একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা। তারা বলেছেন, ইসি সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনে কালো টাকা-সন্ত্রাসী-মস্তানের দৌরাত্ম্য বন্ধসহ ‘না’ ভোট চালু করারও পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে আস্থা অর্জনের কথাও বলেছেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইন সংস্কার, সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে তারা এ মত তুলে ধরেন। গতকাল প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সংলাপে এসব বিষয়ে পরামর্শ এসেছে। সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপ শেষে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের দুটি বিষয় ছিল গর্বের। আমরা বড়াই করে বলতাম। নির্বাচন ও গণমাধ্যম দুটিই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনের ইতিহাস হচ্ছে রক্তাক্ত। ১৯৯৪ সালে যদি মাগুরার নির্বাচন বিচারপতি এম এ রউফ বাতিল করতেন তাহলে ২০১৪ সালের নির্বাচন দেখতে হতো না। রেফারি ভালো না হলে খেলা ভালো হয় না।’ সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়। আমরা কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নই যে, আমাদের এখানে সেনা মোতায়েন করা যাবে না।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘আমরা বলেছি, আপনারা (ইসি) রোল প্লে করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ব্যবস্থা করবেন, যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে। সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে অনেক সংকট আছে, তার সমাধান করতে হবে।’ সংলাপে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আমাদের অর্থনীতি সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, যায়যায়দিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী রুকনুদ্দীন আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, মাহফুজ উল্লাহ, কাজী সিরাজ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিস সৈকত, বিএফইউজে একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব ওমর ফারুক, অপরাংশের মহাসচিব মো. আবদুল্লাহ, সাংবাদিক আনিস আলমগীর, সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মর্তুজা, কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকার, সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুব কামাল ও শামসুল হক।
গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন (অব.), ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বেলা আড়াইটায় সংলাপের বিষয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রাপ্ত সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ সংলাপে ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন। আজ (বৃহস্পতিবার) অনলাইন, টিভি ও রেডিওর সাংবাদিকদের সঙ্গে বসবে ইসি। পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গে বসে সব সুপারিশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। এ সংলাপের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উত্থাপিত প্রস্তাব : ১. সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন। ২. বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ। ৩. সেনা মোতায়েনের পক্ষে বলেছেন কেউ কেউ; অধিকাংশই বলেছেন সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। ৪. ‘না’ ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে মত; কেউ ভালো বলেছেন, কেউ ‘না’ ভোটের বিপক্ষে বলেছেন। ৫. দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন। ৬. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় করা। ৭. জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ। ৮. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। ৯. আচরণবিধি প্রয়োগে কঠোরতা। ১০. প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার ও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা। ১১. নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ। ১২. ধর্মকে কোনোভাবেই যাতে ভোটের প্রচারে ব্যবহার করতে না পারে। ১৩. অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ। ১৪. প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ ও প্রচারের উদ্যোগী হওয়া। ১৫. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও কাউকে যেন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে না হয়। ১৬. ইসির দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন। ১৭. অনলাইনে মনোনয়ন নেওয়ার সুযোগ দান। ১৮. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিকরণ। ১৯. ভোটার ও প্রার্থীর আস্থা অর্জন। ২০. নারী ভোটারের উপস্থিতি ও নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি ধরে রাখতে ভূমিকা নেওয়া। এ ছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল যাতে নিবন্ধন না পায় এবং জামায়াতে ইসলামী যাতে অন্য কোনো নামে বা অন্য কোনো ফরম্যাটে ভোট করতে না পারে সে বিষয়ে আইনি উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ এসেছে।