শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বেয়নেটের খোঁচায় গেল দুই চোখ

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

বেয়নেটের খোঁচায় গেল দুই চোখ

বালুখালীতে গতকাল সাঁকো পার হচ্ছেন নুরুল ইসলাম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নুরুল ইসলাম। বয়স প্রায় ৭৫। মিয়ানমারের মংডুর কইরজ্যার বিল রোহিঙ্গা পাড়া থেকে আসা এক হতভাগ্য বৃদ্ধের নাম। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম পাশবিকতার শিকার হয়ে তিনি এরই মধ্যে হারিয়েছেন তার দুটি চোখ ও নাক। সেনাবাহিনীর বেয়নেটের খোঁচায় তার পুরো মুখাবয়ব ক্ষতবিক্ষত। নাক-চোখহীন তার চেহারাটা এখন হয়ে উঠেছে বীভৎস। হঠাৎ দেখলেই ভয় পেয়ে শিউরে উঠবে যে কেউই। বৃহস্পতিবার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাওয়া বালুখালীর একটি অস্থায়ী শরণার্থী শিবির থেকে নড়বড়ে একটি সাঁকো পার হচ্ছিলেন এই নুরুল ইসলাম। তখন তার পুরো মুখ একটি কাপড়ে ঢাকা। অন্যের সাহায্য নিয়ে টেকনাফ সড়কে ওঠে আসতেই কৌতূহলবশত তার কাছে গিয়ে কাপড়ে কেন মুখ ঢাকা জানতে চাইলে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। কিছুক্ষণ পর কান্না সংবরণ করে বললেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হওয়ার নির্মম এক পাশবিক কাহিনী।

নুরুল ইসলাম জানান, ১৪-১৫ দিন আগে কইরজ্যার বিল রোহিঙ্গা পাড়াতেই ঘুমাচ্ছিলেন নিজ ঘরে। কোনো ছেলে সন্তান নেই তার। দুই ছেলে মারা যায়। এখন রয়েছে স্ত্রী ও ৬ মেয়ে। রাতের একটা সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও রাখাইন মগরা তার বাড়িতে আগুন দিলে তিনি ঘর থেকে বেরোনোর সময় এক সেনা সদস্য তার চোখে ও মুখে বেয়নেট দিয়ে খোঁচা দেয়। এতে নুরুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কান্না ও কাকুতি-মিনতি করতে থাকেন যেন তার ওপর আর অত্যাচার করা না হয়। কিন্তু পাষণ্ড সেই সেনা সদস্য নুরুল ইসলামের কোনো আকুতি শোনেনি। তাকে মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে থাকে। এক পর্যায়ে গুরুতর আহত নুরুল ইসলামের শীর্ণকায় দেহ নিস্তেজ হয়ে আসে। এতে সেই সেনা সদস্য নুরুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে ভেবে অন্যদিকে চলে যায়। এ সময় তার এক ভাগিনা উদ্ধার করে পরিবারসহ তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। বালুখালীর তীরে প্রথমে আশ্রয় শিবির নির্মাণ করলেও তা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায়। তাই এখন অন্য জায়গায় তাঁবু খাটানোর জন্য এই দুঃসহ ও দুর্বিষহ সময়েও তাকে আশ্রয় শিবির নির্মাণের জন্য একটি ঠিকানা খুঁজতে বের হতে হয়েছে। যন্ত্রণাকাতর নুরুল ইসলাম বলেন, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এখানকার ডাক্তাররা চট্টগ্রামের বড় হাসপাতালে পাঠালেও কোনো অপারেশন করে লাভ হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে ফিরে আসতে হয়েছে উখিয়ায়। দেখা গেছে, নুরুল ইসলামের নাক-মুখের অবশিষ্ট হাড়-মাংসে ও চোখে পচন ধরেছে। ইতিমধ্যে তার দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। নাকের কোনো চিহ্নই আর অবশিষ্ট নেই। এ অবস্থায় চিকিৎসা হলে কতটুক কী হবে জানতে চাইলে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বালুখালী চিকিৎসা ক্যাম্পে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী বলেন, এখন তার যে অবস্থা, এতে এখানকার চিকিৎসায় কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। বিদেশে নিয়ে যাওয়া হলে বা প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে কিছুটা উপকার হতে পারে। তা না হলে ওই লোক বেশি দিন বাঁচবেন না।

সর্বশেষ খবর