শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

উল্টে গেল ত্রাণের ট্রাক, ৯ শ্রমিক নিহত

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে

রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পথে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় রেড ক্রিসেন্টের একটি ট্রাক খাদে পড়ে নিহত হয়েছেন নয়জন শ্রমিক। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি-চাকঢালা সীমান্ত সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন আবদুল্লাহ (১৯), আবদুল জলিল (৪০), সুরত আলম (৩৫), সৈয়্যেদুল আমিন (৩২), মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (১৬), মামুনুল হাকিম (৩২), সুলতান আহমদ (৪৫), আবদুল মাবুদ (৫০) ও সুদর্শন বড়ুয়া (৫০)। তাদের মধ্যে প্রথম ছয়জন ঘটনাস্থলেই এবং পরের তিনজন হাসপাতালে মারা যান। দুর্ঘটনায় আরও ১৫ জন আহত হলে প্রথমে তাদের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে কয়েকজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিজিবি ও স্থানীয় লোকজন তাত্ক্ষণিকভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ট্রাকটি কক্সবাজারের উখিয়া থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বড় শণখোলায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিল। পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই ছয়জন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। হতাহত সবার বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। তারা রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণ বিতরণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। রেড ক্রিসেন্টের জেলা সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ট্রাকটি চাকঢালা সীমান্তের বড় শণখোলায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য যাচ্ছিল। উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে চাকঢালা বাজার অতিক্রম করে বিজিবির সীমান্ত চৌকির কাছাকাছি পৌঁছলে ট্রাকটি একটি ছোট কালভার্ট ভেঙে পাশের জমিতে উল্টে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও রেড ক্রিসেন্টের আরেকটি ট্রাকের শ্রমিক সাইফুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুটি ট্রাকে আমরা ছিলাম। আমি ছিলাম প্রথম ট্রাকে। আমাদের গাড়ি পার হলেও দ্বিতীয় ট্রাকটির পেছনের চাকা দেবে যায়। এতে ট্রাক উল্টে খাদে পড়ে গেলে চালের ওপরে থাকা শ্রমিকরা নিচে পড়ে যান। ফলে ঘটনাস্থলেই ছয়জন এবং পরে তিনজন হাসপাতালে মারা যান।’

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) সালমান করিম খান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা আহত ১৬ জনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আজিজুর রহমান (৩০), মোহাম্মদ ইউনুছ (১৭), সুলতান আহমদ (৩৪), সৈয়দুর রহমান (১৮) ও মোহাম্মদ জসীম (৩৮) নামে ছয়জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম দুজনের অবস্থা গুরুতর। আরও সাতজনকে নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চাকঢালা ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি-চাকঢালা সীমান্ত সড়কটি ভাঙাচোরা ও খুবই সংকীর্ণ। এ সংকীর্ণ সড়কে বিশাল ট্রাক যাওয়া খুবই বিপজ্জনক।

জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা এবং আহতদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেন। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংও একই পরিমাণ টাকা দিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।

নিহত মামুনুল হাকিমের বাবা গোলাম হোসেন বলেন, ‘আমার চার ছেলে, চার মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে মামুনুল হাকিম তৃতীয়। সে প্রতিদিনের মতো আজও রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণবাহী গাড়ি নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিকে যায়। কিন্তু এখন সে লাশ হয়ে ফিরেছে। এই ভার আমি কেমনে সইব!’ দুর্ঘটনায় স্বামী ও সন্তান দুজনকেই হারিয়েছেন জাবেদা খাতুন। গতকাল নাইক্ষ্যংছড়ি থানার সামনে তাকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে। তিনি বলছিলেন, ‘আমার সব এখন শেষ! কোথায় যাব, কার কাছে গেলে আমি আমার স্বামী ও ছেলেকে ফেরত পাব!’

সর্বশেষ খবর