বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

হত্যার দায় স্বীকার পাঁচ আসামির

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ

মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল ও আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজের ছাত্রী রূপা প্রামাণিককে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামি। এর মধ্যে তিনজন  সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া বাকি দুজন এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং লাশ গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়াসহ ঘটনা ধামাচাপা দিতে সহায়তা করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। 

গতকাল বিকালে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম ও রূপম কুমার দাসের আদালতে বাস চালক হাবিব এবং সুপারভাইজার সফর আলীকে হাজির করা হয়। এ সময় তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এর আগে মঙ্গলবার আদালতে অন্য তিন আসামি বাস চালকের সহকারী জাহাঙ্গীর, শামীম ও আকরাম ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এদিকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা বোনের লাশ টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থান থেকে উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন নিহত রূপার ভাই হাফিজুল প্রামাণিক। তিনি বলেন, আদালত আদেশ দিলে কবর থেকে উত্তোলন করা হবে রূপার লাশ। যাবতীয় পুলিশি প্রক্রিয়া শেষে রূপার লাশ সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আছানবাড়ী গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

গত শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পঁচিশ মাইল (মধুপুর বন) এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে ওই তরুণীর লাশ অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। গত সোমবার থানায় সংরক্ষিত লাশের ছবি দেখে বোনকে শনাক্ত করেন বড় ভাই। তার কথার সূত্র ধরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের পাঁচ কর্মীকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন বাসচালক হাবিব (৪৫), সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫), চালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯)। আকরাম ও জাহাঙ্গীরের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। শামীমের বাড়ি মুক্তাগাছার নন্দীবাড়ি। হাবিব ও সফর আলীর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম বলেছেন, মধুপুরে চলন্ত বাসে তরুণীকে গণধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। অপরাধীরা যাতে শাস্তির আওতায় আসে সেজন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত শেষ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আগামী ২ মাসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে চার্জশিট দেওয়া হবে।

ফাঁসির দাবিতে ফুঁসছে দেশ : টাঙ্গাইলের ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার শিকার রূপার বাড়িতে চলছে মাতম। মেয়ের শোকে মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আদরের বোনকে হারিয়ে বার বার শোকে মূর্ছা যাচ্ছে দুই বোন। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠছে সিরাজগঞ্জসহ পুরো দেশের মানুষ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত হয়েছে মানববন্ধন। এ জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে দেওয়া হয়েছে বিবৃতি। তাড়াশ প্রেস ক্লাবের সামনে সচেতন নাগরিক সমাজ রূপা হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। যাত্রীদের সুরক্ষা এবং এ ঘটনার বিচার দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

পুলিশ সুপারের অনুদান : মেয়ে হত্যার খবর শোনার পর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন মা হাসনা হেনা। অবস্থার অবনতি হলে তাকে তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অসহায় মায়ের চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ দশ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আজ রূপার বাড়িতে যাবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ম ম আমজাদ হোসেন মিলন রূপার পরিবারকে যাবতীয় আইনি সহায়তা এবং ছোট বোনকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর