শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রায় যুক্তিনির্ভর নয় অগ্রহণযোগ্য

------- তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘আদালতের বারান্দায় কোনো বিচারপতির রায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রসঙ্গে খণ্ডিত, বিকৃত, উদ্দেশ্যমূলক কোনো রায়ের নামে ইতিহাসের ভ্রান্তচর্চার মাধ্যমে জাতির ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো সম্ভব নয়।’ তথ্যমন্ত্রী গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের উদ্দেশ্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নয়, বরং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বকে বিতর্কিত করা। এ ছাড়া তার এ বক্তব্য সামরিক শাসনের জঞ্জালকে পুনরায় টেনে আনার অপপ্রয়াস, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষমূলক। এ রায় যুক্তিনির্ভর নয়, অগ্রহণযোগ্য। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলও ত্রুটিমুক্ত নয়।’ হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘রায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার অধিকার স্বীকৃত। কিন্তু রায়ের পরও রাজনৈতিক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে বলেই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মাত্রা কিছুটা তীব্র। পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে এনে প্রধান বিচারপতি নিজেই উত্তেজনা বাড়িয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘এ রায় কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেনি এবং সরকার ও বিচার বিভাগকে মুখোমুখিও করেনি। এ রায়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনেরও কিছু নেই। সরকার পরিচালনায় কোনো প্রভাবও ফেলবে না। কোনো অচলাবস্থাও তৈরি হবে না।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে বিচারকাজ ও বিচার প্রক্রিয়ায় সরকারের বা বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ বা প্রভাব না থাকা। সংবিধানপ্রদত্ত এই স্বাধীনতা সরকার অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। আপনারা দেখেছেন, এ রায়ের পর থেকে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত সরকারের কেউই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের ব্যক্তিবর্গের রায়সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ, সরকারকে বিচার বিভাগের মুখোমুখি দাঁড়ও করায়নি এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও ক্ষুণ্ন হয়নি। এ রায়ে যারা উল্লসিত হয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছেন এবং কাল্পনিক সাংঘর্ষিক অবস্থা খুঁজে পাচ্ছেন, তারা মূলত চক্রান্তের রাজনীতির পাঁয়তারা করছেন।’ তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সরকার রায়ের জায়গাটুকু ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি বা রায়ের প্রক্রিয়ায় কোনো হস্তক্ষেপও করেনি। রায়ের বিষয়বহির্ভূত প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, সে বক্তব্যই বিতর্কের সূচনা করেছে। সরকার কোনো বিতর্কের সূচনা করেনি। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের ব্যক্তিবর্গ প্রধান বিচারপতির অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যের উত্তর দিয়েছেন মাত্র।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ সম্পর্কে তির্যক মন্তব্য করলে তাতে প্রধান বিচারপতির শপথভঙ্গ হয় কিনা। তিনি সংসদকে কোনো নির্দেশ দিতে পারেন কিনা। রায় পর্যবেক্ষণে ’৭১-এর শান্তি কমিটি দিনে রাজাকারি ও রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী— এ মন্তব্য করে তিনি রাজাকারদের হালাল করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফাঁদ পেতেছেন কিনা। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদে বলা আছে সুপ্রিম কোর্টের রায় অধস্তন আদালতের অবশ্যই পালনীয়। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ হাই কোর্টে বিচারাধীন অবস্থায় এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ কি সেই বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত বা প্রভাবান্বিত করল না?’ তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা এ রায় পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করছি কীভাবে একে আইনি প্রক্রিয়ায় অপ্রাসঙ্গিক সব পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারসহ রায় পুনর্বিবেচনা করা যায়। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিও ভূমিকা রাখতে পারেন। সংসদ রায়ের ওপর আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে। এবং সেই সঙ্গে মাননীয় প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন কিনা, তাও বিচার্য। মাননীয় প্রধান বিচারপতি যেখানে নিজেই অনভিপ্রেত মন্তব্য দিয়ে বিতর্কের সূচনা করে জনমনে নিজেকে এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকে একটি বিতর্কিত অবস্থানে নিয়ে গেছেন, এই ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তিনি নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের অবসান ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখবেন কিনা তাকে ভেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘সরকার কখনই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে চায়নি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপও করতে চায় না। রায়ে প্রধান বিচারপতি যেসব অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়েছেন, সেই সম্পর্কে কথা বলা মানে হস্তক্ষেপ নয়।’ তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ সংবিধানের প্রতিনিধিত্ব করছে, জনগণের নয়।’

সর্বশেষ খবর