সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের পাশে আওয়ামী লীগ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ১৫ হাজার জনকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত দুই দিন কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ বিতরণ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও আজ রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প দেখতে উখিয়া যাচ্ছেন।  গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের কয়েকটি তল্লাশি চৌকিতে উগ্রবাদীদের হামলার সূত্র ধরে রাখাইন রাজ্যে দমন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশ। জাতিগত বিরোধ ও ধ্বংসলীলার পর প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারে ঢল নামে রোহিঙ্গার। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার মধ্যে অনেকের আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হলেও তারা অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে (ক্যাম্প) খাদ্য ও পানি সংকট চরম আকার ধারণ করায় শরণার্থী হিসেবে আসা রোহিঙ্গাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত শনিবার থেকে কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ শুরু করে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমের নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাবেক ছাত্রনেতা ও দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক শাহাজাদা মহিউদ্দীন ও প্রশান্ত বড়ুয়া। গতকাল থেকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শুরু হয়েছে ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় টিমের সদস্য ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, আবদুর রহমান বদি এমপি, আশিকুল্লাহ রফিক এমপি, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, উখিয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী প্রমুখ। এ সময় এনামুল হক শামীম বলেন, মানবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আজ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা চালু করা হলো।

চমেক হাসপাতালে ভর্তি ৮৫ রোহিঙ্গা : শিশুকন্যা সেহানি। মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু উপজেলার আথিক্কাপাড়ায় জন্ম তার। মাত্র ৪০ দিন আগে জন্মগ্রহণ করেছে সে। জন্মের এক মাসের মধ্যে সেহানিকে দেখতে হয় বিমর্ষ-ভয়ানক চিত্র। নিজ জন্মভূমে অমানুষিক নির্যাতন ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে সেহানিকে তার বাবা মো. হারুন নিয়ে আসে টেকনাফে। এরই মধ্যে সেহানি আক্রান্ত হয় হাম রোগে। অতঃপর তার ঠিকানা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। গতকাল বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে তাকে ভর্তি করা হয়।

সেহানির বাবা হারুন বলেন, ‘নিজ দেশে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে টেকনাফে আশ্রয় গ্রহণ করি। কিন্তু এরই মধ্যে ৪০ দিন বয়সী শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিত্সার জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এরপর কী হবে জানি না। ভবিষ্যৎ গন্তব্য অজানা।’

চমেক হাসপাতালের পুলিশফাঁড়ি সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানে গুলিবিদ্ধ, বিতাড়িত, পালিয়ে আসা এবং নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ৮৫ জন চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। চিকিত্সা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে আটজন। আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ৭৫ জন। ৩১ আগস্ট টেকনাফে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোহিঙ্গা শিশু মো. শোয়েব (১২) হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যায়। শোয়েব মিয়ানমারের মংডু এলাকার এনায়েত উল্লাহর ছেলে। টেকনাফের সোহানি ক্যাম্পে থাকত এই শিশু। এ ছাড়া ২৬ আগস্ট ভোরে মিয়ানমার থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসা মুছা নামের একজন মারা যান।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আমরা মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ চিকিত্সাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার হাসপাতাল থেকেই বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে যেসব ওষুধ থাকে না সেগুলো আমরা রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে নগদ অর্থে কিনে তাদের দিচ্ছি। তাদের সেবায় কোনো ত্রুটি থাকছে না। সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে চিকিত্সাসেবা দেওয়া হচ্ছে।’

হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বিকাল ৫টায় সেহানি নামের এক শিশুকে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে আসা মোট ৭৫ জন চিকিত্সাধীন। সবাইকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আছেন মোট ৭৫ জন। এর মধ্যে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ১ জন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১ জন, ১১ নম্বরে ৩ জন, ১২ নম্বরে ২ জন, ১৪ নম্বরে ১ জন, ১৯ নম্বরে ২ জন, ২৪ নম্বরে ৭ জন, ২৫ নম্বরে ৩ জন, ২৬ নম্বরে ৩৬ জন, ২৭ নম্বরে ৭ জন, ২৮ নম্বরে ৯ এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন ভর্তি আছে। গতকাল বিকালে ২৬ নম্বর অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চিকিত্সাধীন রয়েছেন ৩৬ জন। তবে সবাই হাসপাতালের চিকিত্সা পেয়ে খুশি। মংডু উপজেলার বাঘঘোনা গ্রামের আমান উল্লাহ (২৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। তিনি বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর ‘ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হই। অনেক কষ্টে এখানে এসে ভর্তি হয়েছি। এখন ভালো হওয়ার পথে।’

সর্বশেষ খবর