শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বক্তব্য মিস কোট না করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বক্তব্য মিস কোট না করার আহ্বান

মামলার শুনানির সময় বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যকার কথোপকথন ভুলভাবে প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার একটি আবেদন— আমি প্রকৃতপক্ষে কোনো “ইয়ে” করি না। আপনারা আমাকে অনেক ইয়ে করছেন। কিন্তু “মিস কোট” করবেন না। আমাকে নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। আমি কোর্টে যা বলি, কিছু মিস কোটেট করা হয়। এতে গিয়ে আমাকে একটু বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।’ তিনি বলেন, ‘(গণমাধ্যমে মিস কোটেট করা হলে) আমার পক্ষে প্রেস কনফারেন্স করে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। বিচারক হিসেবে মামলার শুনানির সময় আইনজীবীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করি। প্রশ্ন কী কারণে, কোন উদ্দেশ্যে, না বুঝে এটা বলাটা অনেক সময় ভুলভ্রান্তির সৃষ্টি করে।’ গতকাল রাজধানীতে ‘জুডিশিয়াল ইন্টারপ্রিটিশন’ নামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হাই কোর্ট বিভাগের, আপিল বিভাগের, একেবারে নিম্ন আদালতের যারা বিচারক আছেন, তাদের বলব যে, আপনারা আপনাদের পাস্ট ভুলে যান। এই বিচার বিভাগে আপনি যখন বিচারক, আপনাকে প্রেজেন্ট এবং ফিউচার, এই জাতির জন্য এই ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে কতজন বিচারক, মাত্র সারা বাংলাদেশে ১৫০০-১৬০০ বিচারক। অনেক দায়িত্ব আপনাদের নিরপেক্ষভাবে বিচার করার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘যদি রাজনীতি করতে হয়, আপনারা ছেড়ে চলে যান। মানুষের অধিকার যাতে রক্ষা করতে পারি সেভাবে আমি বিজ্ঞ আইনজীবীদেরও বলব। এই সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যান। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া কোনোমতেই আমরা কোনো মামলা নিষ্পত্তি করতে পারব না।’ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা নথি যখন পর্যালোচনা করলাম, যেহেতু এটা ফাইনাল কোর্ট, আমরা দেখলাম যে, অনেক ত্রুটি ছিল, যেমন ইনভেস্টিগেশনে ত্রুটি ছিল, তেমনি প্রসিকিউশনেও ত্রুটি ছিল। আমি হয়তো ভবিষ্যতে কিছু লেখার চিন্তাভাবনা করছি। আমি তুলে ধরব। শুধু এই মামলা নয়, জেলহত্যা মামলা, সেখানেও কিন্তু অনেক ত্রুটি ছিল এবং অনেক গাফিলতি ছিল।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা দুটি রায় পর্যালোচনা করে দেখবেন, ট্রায়াল কোর্টের জাজমেন্ট এবং হাই কোর্টের জাজমেন্ট আমরা কিন্তু মানিনি। আমরা দুটি রায় না মেনে পরিষ্কার বলেছি এটা ক্রিমিনাল কনস্পিরেসি ছিল। ক্রিমিনাল কনস্পিরেসি যদি হয়, এটা ক্যান্টনমেন্ট থেকে কনস্পিরেসি হয়েছিল। এই কনস্পিরেসিতে কে কে জড়িত ছিল, কনস্পিরেসিতে একজনে যদি ইয়ে থাকে, তার সঙ্গে আরও যারা আছে প্রত্যেকে সমানভাবে দায়ী।’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘এখন যারা বড় বড় কথা বলেন, আমি হয়তো একজন প্রধান বিচারপতি হিসেবে পারছি না। হয়তো আমি একদিন কিছু লিখে যাব। আমি দেখিয়ে দেব যে, ষড়যন্ত্রের মধ্যে কারা ছিল, সেনাবাহিনীর মধ্যেও অনেকে সরকারি কোষাগার থেকে বেনিফিট নিয়ে চলে গেছেন। তাদের তো পাওয়ার কথা ছিল না।’ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বাধীন দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে। এই স্বাধীনতা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। স্বাধীনতা ধরে রাখতে হলে দাঁড়াতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। একটা স্বৈরাচার নয়, বহু স্বৈরাচার দেখেছি। কোন শক্তি আছে যে, আমাদের সংবিধানকে অমান্য করবে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি যে, আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ সংবিধানকে অমর্যাদা করতে পারবে না। জীবন দিতেও রাজি আছি, বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত দলিলকে কে অসম্মান করবে। তিনি যেটা দিয়ে গেছেন সেটা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবারই। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত দলিলকে চোখ রাঙাবে, অসম্মান করবে, হবে না, এটা বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, সংবিধানে রাষ্ট্রের যে চরিত্র লেখা আছে, এটাকে রাজতন্ত্র বানানোর ক্ষমতা কারও নেই। এটা প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র থাকবে। জনগণ ক্ষমতার মালিক, এটাকে কেউ চেঞ্জ করতে পারবে না।’

সর্বশেষ খবর