যের আলাদা শোধনাগারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রত্যেকটি নদীরই একটা সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।  অতিবৃষ্টিতে জনদুর্ভোগ হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বৃষ্টির কারণে নদীর দূষণ কমেছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বেড়েছে যা পরিবেশের জন্য ইতিবাচক। সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুরক্ষার পাশাপাশি নতুন নতুন বন গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন তিনি। অতীতের সামরিক সরকারগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইয়ুব খান, তারপর জিয়াউর রহমান, এরশাদ তিনজনই মনের মতো করে এসব খাল, বিল, পুকুর সব ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। বনানী লেক, সেগুনবাগিচা খাল, ধোলাইখাল, শান্তিনগর খাল কোনোটাই নাই। যার ফলে জলাবদ্ধতা হবে। আর বাড়িঘর যখন কেউ বানায় ড্রেনের জন্য জায়গা রাখে না, সরকারি নিয়মও মানে না।  জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। সুন্দরবনকে সৃষ্টিকর্তার উপহার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি নতুন বনায়নের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, জীবিকা নির্বাহের জন্য কেউ যাতে সুন্দরবনের গাছ না কাটে, সেজন্য ওই এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে জনভোগান্তির কথা বৈঠকে এলে প্রধানমন্ত্রী এর ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেন বলে তার প্রেস সচিব জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতিবৃষ্টি নদীর দূষণ রোধ করার পাশাপাশি লবণাক্ততা কমায়।  বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ২২ শ্রাবণে প্রয়াণ দিবসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ করেন। কৃষকদের উন্নয়নে কবিগুরুর বিভিন্ন কাজের কথাও তিনি এ সময় তুলে ধরেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ইইউর প্রস্তাব স্বাগত জানালেন প্রধানমন্ত্রী : এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুন। এ সময় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রশংসা করে বলেন, আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল প্রেরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে তাদের উদ্যোগে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে বাংলাদেশ এই লক্ষ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে যা উভয়ের জন্য লাভজনক।  ইহসানুল করিম বলেন, ইইউ রাষ্ট্রদূতও বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর কথা বলেছেন। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক পরিবেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ ও ইইউ ব্যবসায়িক সংলাপ প্রক্রিয়ার প্রশংসাও করেন তিনি।

পিয়েরে মায়েদুন বাংলাদেশের শ্রম আইন ও ইপিজেড-এর খসড়া আইন আরও পর্যালোচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন। শ্রম অধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশকে সফলতার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।  বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রসঙ্গে পিয়েরে মায়েদুন বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করা হবে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতার জন্য ইইউর নেওয়া ‘ইউরো হরাইজন ২০২০’ বাংলাদেশের আরও বেশি অংশগ্রহণে উৎসাহ দেন তিনি। ‘হরাইজন ২০২০’ অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নির্দেশনা প্রদান করেন শেখ হাসিনা। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম।

সর্বশেষ খবর