রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধর্মগুরুতে উত্তাল ভারত

কলকাতা প্রতিনিধি

স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ধর্ষণ মামলায় আদালত দোষী সাব্যস্ত করার ঘটনায় গত শুক্রবার হরিয়ানাসহ ৫ রাজ্যে তার ভক্তদের রক্তক্ষয়ী তাণ্ডবের পর ভারতের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো বিজেপি শাসিত হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টুর পদত্যাগ দাবি করেছে। একই সঙ্গে তারা ওই রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন দাবি করেছে। শুক্রবারের তাণ্ডবের সময় ভক্ত এবং নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৬ জন নিহত এবং আড়াইশর বেশি মানুষ আহত হন। গতকালও পরিস্থিতি ছিল থমথমে। তবে দিল্লির পাঁচকুলাসহ সহিংসতা কবলিত এলাকায় আর কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ‘ডেরা সাচ্চা সওদা’ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের আশ্রমটি সেনা ও রায়ট পুলিশ ঘিরে রাখে। সেখানে দুই কোম্পানি এবং ১০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ওই আশ্রমের ভিতরে এখনো প্রায় লাখখানেক ভক্ত রয়েছেন, যার মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। সেনা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে তাদের প্রত্যেককেই বাইরে বের হয়ে আসার জন্য বলা হচ্ছে। গত শুক্রবারের সহিংসতার পর গতকাল সকালে ১৫ জন ডেরা সমর্থককে আটক করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ধর্মগুরুকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতি এখন উত্তাল। সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্মকর্তাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সহিসংসতার ঘটনায় বিজেপি শাসিত হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টুর ইস্তফা চেয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা।

পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট পাঁচকুলায় সহিংসতা ছড়ানোর পেছনে হরিয়ানা রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছে। গতকাল আদালত এ জন্য ওই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলদেব রাজ মহাজনকে তীব্র ভর্ত্সনা করেছে। পাশাপাশি ডেরা সাচ্চা সওদাকে সমর্থন করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী খাট্টুকে দায়ী করেছে। অ্যাডভোকেট জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে হাই কোর্ট পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে, ‘আপনি (রাজ্য সরকার) আমাদের বিপথে পরিচালিত করেছেন। সহিংসতার ঘটনায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য ছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশের কারণেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে অচল করে রাখা হয়েছিল। ওই ঘটনায় একজন ডিসিপিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, কিন্তু সব ঘটনার জন্য কি শুধু তিনিই দায়ী ছিলেন? আপনি কি সে কথাই আমাদের বোঝাতে চাইছেন?’ আদালত আরও বলেছে, ‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বটে। গত সাত দিন ধরে কেন এতগুলো মানুষকে একসঙ্গে জড়ো হতে দিয়েছেন? আসলে মুখ্যমন্ত্রী তাদের সুরক্ষা দিচ্ছেন।’ এদিকে হরিয়ানা রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তেজনা প্রবণ এলাকাগুলোতে যাতে নতুন করে সহিংসতা ছড়াতে না পারে তার জন্য নিরাপত্তা আরও কঠোর করা হয়েছে। সারা রাত ধরে পাঁচকুলায় সেনা টহল দেয়। সকাল থেকেই পাঁচকুলা, সিরসা এবং কৈথাল এবং পাঞ্জাবের কয়েকটি জায়গায় কারফিউ জারি রয়েছে। যদিও সকালের দিকে কিছু সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। দিল্লির ১১টি জেলা এবং উত্তরপ্রদেশের ৯ জেলায় বড় ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদিকে হরিয়ানাসহ অন্য রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দিল্লিতে গতকাল জরুরি বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানেই হরিয়ানা, পাঞ্জাব, চণ্ডীগড়, দিল্লি, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। রোহতাক কারাগারে গুরু : দোষী সাব্যস্ত হওয়া ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে রাখা হয়েছে রোহতাক কারাগারের একটি বিশেষ সেলে। কাল সোমবার তার সাজার রায় ঘোষণা করা হবে। তার বিরুদ্ধে জেলের মধ্যেও বিশেষ সুবিধা ভোগ করার অভিযোগ উঠেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর