শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফের আলোচনায় আইএসে বাংলাদেশি কানেকশন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে বাংলাদেশি সম্পৃক্ততার কথা ফের আলোচনায় এসেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। এর মধ্যে সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের হাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার যুবক তাবিরুল হাসিবকে (২৫) খুঁজছে ইন্টারপোল। সম্ভাব্য আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হিসেবে ১৭৩ আইএস জঙ্গিকে খোঁজার কথা জানিয়েছে ইন্টারপোল। ওই তালিকায় আছেন তাবিরুল। তিনি সিরিয়ায় বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করছেন। প্রায় একই সময়ে আইএস অর্থায়নের নেটওয়ার্কে কাজ করা লন্ডনপ্রবাসী বাংলাদেশি সাইফুল সুজনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নতুন তথ্য পেয়েছেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। তবে এই সাইফুল সুজন সিরিয়ায় একটি বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। কানাডাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইএসের ১৭৩ জঙ্গির তালিকা করেছে ইন্টারপোল। ইন্টারপোলের তালিকায় তাবিরুলসহ কানাডীয় নাগরিকদের সম্পৃক্ততার তথ্য খুঁজে বের করা সন্ত্রাসবাদ গবেষক অধ্যাপক অমরনাথ অমরাসিঙ্গাম বলেছেন, ‘এই লোকগুলোর অনেকে এখন বিভিন্ন দেশে হামলা চালানোর জন্য শ্বাস ফেলছেন’— এই ভয় থেকে ওই তালিকা প্রচার করছে ইন্টারপোল। তার ভাষ্যমতে, তালিকার অধিকাংশই ইরাকি। এর বেশির ভাগই ইউরোপের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে তাদের মধ্যে বাংলাদেশি-কানাডিয়ানসহ বেশ কয়েকজন পশ্চিমা নাগরিক আছেন। আন্দ্রে পলিন নামের এক ধর্মান্তরিত মুসলিমের মাধ্যমে টরেন্টোয় বাংলাদেশি ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত একদল তরুণ-যুবা আইএসে যোগ দিয়েছিলেন। ওই দলেই ছিলেন তাবিরুল। তাবিরুল অন্য তিন যুবকের সঙ্গে আইএসের লড়াইয়ে অংশ নিতে সিরিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন ২০১২ সালে। কিন্তু তখন তাদের লেবানন থেকে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছিল পরিবারগুলো। ঘটনাটি তখন পুলিশের কাছে চেপে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪-এর জুলাইয়ে তাবিরুল, মালিক আবদুল ও তাদের অন্তত এক বন্ধু তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় চলে যান। আইএসের ফাঁস হওয়া নথিতে সে বছরের ১৪ জুলাই সিরিয়ার তাল আবিয়াদে তাদের পৌঁছানোর তথ্য রয়েছে। আইএসে যোগ দিতে পূরণ করা ফরমে তাবিরুলের দেওয়া তথ্যমতে, তিনি অবিবাহিত, আইএসের যোদ্ধা হতে চান এবং তার আগে লেবানন ও বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। ইন্টারপোলের তালিকায়ও তাবিরুলের ২০১৪ সালের জুলাইয়ে আইএসে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ‘আবু বকর বাংলাদেশি’ নাম নিয়েছিলেন তিনি। এই জঙ্গি থাকতেন ‘ব্যাটালিয়ন গেস্টহাউসে’। গবেষক অমরাসিঙ্গাম বলেন, অন্টারিয়র মিসিসাগার সাবেক বাসিন্দা ও পরে সিরিয়ার আইএস সদস্য মোহাম্মদ আলীর সহায়তায় জঙ্গিগোষ্ঠীটিতে জড়িয়েছিলেন তাবিরুল ও তার বন্ধুরা। তাদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া নিয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে মালিক আবদুলের ছোট ভাই কাদির আবদুলকে তুরস্কের পুলিশ গ্রেফতারের পর কানাডায় পাঠায়। গত এপ্রিলে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী আদানা শহর থেকে কাদিরকে গ্রেফতার করে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে কাদির ফেসবুকে তাবিরুলের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কাদিরের ভাই মালিক এবং তাদের সঙ্গে কানাডা থেকে আসা আরেকজন ২০১৪ সালের নভেম্বরে ও ২০১৫ সালের প্রথম দিকে নিহত হন বলে তাবিরুল তাকে জানান। অবশ্য কাদিরের ধারণা, তাবিরুলও পরে রুশ বিমান হামলায় মারা পড়তে পারেন। তবে অমরাসিঙ্গাম বলছেন, ‘মনে হচ্ছে তাবিরুল এখনো জীবিত। তবে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই।’ অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সানডে টাইমস’ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) কিছু নথিতে যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাস পরিকল্পনায় অর্থায়নে এক বাংলাদেশির সম্পৃক্ততার তথ্য আছে। এ অর্থায়ন হয়েছে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের একটি অনলাইনভিত্তিক নেটওয়ার্কে। এ নেটওয়ার্কেই সম্পৃক্ত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়া সাইফুল সুজন। এফবিআইর নথি বলছে, স্পেনে এক ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি করেছেন জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা। এ নজরদারির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগসূত্র পাওয়া গেছে। মূলত স্পেনে এসব নজরদারি উপকরণ সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ‘পিটার সরেন’ নামের একটি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশি সাইফুল সুজন। তিনিই ছিলেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি। সে সময় সুজন ও তার সঙ্গীরা কয়েকটি কোম্পানিকে একত্র করে ‘ইবাকস’ নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ওয়েবসাইট ও প্রিন্টিং সেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হতো। যুক্তরাজ্যের কার্ডিফের ত্রেমোরফা এলাকায় আলেকজান্দ্রা গেট বিজনেস পার্কে তাদের একটা অফিস ছিল। মূলত ওয়েবসাইট ও প্রিন্টিং সেবার আড়ালে তারা জঙ্গিবাদের অর্থ সংগ্রহ করার দায়িত্বে ছিলেন। বছর তিনেক আগে এ প্রক্রিয়া বেশ শক্তভাবে চালু করার পর যুক্তরাজ্য থেকে সপরিবারে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ার উদ্দেশে রওনা হন সাইফুল। পরে সিরিয়ায় আইএসের কার্যত রাজধানী রাকায় মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন সাইফুল সুজন। এখন পশ্চিমা গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, সুজন সিরিয়ায় মারা যাওয়ার পর তার ও সঙ্গীদের কোম্পানিগুলো আরও জোরালোভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে।

সর্বশেষ খবর