শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ ড্র

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ ড্র

ট্রফি হাতে দুই অধিনায়ক —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা গেলেন বার বার। সাকিব আল হাসান লিয়নের আগের বলটা স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন। ওয়ার্নারের বাম পাশ দিয়ে ভাগ্যক্রমে বলটা বেরিয়ে যায়। না হলে এটাও ক্যাচ হতে পারত। ঠিক পরের বলটাতে সাকিব আবারও নাথানকে স্লিপ দিয়ে বের করতে চেয়েছিলেন। এবার আর কোনো ভুল করেননি ওয়ার্নার। সহজ ক্যাচে ফিরিয়ে দেন সাকিবকে। কেবল সাকিব কেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একের পর এক ভুল করেই যান। আর অস্ট্রেলীয় বোলাররা উইকেট শিকারের উৎসবে মেতে উঠেন কয়েক মুহূর্ত পর পর। লিয়ন-ও’কেফেদের আঁকা-বাঁকা বলগুলো বাগে আনতে পারেননি কেউই। একের পর এক ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সবাই উইকেট ছাড়েন। ৭২ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ নিজেদের দ্বতীয় ইনিংসে ১৫৭ রানেই অলআউট হয়। ৮৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ঝড়োগতিতে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের কাছে সাড়ে তিন দিনে হেরেছিল তারা। অন্তত চতুর্থদিনে জয় না হলে কী আর হয়! অস্ট্রেলিয়া ঠিক তাই করল। মাঝখানে ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করে প্রবল বন্যার মুখে বালির বাঁধ দিতে চেয়েছিলেন মুস্তাফিজ। চট্টগ্রাম টেস্টের দুই ইনিংসেই ওয়ার্নারের উইকেট শিকার করলেন মুস্তাফিজ। তবে তার বালির বাঁধ টিকল না। বরং আরও দুর্বার গতিতে সব ভাসিয়ে নিল। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে নামার সময় দিনের খেলা ২০ ওভার বাকি ছিল। ওভার প্রতি ৪.৩ করে রান প্রয়োজন ছিল অসিদের। স্মিথবাহিনী তিন উইকেট হারিয়ে এই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় মাত্র ১৫.৩ ওভারেই! ৭ উইকেটে জিতল অস্ট্রেলিয়া। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্রতেই শেষ হলো। (বাংলাদেশ টেস্ট ইতিহাসে সপ্তমবারের মতো টেস্ট সিরিজ ড্র করল। এর আগে জিম্বাবুয়ে, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নিউজিল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ।) অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্নটা অধরাই রয়ে গেল টাইগারদের। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন ম্যাচে ১৩ (৭+৬) উইকেট শিকারি নাথান লিয়ন। সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতলেন দুই টেস্টেই সেঞ্চুরিসহ মোট ২৫১ রান করা ডেভিড ওয়ার্নার ও সিরিজে মোট ২২ উইকেট শিকারি নাথান লিয়ন যৌথভাবে।

মুস্তাফিজুর রহমান তৃতীয়দিন চট্টগ্রাম টেস্টের কথিত ফ্ল্যাট উইকেট থেকে দুটো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করে যেন চোখ খুলে দিয়েছিলেন অসি পেসার প্যাট কামিন্সের। গতকাল বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হতেই তার চোখ রাঙানি দেখা গেল। মুস্তাফিজ ঝলকে উদ্বুদ্ধ হয়েই যেন তিনি দুর্দান্ত এক বলে আউট করেন সৌম্য সরকারকে। প্যাট কামিন্সের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ফুল লেন্থের বল ডিফেন্স করতে গিয়ে ফার্স্ট স্লিপে রেনশকে ক্যাচ দেন সৌম্য (৯)। এই অসি পেসার কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলেন মুশফিককেও (৩১)। প্যাট কামিন্সই যদি এমন ভয়ঙ্কর হবেন তো লিয়নের জন্য তো এই উইকেটে ছিল উদযাপনের সব উপকরণ। তিনি করেছেনও তাই। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও নিলেন ৬ উইকেট। সিরিজে সবমিলিয়ে ২২ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের মধ্যে তিনিই এখন দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ১৮৮৭ সালে ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুই ম্যাচের সিরিজে সর্বোচ্চ ১৮টি উইকেট শিকার করেছিলেন জে জে ফেরিস। ১৩০ বছরের রেকর্ডটা নিজের করে নিলেন লিয়ন। অবশ্য অস্ট্রেলিয়া খুব কমই ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে থাকে।

আগেরদিন বৃষ্টি এবং আলো স্বল্পতায় খেলা কম হওয়ায় গতকাল চতুর্থ দিন শুরু হয় ত্রিশ মিনিট আগেই। দিনের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে মুস্তাফিজকে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন নাথান লিয়ন। অস্ট্রেলিয়া ৩৭৭ রানেই অলআউট হয়ে যায়। আর মুস্তাফিজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম পেসার হিসেবে চার উইকেট শিকারের গৌরব অর্জন করেন। এর আগে মাশরাফি ২০০৩ সালে ডারউইনে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। অবশ্য স্পিনারদের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক এবং সাকিব পাঁচটি করে উইকেট শিকার করেছেন।

আগেরদিনের ৩৭৭ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই নিজের উইকেটটা বিলিয়ে দেন নাথান লিয়ন। শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার অলআউটের ঘটনাটা কী তবে পূর্ব পরিকল্পিত ছিল! চতুর্থদিনে বাংলাদেশকে ব্যাটিং করানোটাই ছিল মূল লক্ষ্য!! সেই সঙ্গে জয়ও। সফল অস্ট্রেলিয়ার পরিকল্পনা।

সর্বশেষ খবর