শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট

আলী রীয়াজ

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবগুলো সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। তবে এগুলোর বাস্তবায়ন অবশ্যই নির্ভর করবে বৈশ্বিক রাজনীতির ওপর।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তৃতা প্রসঙ্গে গতকাল বিবিসি বাংলার প্রভাতী অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় দেওয়া কয়েকটি প্রস্তাব প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে তার বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তার প্রথম প্রস্তাব হচ্ছে, অবিলম্বে এবং স্থায়ীভাবে মিয়ানমারের সহিংসতা এবং ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, অবিলম্বে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটা অনুসন্ধানী দল যেন সেখানে পাঠানো হয়। তৃতীয়ত তিনি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ‘সুরক্ষা বলয়’ গড়ে তোলার কথা বলেছেন। যাতে সব ধরনের নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা যায় এবং সেক্ষেত্রে তিনি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তার কথা বলেছেন। এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেফ জোন গড়ে তোলার কথা বলেছেন। চতুর্থত তিনি বলেছেন, রাখাইন রাজ্য থেকে যারা জোর করে বিতাড়িত হয়েছেন তাদের সবাইকে যেন নিজ নিজ ঘরবাড়িতে পাঠানো হয় এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হয়। এবং সর্বশেষ প্রস্তাবে তিনি বলেছেন, কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো নিঃশর্তভাবে এবং পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করা। এই পাঁচটি প্রস্তাব তিনি সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে বিশ্বে যেভাবে মেরুকরণ হয়েছে তাতে শেখ হাসিনার এসব প্রস্তাব কতটা সাড়া পাবে? জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, প্রথম বিষয় হচ্ছে, এই প্রস্তাবগুলোর ইতিবাচক দিকগুলো হচ্ছে, প্রস্তাবগুলো সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট এবং একইভাবে এগুলো এচিভেবল এই অর্থে যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এগুলো করা যেতে পারে এবং করার দাবি করেছেন। সেই অর্থে এগুলো সুস্পষ্ট কিন্তু এগুলো অবশ্যই নির্ভর করবে বৈশ্বিক রাজনীতির ওপর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় প্রস্তাব হচ্ছে, মিয়ানমারে একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠানো। সেই চেষ্টা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে। মার্চ মাসে হিউম্যান রাইটস কমিশনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন নিয়োগ করা হয়েছিল কিন্তু মিয়ানমার তাদেরকে যেতে দেয়নি এবং সাম্প্রতিককালে এমনকি অং সান সু চির বক্তব্যের পরেও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। আর সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট নিঃশর্ত এবং দ্রুত বাস্তবায়ন। সেই বিষয়ে ঐকমত্য আছে। ফলে দুটো বিষয়ে ঐকমত্য আছে এগুলো নিয়ে হয়ত বাংলাদেশ চাপ দিতে পারে। বাকি যে প্রশ্নগুলো আছে সেগুলো নির্ভর করছে স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য অন্যদের উদ্যোগ। সেই উদ্যোগের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে এক ধরনের পোলারাইজেশন হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব জনমত গঠন প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এখন পর্যন্ত কূটনীতিক তত্পরতা খুব একটা চোখে পড়ছে না। ইতিমধ্যেই যে সব প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি সে প্রতিক্রিয়াগুলো কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিত; যেমন ব্রিটেনের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব করা হয়েছে কিংবা যারাই সামালোচনা করেছে এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত ব্যবস্থার কথা বলেছেন এগুলো কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া উচিত এবং যে ধরনের জোরদার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থাকা উচিত এখন পর্যন্ত তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর বক্তব্যের পর আমি খানিকটা হতাশ হয়েছি। আমি আশা করছিলাম, যেহেতু কানাডা ইতিমধ্যেই তার অবস্থান ব্যক্ত করেছে, অন্ততপক্ষে প্রাইম মিনিস্টার ট্রুডো কিছুটা হলেও উল্লেখ করবেন বলে আশা ছিল। মনে রাখতে হবে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা একটা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে কিছুই নির্ধারিত হয় না। জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা সূচনা মাত্র। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে সেটা অর্জন করা যাবে। একটা ইতিবাচক দিক হলো, কিছু কিছু দেশ সমর্থন করছে বাংলাদেশের অবস্থানকে; আর দ্বিতীয় যেটা সেটা হচ্ছে সামগ্রিকভাবে পাবলিক অপনিয়ন যেটাকে বলি আমরা, মিডিয়ার কারণে বৈশ্বিকভাবে এটা এখন অনেক বেশি আলোচিত হচ্ছে। ফলে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান হবে এমনটা আশা করার মতো কোনো কারণ আমি এখন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না।

সর্বশেষ খবর