মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
রাজনীতি এখন

কবে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া

অপেক্ষায় বিএনপি, লন্ডনে বসেই নির্বাচনের কাজ

শফিউল আলম দোলন

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ থেকে কবে ফিরছেন তা কেউ জানে না। এখনো ফেরার তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আগামী মাসের যে কোনো দিন দেশে ফিরে আসতে পারেন বলে দলীয় সূত্র আভাস দিয়েছে। চিকিত্সার্থে যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা বলা হলেও লন্ডনে বসেই তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দল ও রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন। দলের স্থায়ী কমিটির তিনটি শূন্য পদ পূরণ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল আনা, দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়সহ রাজনৈতিক কর্মকৌশল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে পরামর্শ   করছেন এবং আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থিতাও চূড়ান্ত করছেন। গত দুই মাস ১০ দিন ধরে লন্ডনে থাকাবস্থায় দলের অনেক নেতাই তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। মা ও ছেলে উভয়েই কোনো নেতাকেই দেখা করার অনুমতি দেননি। তার মধ্যে অনেকে আবার তাদের সঙ্গে দেখা করতে না পারলেও দেশে ফিরে ফলাও করে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন সে ব্যাপারে কেউ এখনো জানেন না। জানেন শুধু চিকিৎসকরা। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলামাত্রই তার ঢাকার টিকিট কনফার্ম করা হবে। ‘লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার দল ও রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো কথাবার্তা হয়েছে কি-না?’ এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, দলের দুই শীর্ষনেতা একসঙ্গে হয়েছেন— সেখানে দল বা রাজনৈতিক বিষয়ে কথা হবে না! এটা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। শুধু দল আর রাজনীতি কেন, সাংগঠনিক সব বিষয়েই আলোচনা হতে পারে। আগামী নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনা না হওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক। বিএনপি প্রধানের দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে একই কথা জানালেন— লন্ডনে অবস্থানরত তার একান্ত সচিব এ বি এম সাত্তার। তিনিও বললেন, তারিখ নির্ধারণ হয়নি। এ মাসেই পায়ের আরেকটি চেকআপ রয়েছে ‘ম্যাডামের’। তাছাড়া চোখের অবস্থা এখন ভালো হলেও দেশে ফেরার আগে আরেকবার চেকআপ করাতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে আশা করছি— চিকিত্সা শেষ করে খুব শিগগিরই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বেগম জিয়া দেশে ফেরার পর দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এমনকি লন্ডনে বসেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কৌশলও নির্ধারণ করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির তিনটি শূন্যপদ পূরণ, প্রতিবেশী ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার, দলের কূটনৈতিক শাখার নেতৃত্বের দায়িত্ব নির্ধারণ, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন এবং এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে আন্দোলনসহ সাংগঠনিক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লন্ডনে বসেই তারা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। দলের সিনিয়র নেতারাও সে দিকেই তাকিয়ে আছেন। জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পরপরই দলের স্থায়ী কমিটির সভা আহ্বান করবেন। এরপর ডাকা হবে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা। পাশাপাশি দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ঝুলে থাকা কমিটিগুলোরও রফা করবেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আগামী ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। তার আগেই বেগম খালেদা জিয়ারও দেশে ফেরার সম্ভাবনা আছে। সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তার একান্ত বৈঠকেরও একটি শিডিউল রয়েছে। এর আগে সুষমা স্বরাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এলে বেগম খালেদা জিয়া সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। এবার খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় হতে পারে সেই বৈঠক। এ ছাড়াও ২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দিল্লি সফরে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ভারতের তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা এই সুষমা স্বরাজের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সুষমা স্বরাজ তাকে নিজের বাসার সামনে অনেকটা পায়ে হেঁটে এসে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বাসার ভিতরে নিয়ে গিয়েছিলেন।

এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে গত ১৫ আগস্ট নিজের ৭২তম জন্মদিন, ১ সেপ্টেম্বর দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহা, ১১ সেপ্টেম্বর কারামুক্তি দিবসসহ ব্যক্তিগত, দলীয় ও সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানেই অংশ নেননি। দেশের ভিতরে দলীয় প্রধানের দ্রুত আরোগ্য ও সুস্থতা কামনা করে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনগুলো দোয়া মাহফিল করেছে প্রায় মাসব্যাপী। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য সব দেশের রাষ্ট্রদূত, ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশে নিযুক্ত সব দেশের কূটনীতিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠিতে তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের বর্বরোচিত গণহত্যা ও নির্যাতনের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এর বিচার দাবিসহ বাসস্থানচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুলাই বেগম খালেদা জিয়া চোখ ও পায়ের চিকিত্সার্থে লন্ডন যান।

সর্বশেষ খবর